সংহতি তত্ত্ব কী? সংহতি তত্ত্ব নির্মাণে কার্ল ডয়েসের অবদান
সংহতি তত্ত্ব কাকে বলে?
ভূমিকা : বিভিন্ন জাতির মধ্যে বিরাজমান ভয়, সন্দেহ, দ্বন্দ্ব, সংঘাত, ঈর্ষা ইত্যাদি যা তাদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করে এসব ভুলে গিয়ে দুই রাষ্ট্রের জনগণ যদি একত্র হয়ে একে অপরের ভালোমন্দ ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে জানতে পারে, তবে তাদের মধ্যকার বিভেদ বা শত্রুতা থাকবে না। এ ধারণাকে বলা হয় সংহতি তত্ত্ব। নিচে এ তত্ত্ব ও এ তত্ত্বের নির্মাণের ক্ষেত্রে কার্ল ডয়েসের অবদান আলোচনা করবো। চলুন শুরু করি।
সংহতি তত্ত্বের সংজ্ঞা
বিভিন্ন পণ্ডিত সংহতি তত্ত্বকে বিভিন্নভাবে সংজ্ঞায়িত করেছেন। নিচে সংজ্ঞাগুলো উল্লেখ করা হলো:
যোহান গালটুং এর মতে, "সংহতি হচ্ছে সেই পদ্ধতি যেখানে দুই বা বহু বিষয় একত্র হয়ে একটি নতুন বিষয় গঠন করে। যখনই বিষয়গুলো একীভূত হবে, তখনই তাদের মধ্যে সংহতি স্থাপিত হবে।"
কার্ল ডয়েসের মতে, “রাজনৈতিক সংহতি হচ্ছে এমন একটি অবস্থা যেখানে একদল লোক একটি ভূখণ্ড সংযুক্ত হবে একটি সম্প্রদায়সুলভ মনোভাব নিয়ে এমন একটি সংগঠনে, যেখানে ঐ সংগঠনের মাধ্যমে দীর্ঘ সময় পর্যন্ত তারা নির্ভরযোগ্যভাবে আশা করতে পারে শান্তিপূর্ণ পরিবর্তনের। "
অর্থাৎ সংহতি তত্ত্বের মূল বিষয় হচ্ছে বিভিন্ন দেশের মধ্যে বিরাজমান শত্রুতা আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা। এতে করে বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হবে।
সংহতি তত্ত্ব কি
সংহতি তত্ত্বের অন্যতম প্রধান স্থপতি হচ্ছে কার্ল ডয়েস। এ তত্ত্বটির উন্নয়নের শুরুতে নিরাপত্তা সম্প্রদায়ের উপর গুরুত্ব দিয়েছেন। তিনি দুই ধরনের নিরাপত্তা সম্প্রদায়ের কথা বলেছেন। যথা:
(i) বহুত্ববাদী নিরাপত্তা সম্প্রদায়।
(ii) মিশ্রিত নিরাপত্তা সম্প্রদায়।
প্রথমটি আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সহযোগিতা বৃদ্ধি করে। দ্বিতীয়টি ততোধিক ভূখণ্ডের সম্মিলনে একক রাষ্ট্র গঠনে ভূমিকা পালন করে। তবে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে সহযোগিতা ও আন্তঃক্রিয়া বৃদ্ধিতে অবদান বেশি রাখে বন্ধুত্ববাদী নিরাপত্তা সম্প্রদায়। এতে যে সকল রাষ্ট্র একত্র হয় তাদের মধ্যে শান্তিপূর্ণ অবস্থা থাকবে বলে ভবিষ্যবাণী করা হয় তবে বিরোধিতা দেখা দিলে শক্তি প্রয়োগের ভীতি প্রদর্শন না করে মীমাংসার ব্যবস্থা নেয়া হয়।
উপযুক্ত আলোচনা থেকে বলা যায়, সংহতি তত্ত্বের মূল আলোচ্য বিষয় হচ্ছে একাধিক রাষ্ট্রের মধ্যে বিরাজমান দ্বন্দ্বকে নিরসন করে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ সৃষ্টি করা। যার মাধ্যমে একাধিক রাষ্ট্র শান্তি বজায় রেখে তাদের উন্নয়নের কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারে।
সংহতি তত্ত্বে কার্ল ডয়েসের অবদান
কার্ল ডয়েসতে সংহতি তত্ত্বের অন্যতম স্থপতি বলা হয়। এ তত্ত্ব নির্মাণে তিনি গঠনমূলক এককগুলো ও পুরো সংহতি এককটির মধ্যে যোগাযোগ ও লেনদেনের ব্যাপারে জোর দিয়েছেন। তার মতে, উচু পর্যায়ে লেনদেন থাকলে বড় ধরনের দ্বন্দ্ব বা উদ্বেগ সৃষ্টির সম্ভাবনা কম। এ দুটি বিষয়ের মধ্যকার সম্পর্ক বোঝার জন্য আমরা রজার কোব ও চার্লস এলডার এর এ সম্পর্কিত বর্ণনার উল্লেখ করতে পারি।
প্রথমত, কয়েক ধরনের যোগাযোগ থাকবে।
দ্বিতীয়ত, উভয় পক্ষের যোগাযোগ রক্ষার জন্য কোনো না কোনো স্বার্থ থাকবে।
তৃতীয়ত, যে জাতিসমূহ একত্রে থেকে কাজ করবে তাদের মধ্যে সুসংহতি থাকবে।
চতুর্থত, কোনো বিশেষ ব্যাপারে জাতিসমূহের মধ্যে কার্যকলাপ বাজায় থাকলে উদ্বেগ ও দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হবে না।
কার্ল ভয়েসের মূল প্রতিপাদ্য বিষয় হচ্ছে, যখন বিভিন্ন এককের মধ্যে যোগাযোগ বৃদ্ধি পায়, তখন এই কার্যাবলিতে নিহিত জটিলতাও বৃদ্ধি পায় এবং এ জটিলতাগুলো দূর করার জন্য বিভিন্ন একক বিভিন্ন কার্যকলাপে লিপ্ত হয় এবং এরই একটি সুফল হলো অধিকতর সহযোগিতা।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনা থেকে বলা যায়, আলোচনার মাধ্যমে বিভিন্ন দেশের মধ্যে বিরাজমান দ্বন্দ্বের অবসান ঘটিয়ে সহযোগী হিসেবে কাজ করার প্রক্রিয়াকেই সংহতি বলে। যা সুন্দরভাবে ব্যাখ্যা করেছেন কার্ল ডয়েস। তার মতানুযায়ী লেনদেন, সহযোগিতাই দুটি দেশের মধ্যে শাস্তি বিরাজ করতে সহায়তা করে।