৬ দফা কর্মসূচিকে কেন বাঙালির ম্যাগনাকার্টা বলা হয়

৬ দফাকে বাঙালির মুক্তির সনদ বলা হয় কেন?

বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাসে ছয়দফা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। পূর্ববাংলার জনগোষ্ঠীকে পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ ঔপনিবেশিক শাসন, শোষণ, নিপীড়ন থেকে রক্ষা করতে বাঙালির জননেতা শেখ মুজিবুর রহমান ঐতিহাসিক ছয়দফা উত্থাপন করেন। পশ্চিম পাকিস্তানের লাহোরে ১৯৬৬ সালের ৫-৬ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত বিরোধী দলের এক কনভেনশনে এ প্রস্তাব পেশ করেন। ছয়দফা প্রস্তাবকে ‘বাঙালির মুক্তির সনদ' বা ম্যাগনাকার্টা হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়।


ছয়দফা কর্মসূচিকে বাঙালির ম্যাগনাকার্টা বলার কারণ 

শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক উত্থাপিত ছয়দফা ছিল পাকিস্তানিদের শোষণ ও বঞ্চণার বিরুদ্ধে বাঙালির মুক্তির সনদ। ছয় দফা কর্মসূচিকে কেন বাঙালির ম্যাগনাকার্টা বলা হয় নিম্নে আলোচনা করা হলো:

১. রাজনৈতিক অধিকার লাভ : ছয়দফার অন্যতম দাবি ছিল প্রাদেশিক রাজনৈতিক অধিকার লাভ। প্রদেশের রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠিত হলে এ অঞ্চলে পাকিস্তানি শাসকেরা সরাসরি শোষণ, দমন নিপীড়ন অধিকার হারাতো। ফলে রাজনৈতিক অধিকার অর্জনের জন্য বাংলার মানুষ আন্দোলনে ঝাপিয়ে পড়ে যার ফল ছিল মহান স্বাধীনতা।

২. জাতীয়তাবাদের বিকাশ : ছয়দফা বাঙালি জাতীয়তাবাদী আন্দোলনে সংগ্রামী শক্তি যোগায়। এ আন্দোলনে বাঙালি জাতীয়তাবাদের পূর্ণ বিকাশ ঘটে। ছয়দফা কর্মসূচি বাঙালিদের কাছে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর শোষণ ও অবিচারের বিরুদ্ধে 'মুক্তির সনদ' হিসেবে দেখা দেয়। ইংল্যান্ডের গণতন্ত্র বিকাশে ম্যাগনাকার্টা যে ভূমিকা পালন করেছিল, ছয়দফা দাবিও বাঙালিদের স্বাধিকার অর্জনের ইতিহাসে সে ভূমিকা পালন করেছিল।

৩. অর্থনৈতিক অধিকার লাভ : ম্যাগনাকার্টার মাধ্যমে রাজা জনের কাছ থেকে ইংল্যান্ডবাসীরা অর্থনৈতিক শোষণের হাত থেকে মুক্ত হয়েছিল। ১৯৬৬ সালে উত্থাপিত ছয়দফায় বাঙালিদের অর্থনৈতিক মুক্তির দাবি তুলে ধরা হয়। বাঙালিরা এই অর্থনৈতিক স্বাধিকার প্রতিষ্ঠার স্বাধীনতা আন্দোলনে অবতীর্ণ হয়ে বাংলাকে স্বাধীন করতে সক্ষম হয়।

৪. স্বেচ্ছাচারিতা থেকে মুক্তি : ছয়দফার মাধ্যমে নিয়মতান্ত্রিক পদ্ধতিতে বাংলায় পাকিস্তানিদের স্বৈরতন্ত্রের বিরোধিতা করা হয়। ইংল্যান্ডের ম্যাগনাকার্টায় রাজার স্বেচ্ছাচারিতা বন্ধের বিধান ছিল। মুক্তি পাগল বাঙালিরা পাকিস্তানিদের স্বেচ্ছাচারিতার বিরুদ্ধে আন্দোলনে নেমে বাংলাকে স্বাধীন করে। এখানেও দেখা যায় ছয়দফা ম্যাগনাকার্টার মতোই কাজ করেছিল ।

৫. শোষণের বিরুদ্ধে বলিষ্ঠ প্রতিবাদ : ছয়দফাভিত্তিক দাবিগুলো ছিল পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকার কর্তৃক দীর্ঘকাল ধরে পূর্ব পাকিস্তানকে শোষণের বিরুদ্ধে প্রথম বলিষ্ঠ প্রতিবাদ। ৬ দফার প্রণেতা শেখ মুজিবুর রহমান নিজেই ছয়দফাকে 'বাংলার কৃষক, মজুর, শ্রমিক, মধ্যবিত্ত তথা আপামর জনসাধারণের মুক্তির সনদ এবং বাংলার অধিকার প্রতিষ্ঠার নিশ্চিত পদক্ষেপ' বলে আখ্যা দিয়েছেন।

উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনা থেকে বলা যায় যে, ইংল্যান্ডের ইতিহাসে ব্রিটিশদের অর্থনৈতিক, রাজনৈতিকসহ সার্বিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় ‘ম্যাগনাকার্টা' একটি মাইলফলক হয়ে আছে। আবার বাংলার মানুষের পাকিস্তানি শাসকদের শোষণমুক্তি বা চূড়ান্ত মহান স্বাধীনতা অর্জনে ছয়দফাও মাইলফলক হয়ে আছে। তাই ঐতিহাসিক ছয়দফাকে বাঙালি জাতির ম্যাগনাকার্টা বা মুক্তির সনদ বলা হয়ে থাকে।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url