সাম্প্রতিক রাষ্ট্রচিন্তার প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলো আলোচনা কর।

• সমকালীন রাষ্ট্রচিন্তার প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলো আলোচনা কর।
• আধুনিক রাষ্ট্রচিন্তার বৈশিষ্ট্যগুলো বর্ণনা করো 

ইতিহাস তার ঘটনাবলির প্রবাহকে বজায় রাখে। সমাজ ও রাষ্ট্র অনেক সময় এ ঘটনাবলির সাথে সামঞ্জস্য রক্ষা করে । এই ধারা সেই প্রাচীন যুগ থেকেই মানুষ তার রাষ্ট্রচিন্তার পরিধি ও প্রকৃতির পরিবর্তন সাধন করে আসছে। প্রাচীন যুগ বা গ্রিক যুগে রাষ্ট্রচিন্তা নগররাষ্ট্রকে কেন্দ্র করে মধ্যযুগ ছিল ধর্মকে কেন্দ্র করে, আর আধুনিক যুগকে রেনেসাঁ ও সংস্কার আন্দোলনের মধ্য দিয়ে জাতীয় রাষ্ট্র বিকাশের উপর গুরুত্ব দেওয়া হয়। সাধারণ আধুনিক রাষ্ট্রচিন্তা ধর্মনিরপেক্ষতা, নিয়মতান্ত্রিকতা, ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবাদ, জাতীয়তাবাদ, উপযোগবাদ, বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্র, সাম্যবাদ, সার্বভৌমত্ব, প্রতিনিধিত্বমূলক গণতান্ত্রিক কাঠামো প্রভৃতি বিষয়ের মধ্য দিয়ে বিকাশ ও উৎকর্ষ সাধিত হয়। এক্ষেত্রে আধুনিক রাষ্ট্রচিন্তা বিকাশে নিকোলো ম্যাকিয়াভেলির নাম বিশেষভাবে গ্রহণযোগ্য।


সাম্প্রতিক রাষ্ট্রচিন্তার বৈশিষ্ট্য : নিম্নে সাম্প্রতিক কালের রাষ্ট্রচিন্তার বৈশিষ্ট্যগুলো আলোচনা করা হলো :

১. ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবাদ : আধুনিক যুগের আবির্ভাবের ফলে ব্যক্তির যুক্তিবাদিতা, রাজনৈতিক সচেতনতা বৃদ্ধি পায় এবং সে অনেকটা সর্বমর্যাদায় আসীন হওয়ার সুযোগ লাভ করে। জগতের সুখস্বাচ্ছন্দ্যের চেয়ে পার্থিব জগতের সুখদুঃখ আনন্দ সম্পর্কে সে আগ্রহী হয়ে উঠে। যুক্তি অভিজ্ঞতা ও বিচারবুদ্ধি দিয়ে সমস্ত ঘটনা ও সিদ্ধান্তকে সে বিশ্লেষণ করতে আরম্ভ করায় গির্জার প্রভাব কমে আসে। সমাজ ও রাষ্ট্রের নির্মাতা ব্যক্তি, ভগবান নয় এবং মনুষ্যসৃষ্ট আইন দ্বারা সমাজ ও রাষ্ট্র শাসিত হয়, প্রাকৃত বা ঐশ্বরিক আইন দ্বারা নয়। অর্থাৎ ধর্ম, রাষ্ট্র ও সমাজের উপর মানুষের অবস্থানকে সুনিশ্চিত করা হয়।

২. ব্যক্তি ও রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব : মধ্যযুগে রাষ্ট্রের অস্তিত্ব কেবল কাগজ কলমে ছিল। জাতীয় সার্বভৌম রাষ্ট্র বলতে যা বুঝায় গির্জার দাপটে তা প্রকাশ করার সুযোগ পায়নি । কালক্রমে জাতীয় রাষ্ট্রের সার্বভৌমতার পাশাপাশি গড়ে উঠে ব্যক্তি সার্বভৌমত্ব ।

৩. প্রতিনিধিত্বশীল গণতন্ত্র : আধুনিক রাষ্ট্রচিন্তার একটি উল্লেখযোগ্য দিক প্রতিনিধিত্বশীল গণতন্ত্র সম্পর্কে ধারণার বিকাশ। আধুনিক চিন্তাবিদদের মধ্যে জন লক গণতন্ত্র সম্পর্কে সৃজনশীল ব্যাখ্যা দান করেন। পরবর্তীতে J. S. Mill প্রতিনিধিত্বশীল গণতন্ত্রের কথা বলেন। সাম্প্রতিককালে লাস্কি, টকভিল প্রমুখ আধুনিক রাষ্ট্রচিন্তাবিদগণ এ সম্পর্কে তাদের সুচিন্তি ত মতবাদ ব্যক্ত করেন।

৪. পুঁজিবাদ : গণতন্ত্রের পাশাপাশি পুঁজিবাদের বিকাশ আধুনিক রাষ্ট্রচিন্তার উল্লেখযোগ্য দিক। পুঁজিবাদের আবির্ভাবের ফলে কৃষিপণ্যের সাথে শিল্পের উৎপাদন ও বাজার প্রসার লাভ করে। ফলে সার্বিকভাবে আর্থসামাজিক ও রাজনৈতিক ব্যবস্থায় ব্যাপক পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। অন্যদিকে, গণতন্ত্রের সাথে পুঁজিবাদের সংযুক্তির ফলে সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রচিন্তার বিকাশ ব্যাহত হয়।

৫. যুক্তির প্রাধান্য : মধ্যযুগে যেখানে ধর্মীয় বিশ্বাস ও নৈতিকতাকে কেন্দ্র করে রাষ্ট্রচিন্তার বিশ্বাসের পরিবর্তে যুক্তির উপর জোর দেয়। এক্ষেত্রে কেবল রাষ্ট্রচিন্তায় নয়, সমাজের অন্যান্য ক্ষেত্রে যুক্তির প্রাধান্য লক্ষণীয়।

৬. উদারতাবাদ : উদারতাবাদের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, উদারতাবাদী চেতনার প্রথম প্রকাশ ঘটে সপ্তদশ শতকে ইংল্যান্ড, ফ্রান্স ও জার্মানিতে। ১৬৮০ সালে জেমন্সের স্বৈরাচারী নীতির বিরুদ্ধে ইংল্যান্ডের জনসাধারণ দ্বারা যে গৌরবময় বিপ্লব সাধিত হয় তাকেই উদারতাবাদের প্রথম স্তর বলা হয়। পরবর্তীতে ১৭৮৯ সালে ফরাসি বিপ্লবকেও উদারতাবাদের বিপ্লব বলে আখ্যায়িত করতে পারে। ১৯১০ সালে জার্মানির =বার্লিন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উদারতাবাদী আন্দোলনের ঢেউ সমগ্র বিশ্বে ছড়িয়ে পড়তে থাকে। উদারতাবাদ ধর্ম ও রাজনীতি চিন্তার ক্ষেত্রে অপরের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শনের মধ্য থেকেই উদারতাবাদের সৃষ্টি।

৭. উগ্র জাতীয়তাবাদ : শিল্পবিপ্লবকে কেন্দ্র করে বুর্জোয়া ও পুঁজিবাদী সমাজের বিকাশ লাভ করে। এক্ষেত্রে বিশ্বব্যাপী শিল্পজাত পণ্যের বাজার দখল নিয়ে শিল্প নির্ভর দেশগুলোর মধ্যে সাম্রাজ্যবাদী শক্তির প্রসার লাভ করে। ফলে জাতীয়তাবাদ উগ্র রূপ ধারণ করে। এর উপর ভিত্তি করে ফ্যাসিবাদ ও নাৎসিবাদের প্রসার লাভ করে। যার প্রত্যক্ষ ফলাফল লক্ষ্য করা যায় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালীন। এক্ষেত্রে উগ্র জাতীয়বাদ আধুনিক রাষ্ট্রচিন্তার প্রভাব লক্ষ্য করা যায়।

৮. ধর্ম থেকে রাজনীতি পৃথককরণ : মধ্যযুগের রাজনীতিতে ধর্মের প্রত্যক্ষ প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। কিন্তু আধুনিক রাষ্ট্রচিন্তার প্রত্যক্ষ ফল হিসেবে রাজনীতিকে ধর্মীয় প্রভাব মুক্ত করা হয়। এ ক্ষেত্রে আধুনিক রাষ্ট্রচিন্তার জনক ম্যাকিয়াভেলি এর অবদানকে স্বীকার করা হয়। তার পূর্ববর্তী বেশ কিছু রাষ্ট্রচিন্তাবিদ ধর্ম থেকে রাজনীতি পৃথক করার কথা বললেও পুরোপুরি সম্পন্ন করতে পারেনি। তারা নৈতিকতার বিষয়টির উপর জোর দিয়েছেন।

৯. সাম্য সম্পর্কে মানুষের আগ্রহ: মধ্যযুগে আর্থসামাজিক অবস্থা কেবল ধর্মকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছিল। গির্জা মানুষের মনে এ ধারণা তৈরি করে দিয়েছিল যে ইহজগৎ খুবই তুচ্ছ। পাপ ও পুণ্য হল আসল এবং গির্জাকে সন্তুষ্ট রাখতে পারলে পরজগতে গিয়ে মানুষের পুণ্যের সুখ দেখতে পাবে। এ বোধ পরজগতের মধ্যে গড়ে উঠায় আর্থসামাজিক বৈষম্যকে তারা আদৌ গুরুত্ব নি। কিন্তু পরবর্তী সাম্য অর্জনে সমাজে এক শ্রেণির মানুষের আগ্রহ দাঁড়ায় ।

১০. সামন্তবাদের ভাঙন : আধুনিক যুগ শুরু হয়েছে সামন্তবাদের ভাঙনের মধ্য দিয়ে। মধ্যযুগে গির্জার অপ্রতিহত প্রভাব ও স্বৈরাচারী নীতির মুখে পড়ে রাজার ক্ষমতা উল্লেখযোগ্যভাবে সংকুচিত হয়ে পড়েছিল এবং সে অবস্থার সুযোগ নিয়ে সামন্ত প্রভুরা একেকটি ক্ষুদে সার্বভৌম রাজা স্থাপন করতে চেয়েছিল। কিন্তু ষোড়শ শতাব্দীর শুরু থেকে আমরা আর্থসামাজিক অবস্থার ক্ষেত্রে নতুন পরিস্থিতি দেখতে পাই। গেটেল বলেছেন যে, জাতীয় রাষ্ট্রের পুনর্গঠনের ফলে অভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রে নানা পরিবর্তন দেখা দেয়। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো সামন্ত প্রথার ভাঙন।

১১. রেনেসাঁর আবির্ভাব: রেনেসাঁ হলো পুনর্জাগরণ। সর্বস্তরে ধর্মের পরিবর্তে বিচার বিশ্লেষণ ও বুদ্ধিবৃত্তির প্রভাব বৃদ্ধির ফলে ইউরোপে নবজাগরণের সৃষ্টি করে যা রেনেসাঁ নামে খ্যাত। রেনেসাঁ সম্পর্কে অধ্যাপক পেয়ার বলেছেন, “রেনেসাঁ হচ্ছে নতুন আদর্শের প্রচারণা যা পুরোপুরিভাবে মধ্যযুগীয় ব্যবস্থা অবসান ঘটিয়ে সপ্তদশ নতুন পৃথিবীর পত্তন ঘটায়।”

১২. রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিবর্তন : আধুনিক যুগ সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিবর্তন বিশেষভাবে লক্ষণীয়। আধুনিক যুগে আমরা লক্ষ্য করি সামন্ততন্ত্রের ভাঙন ও পুঁজিবাদের উত্থান। সামন্ত যুগে যে শ্রেণি বৈরিতা ছিল তার বিশেষ পরিবর্তন হয়নি, তার নতুন আকার ধারণ করে। সামন্ত প্রভু ও ভূমিদানের মধ্যে শ্রেণি বৈরিতা গড়ে উঠেছিল। কিন্তু আধুনিক যুগের বুর্জোয়া শ্রেণির আবির্ভাব হওয়ার পুঁজিপতি ও শ্রমিক শ্রেণির মধ্যে দ্বন্দ্ব উপস্থিত হয়। সমাজের সম্পদ ও ঐশ্বর্যের মালিকানা বুর্জোয়া শ্রেণির হাতে কেন্দ্রীভূত হয়। অর্থনৈতিক পরিবর্তনের সাথে সামাজিক পরিবর্তন আসে।

১৩. রাজনৈতিক চিন্তা রাষ্ট্রে কেন্দ্রীভূত: মধ্যযুগে রাষ্ট্রনীতি ধর্ম ও দর্শনকেন্দ্রিক হওয়ায় অনেক স্থলে স্বাতন্ত্র্য হারাতে বসেছিল। কিন্তু আধুনিক যুগে রাষ্ট্র নামক প্রতিষ্ঠানটির গুরুত্ব বৃদ্ধি পায় এবং বলা হয় রাষ্ট্রের সাথে নানা ব্যাপারে নিবিড়ভাবে সম্পর্ক যুক্ত। সমাজ এবং ব্যক্তির সকল প্রকার চিন্তা, ধ্যানধারণা রাষ্ট্রকে কেন্দ্র করে।

১৪. গৌরবময় বিপ্লব: ১৬৮৮ সালে ইংল্যান্ডে যে গৌরবময় বিপ্লব সংঘটিত হয় তা সমাজজীবনে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন হয়। ফলে ইংল্যান্ডে রাজশক্তির ক্ষমতা হ্রাস পায় এবং পার্লামেন্টের ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। জনগণ ও রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্বের প্রসার লাভ করে। এ গৌরবময় বিপ্লব প্রথম ইউরোপের রাষ্ট্র কাঠামো পরিবর্তনের ক্ষেত্রে নতুন অধ্যায়ের সূচনা করে ।

১৫. লোকায়তবাদ : আধুনিক রাষ্ট্রচিন্তার লোকায়তবাদ বিশেষ ভূমিকা পালন করে। মধ্যযুগীয় চার্চ এর প্রভাব মুক্ত হয়ে পরলৌকিক জগতের পরিবর্তে ইহলৌকিক - জগতের উপর অধিক গুরুত্ব পায়। এর মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রচিন্তা যেখানে ঈশ্বরকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয়েছে, কিন্তু আধুনিক যুগে রাষ্ট্রচিন্তায় জনগণের সার্বভৌমত্বকে প্রাধান্য দেওয়া হয়। এক্ষেত্রে বলা হয়, জনগণের ইচ্ছাই ঈশ্বরের ইচ্ছা।

১৬. জাতীয় রাষ্ট্রের ধারণা: আধুনিক রাষ্ট্রচিন্তার অন্যতম দিক হলো জাতীয় রাষ্ট্র সম্পর্কে ধারণা। রেনেসাঁর সূচনালগ্নে জাতীয় রাষ্ট্রের ধারণার বিকাশ ঘটে। পরবর্তীকালে রাষ্ট্রচিন্তার মূলভিত্তি হিসেবে জাতীয় রাষ্ট্রের ধারণাকে কেন্দ্র করে এক্ষেত্রে নাগরিক অধিকার গণসার্বভৌমত্ব, পার্লামেন্টারি সরকার ব্যবস্থার ক্ষেত্রে ব্যাপক পরিবর্তন দেখা যায়।

১৭. ফরাসি বিপ্লব: ১৭৮৯ সালের ফরাসি বিপ্লব আধুনিক রাষ্ট্রচিন্তার ক্ষেত্রে নতুন অধ্যায়ের সূচনা হয়। এ বিপ্লবের মূলে সাম্য, মৈত্রী ও স্বাধীনতা সারা বিশ্বে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে এবং মানুষের চিন্তার ক্ষেত্রে ব্যাপক পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। এ বিপ্লবের প্রভাব কেবল রাজনৈতিক ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ ছিল না, সামাজিক, অর্থনৈতিক ক্ষেত্রেও ব্যাপক পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। ফরাসি বিপ্লবকে জাতীয়তাবাদী রাষ্ট্রীয় চিন্তার উৎস হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

১৮. আশাবাদ : আশাবাদকে সর্বাক্তবাদের বৈশিষ্ট্য হিসেবে বিবেচনা করা হয়। আশার ফলে মানুষ সবকিছুকে নিজের ভাবতে শিখে এবং নিজের জন্য করার চেষ্টা করে, এটি মূলত কার্য উদ্দীপক হিসেবে কাজ করে।

১৯. ম্যাকিয়াভেলির দর্শন : রাষ্ট্রচিন্তার ইতিহাসে আধুনিক যুগ ষোড়শ শতকের রেনেসাঁ থেকে শুরু হয়। ম্যাকিয়াভেলির সময় ইউরোপের জনজাগরণের ঢেউ উঠে তার প্রত্যক্ষ প্রভাব পড়ে ইউরোপীয় রাষ্ট্র তত্ত্ব ও কাঠামোর মধ্যে, তার দর্শনের উপর ভিত্তি করে ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র ও ধর্মের প্রভাব মুক্ত যে রাষ্ট্রব্যবস্থা সম্পর্কে অভিমত ব্যক্ত করে, তার সুস্পষ্ট প্রভাব পড়ে তৎকালীন রাষ্ট্র দর্শনে। তাই তাকে আধুনিক রাষ্ট্রচিন্তার জনক বলে বিবেচনা করা হয়।

২০. সমাজতন্ত্র: আধুনিক রাষ্ট্রচিন্তার অন্যতম বৈশিষ্ট্য হিসেবে পুঁজিবাদের পাশাপাশি সমাজতান্ত্রিক চিন্তার প্রসার লক্ষ্য করা।
প্রথমত, এটি ইউরোপে বিকাশ লাভ করলেও পরবর্তী সময় এশিয়া মহাদেশেও লক্ষ্য করার মত বিষয়। সমাজতন্ত্রের আবির্ভাবের ফলে সমাজ কাঠামোর মধ্যে আমূল আসে। উৎপাদন পদ্ধতি ও উৎপাদন সম্পর্কের ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন সূচিত হয়। সর্বোপরি সমাজতন্ত্র সাম্যর ভিত্তিতে মানুষের আর্থসামাজিক ও রাজনৈতিক অবস্থায় আমূল পরিবর্তন সাধন করে।

২১. ভৌগোলিক আবিষ্কার: আধুনিক রাষ্ট্রচিন্তার বিকাশে গ্যালিলিও, ভেসালিয়াম, হার্বি, ভাস্কো-দা-গামা, কলম্বাস প্রমুখ চিন্তাবিদের আবিষ্কার যোগাযোগ ব্যবস্থা ও জ্ঞানবিজ্ঞান চেতনা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে যথেষ্ট ভূমিকা রাখে যা পরবর্তী রাষ্ট্রচিন্তায় পরিবর্তন সাধনে অগ্রগামী হিসেবে কাজ করে।

২২. সর্বাত্মকবাদ : সর্বাত্মকবাদকে আধুনিক রাষ্ট্রচিন্তার একটি উজ্জ্বল বৈশিষ্ট্য হিসেবে বিবেচনা করা হয়। সর্বাত্মকবাদী প্রচেষ্টায় রাষ্ট্রবিরোধী কোনো কিছুকে সহ্য করা হয় না। এ মতবাদে রাষ্ট্র শক্তি সমাজে অনন্য প্রতিষ্ঠার উপরে স্থান দেওয়া হয়। এক্ষেত্রে আন্তর্জাতিকতাবাদকে প্রতিহত করা হয়।

উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায়, রেনেসাঁ, শিল্পবিপ্লব, ফরাসি বিপ্লব এবং যুক্তিবাদকে কেন্দ্র করে আধুনিক রাষ্ট্রচিন্তার সূচনা হলেও পরবর্তীকালে প্রতিনিধিত্বমূলক গণতান্ত্রিক কাঠামোয় তার অবস্থানকে শক্ত করেছে। এক্ষেত্রে রাষ্ট্রচিন্তার প্রসারে দুটি বিশ্ব যুদ্ধ এবং পরবর্তীকালে স্নায়ুযুদ্ধের প্রভাব চলমান বিশ্ব রাজনীতিকে এক নতুন ধারায় আবদ্ধ করেছে।


Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url