২১ দফা দাবি গুলো কি কি? অথবা যুক্তফ্রন্টের ২১ দফা কি কি?

ঐতিহাসিক ২১ দফা ছিল যুক্তফ্রন্টের নির্বাচনি ইস্তেহার। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারিকে চিরস্মরণীয় করে রাখার জন্য ২১ দফা নির্বাচনি ইস্তেহার ঘোষণা করা হয়। আওয়ামী মুসলিম লীগ নেতা ২১ দফার মুসাবিদা ঘোষণা করেন। বাঙালির সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক অধিকার আদায়ের দাবি হচ্ছে ২১ দফা।


১৯৫৪ সালের নির্বাচনে যুক্তফ্রন্টের ২১ দফা কর্মসূচি

এ. কে. ফজলুল হক ‘মুসলিম লীগ' পরিত্যাগ করে 'কৃষক শ্রমিক 'পার্টি' নামে একটি দলে জড়িয়ে পড়েন। ইতঃপূর্বে ১৯৩৭ সালের নির্বাচনে এ. কে. ফজলুল হকের অবদান ছিল সবচেয়ে বেশি। ১৯৪৬ সালের নির্বাচনে সোহরাওয়ার্দী তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। পরবর্তী তাদের প্রচেষ্টাতে আওয়ামী মুসলিম লীগের জন্ম হয়। এভাবে বাঙালির আন্দোলনের ক্ষেত্রে অগ্রসর হবার পথ ক্রমান্বয়ে প্রসারিত হয়। অন্যদিকে ভাষা আন্দোলন বাঙালিদেরকে বিশেষভাবে অনুপ্রেরণা যোগায়। তাই ১৯৫৪ সালে নির্বাচনের কথা ঘোষিত হলে বাংলার কয়েকটি দল একত্রিত হয়ে যুক্তফ্রন্ট ঘোষণা করে। এ জোটের প্রতীক ছিল নৌকা। নির্বাচনের প্রাক্কালে যুক্তফ্রন্ট ২১ দফা ঘোষণা করে। এ ২১ দফা কর্মসূচি ছিল নিম্নরূপ :

যুক্তফ্রন্টের ২১ দফা কি কি 

১. বাংলাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করা হবে।

২. বিনা ক্ষতিপূরণে জমিদারি ও সমস্ত খাজনা আদায়কারী স্বত্ব উচ্ছেদ ও রহিত করে ভূমিহীন কৃষকদের মধ্যে জমি বিতরণ করা হবে এবং উচ্চহারে খাজনা হ্রাস করা হবে। সার্টিফিকেট প্রথা রহিত করতে হবে।

৩. পাট ব্যবসার জাতীয়করণ। পাটের ন্যায্য মূল্য দেয়ার ব্যবস্থা করা হবে। মুসলিম লীগ মন্ত্রিসভার আমলে পাট কেলেঙ্কারি তদন্ত করে সংশ্লিষ্ট মহলের শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে ও তাদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হবে।

8. সমবায় কৃষি ব্যবস্থা প্রবর্তন সকল প্রকার কুটির ও হস্তশিল্পের উন্নতি সাধন ।

৫. পূর্ববঙ্গকে লবণ শিল্পে স্বয়ংসম্পূর্ণ করার সমুদ্র উপকূলে কুটির ও লবণ শিল্পে ব্যবস্থা করতে হবে। মুসলিম লীগের আমলে লবণ কেলেঙ্কারি তদন্ত করে সংশ্লিষ্টদের শাস্তি দেয়া হবে ।

৬. অবিলম্বে বাস্তুহারাদের পুনর্বাসন করা হবে। সেচ ব্যবস্থার উন্নতি সাধন, বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও দুর্ভিক্ষ রোধ করা।

৮. পূর্ব বাংলাকে শিল্পায়িত করা ও শ্রমিকদের অধিকার রক্ষা করা।

৯. অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষার ব্যবস্থা করা ও শিক্ষকদের বেতন বৃদ্ধি করা।

১০. সরকারি ও বেসরকারি বিদ্যালয়ের ব্যবধান দূর করা হবে ও বাংলা ভাষাকে শিক্ষার মাধ্যমে হিসেবে গ্রহণ করা।

১১. বিশ্ববিদ্যালয় সংক্রান্ত সকল কলাকানুন বাতিল করে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে স্বায়ত্বশাসন প্রবর্তন করতে হবে।

১২. প্রশাসনিক ব্যয় সংকোচন ও কর্মচারীদের বেতনের সামঞ্জস্য বিধান করতে হবে।

১৩. ঘুষ দুর্নীতি বন্ধ করা, সম্পত্তির হিসাব গ্রহণ করা ও ১৯৪০ সাল থেকে অর্জিত সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হবে।

১৪. সকল নিরাপত্তা বন্দীকে মুক্তিদান, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা ও বাকস্বাধীনতা নিশ্চয়তা প্রদান করা হবে।

১৫. শাসন বিভাগ হতে বিচার বিভাগ পৃথক করা হবে।

১৬. বর্ধমান হাউসকে আপাতত ছাত্রাবাস ও পরে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের গবেষণাগার করা হবে।

১৭. বাংলা ভাষার জন্য শহিদদের স্মরণে শহিদমিনার নির্মাণ করা হবে।

১৮. একুশে ফেব্রুয়ারিকে শহিদ দিবস ও সরকারি ছুটির দিন ঘোষণা করা হবে।

১৯. লাহোরের প্রস্তাব অনুযায়ী পূর্ব বাংলাকে আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসন প্রদান, পূর্ব বাংলাতে নৌবাহিনীর সদর দপ্তর স্থাপন ও আনসার বাহিনীকে মিলিশিয়া হিসেবে গড়ে তুলতে হবে ।

২০. যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রিসভার দ্বারা আইনসভার আয়ু বৃদ্ধি করতে হবে। মন্ত্রিসভা নির্বাচনের ৬ মাস পূর্বে পদত্যাগ করবে ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে।

২১. আইনসভার শূন্যপদ ৩ মাসের জন্য পূরণ করা হবে ও তিনটি নির্বাচনে যুক্তফ্রন্ট প্রার্থীরা পরাজিত হলে স্বেচ্ছায় দলত্যাগ করবে।

উপসংহার : পরিশেষে আমরা বলতে পারি যুক্তফ্রন্টের নির্বাচনি ইস্তেহারে বাংলার মানুষের প্রাণের দাবিদাওয়ার কথা প্রকাশিত হয়েছিল। এ ২১ দফার উপর বিশ্বাস করে জনগণ তাদেরকে বিপুল ভোটে জয়যুক্ত করে। কিন্তু পরবর্তীতে পাকিস্তানি ষড়যন্ত্রে তারা তাদের দাবিদাওয়া আদায় করতে সক্ষম হয়নি।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url