আগরতলা মামলা কি? আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা বলতে কী বুঝ ?

আগরতলা মামলা ছিল একনায়ক আইয়ুব খানের শাসনামলের এক ঘৃণ্য ষড়যন্ত্র। বাঙালির অধিকার আদায়ের লড়াই নস্যাৎ করতে এবং আওয়ামী লীগকে রাজনীতির ময়দান হতে নির্মূল হতে পাকিস্তানি শাসক চক্র এ ষড়যন্ত্রমূলক মামলা দায়ের করে। ১৯৬৬ সালের ছয়দফা আন্দোলন পূর্ব পাকিস্তানে আইয়ুব বিরোধী আন্দোলনে পরিণত হয়। এরই প্রেক্ষাপটে দায়ের করা হয় আগরতলা মামলা।


আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা 

আইয়ুব খান সরকার মুজিবসহ ৩৫ জন বাঙালি সামরিক বেসামরিক ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতামূলক একটি মামলা দায়ের করে। ইতিহাসে যা আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা নামে পরিচিত। এ মামলার আনুষ্ঠানিক নাম ছিল রাষ্ট্র বনাম শেখ মুজিবুর রহমান ও অন্যান্য। 

পূর্ব পাকিস্তানকে রাজনৈতিকভাবে নেতা শূন্য করে ক্ষমতাকে পাকাপোক্ত করার জন্য পরিকল্পিতভাবে এ কূটকৌশল গ্রহণ করেন আইয়ুব খান। এ মামলার অভিযোগে বলা হয় মামলার এক নম্বর আসামি শেখ মুজিবুর রহমান ভারতের সাহায্যে সশস্ত্র পন্থায় পূর্ব পাকিস্তানকে পাকিস্তান রাষ্ট্র থেকে বিচ্ছিন্ন করার লক্ষ্যে এক ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হন। 

আরো বলা হয় যে, মুজিব ও তাঁর সহযোগীরা এ ব্যাপারে ঢাকাস্থ ভারতীয় হাই কমিশনের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলেন। এমন কি ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের আগরতলায় ভারতীয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে এরা গোপন বৈঠকেও মিলিত হন। সরকারিভাবে ঘোষণা করা হয় পাকিস্তানি সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরিচ্যুত ও অবসর গ্রহণকারী ব্যক্তিগণ পাকিস্তান বিচ্ছিন্ন করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত এ সম্বন্ধে সরকার জানতে সক্ষম হয়। 

১৮ জানুয়ারি এক পেস নোটে বলা হয়। “ষড়যন্ত্রের পরিকল্পনা ও পরিচালনার সাথে শেখ মুজিবুরের জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে। কাজেই তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছে।” মূলত এ সময় তিনি পাকিস্তান প্রতিরক্ষা আইনে গ্রেফতার হয়ে বন্দী অবস্থায় ছিলেন।

উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিশেষে বলা যায় যে, আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার উদ্দেশ্য ছিল বাংলাকে রাজনৈতিক নেতা বা নেতৃত্ব শূন্য করা ও আইয়ুব সরকারের ক্ষমতায় টিকে থাকা। কিন্তু বাঙালি জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের সামনে এ ষড়যন্ত্র মামলা ধূলিসাৎ হয়ে যায়। যার ফলে আইয়ুব সরকার এ মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয়।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url