কাল কাকে বলে? ক্রিয়ার কাল কত প্রকার এবং কী কী?

ক্রিয়ার কাল বোঝাতে সংস্কৃতে 'ল' পরিভাষাটি ব্যবহৃত হতো। বাংলা ভাষায় স্বতন্ত্র কোনো পরিভাষা নেই। মানবজীবনের সাথে কর্ম নিবিড়ভাবে জড়িয়ে রয়েছে। মানুষ সৃষ্টির শুরু থেকেই কাজ করেছে, করছে এবং ভবিষ্যতেও করবে। এই ক্রিয়া সম্পাদনের সময়কেই ক্রিয়ার কাল বলে। অর্থাৎ‍ ক্রিয়া বা কাজ যে সময়ে সংঘটিত বা সম্পাদিত হয়েছিল, হচ্ছে বা হবে সেই সময়ই ক্রিয়ার কাল বলে বিবেচিত। যেমন-

১. আমরা বই পড়ি। ‘পড়া' ক্রিয়াটি এখন অর্থাৎ‍ বর্তমানে সংঘটিত হচ্ছে।

২. কাল তুমি শহরে গিয়েছিলে। 'যাওয়া' ক্রিয়াটি পূর্বে অর্থাৎ অতীতে সম্পন্ন হয়েছে। 

৩. আগামী কাল স্কুল বন্ধ থাকবে। বন্ধ থাকা' কাজটি পরে বা ভবিষ্যতে সম্পন্ন হবে।

ক্রিয়ার কাল প্রধানত তিন প্রকার। তথা:  

যে ক্রিয়া পদ দ্বারা বর্তমান সময় সংঘটিত হচ্ছে এমন কোন কাজ, অভ্যাস ও চিরন্তন সত্য বোঝায় তাকে বর্তমানকাল বলে। যেমন- আমি কাজ করছি। সূর্য পূর্ব দিকে ওঠে । আনোয়ার রোজ চা পান করে।

 

যে ক্রিয়া বর্তমানে সাধারণ ভাবে ঘটে, তার কালকে সাধারণ বর্তমান কাল বলে । যেমন- সে ভাত খায়। আমি বাড়ি যাই। 

স্বাভাবিক বা অভ্যস্ততা বোঝালে সাধারণ বর্তমান কালের ক্রিয়াকে নিত্যবৃত্ত বর্তমান কাল বলে। যেমন- সন্ধ্যায় সূর্য অস্ত যায়। (স্বাভাবিকতা) আমি রোজ সকালে বেড়াতে যাই। (অভ্যস্ততা)

যে কাজ শেষ হয়নি, এখনও চলছে, সে কাজ বোঝাবার জন্য ঘটমান বর্তমান কাল ব্যবহৃত হয়। যেমন- হাসান বই পড়ছে। নীরা গান গাইছে।

ক্রিয়া পূর্বে শেষ হলেও তার ফল এখনও বর্তমান থাকলে, পুরাঘটিত বর্তমান কাল ব্যবহৃত হয়। যেমন- এবার আমি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছি। এতক্ষণ আমি অঙ্ক করেছি।

বর্তমান অনুজ্ঞা কাকে বলে? 

ক্রিয়ার সাহায্যে বর্তমান কালে কোন আদেশ, উপদেশ, অনুরোধ,অভিশাপ, আশীর্বাদ, প্রার্থনা বুঝালে বর্তমান অনুজ্ঞা হয়। যেমন- আল্লাহ তোমার মঙ্গল করুন। এখান থেকে চলে যাও।

যে ক্রিয়ার কাল অতীত হয়ে গেছে অর্থাৎ কাজটি পূর্বে শেষ হয়ে গেছে বোঝায় সেই ক্রিয়ার কালকে অতীত কাল বলে। যেমন- আমি বইটি পড়েছি। মা নামাজ পড়েছেন। বাবা বাড়ি ফিরেছেন।

কাজটি অল্প কাল পূর্বে শেষ হয়েছে বোঝালে তাকে সাধারণ অতীত কাল বলে। অর্থাৎ সাধারণ অতীত কাল বর্তমান কালের কিছু পূর্বে শেষ হয়েছে বোঝায়। যেমন— কাজটি খুব মন দিয়ে করলাম। রিপা খাওয়া শেষ করল।

অতীতে কাজটি কিছু সময় ধরে চলছিল বোঝালে তাকে ঘটমান অতীত কাল বলে। যেমন- আবির বাগানে খেলছিল। কাল বিকেলে আমরা ফুটবল খেলছিলাম।

যে কাজ অতীতে সংঘটিত হয়েছে এবং যার ফলের প্রভাবও শেষ হয়ে গেছে সেই কাজের কালকে পুরাঘটিত অতীত কাল বলে। যেমন গত বছর তার পরীক্ষা শেষ হয়েছে। দায়িত্বটি আমি পালন করেছিলাম।

অতীতে রোজ রোজ ঘটত এখন ক্রিয়ার কালকে নিত্যবৃত্ত অতীত কাল বলে। যেমন- রোজ মায়ের কাছে গল্প শুনতাম। বিকেলে দাদা বেড়াতে নিয়ে যেতেন।

যে ক্রিয়া ভবিষ্যতে সংঘটিত হবে বোঝায় তাকে ক্রিয়ার ভবিষ্যৎ কাল বলে। যেমন— মনন কাল বাড়ি যাবে। শিউলি স্কুলে ভর্তি হবে।

যে কাজ এখনও শুরু হয়নি, ভবিষ্যতে হবে তার কালকে সাধারণ ভবিষ্যৎ কাল বলে। যেমন- আমি ঢাকা যাব। তুলি গান গাইবে।

যে ক্রিয়া ভবিষ্যতে আরম্ভ হয়ে চলতে থাকবে বোঝায় তাকে ঘটমান ভবিষ্যৎ কাল বলে। যেমন- আমি সারা জীবন গান গাইব। জেলেরা সারা জীবন মাছের উপর নির্ভর করে থাকবে।

ভবিষ্যৎ কালে একই বাক্যে দুটি ক্রিয়া থাকলে অপেক্ষাকৃত পূর্বে যে ক্রিয়ার কাল থাকবে তাকে পুরাঘটিত ভবিষ্যৎ কাল বলে। যেমন তুমি বলার আগেই আমি কাজটি করে ফেলব। হয়তো কখনো তোমাকে বলে থাকব।

ভবিষ্যতে কোনো কাজ করার জন্য আদেশ, উপদেশ, অনুরোধ, প্রার্থনা ইত্যাদি বোঝালে তাকে ভবিষ্যৎ অনুজ্ঞা বলে। যেমন-- আশা করি সফল হবে। ভালো ফল পেতে অপেক্ষা করো।