রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমত্বের ধারণা সম্পর্কে লিখ ।
রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমত্ব কি?রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমত্ব কাকে বলে?রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমত্ব বলতে কি বোঝায়?রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমত্ব বলতে কি বুঝ।সার্বভৌমত্ব রাষ্ট্রের চরম ক্ষমতা আলোচনা কর।সার্বভৌমত্ব রাষ্ট্রের একক ও অবিভাজ্য ক্ষমতা ব্যাখ্যা কর।
রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমত্বের ধারণা: রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমত্ব হচ্ছে রাষ্ট্রের চূড়ান্ত ক্ষমতা। এই চূড়ান্ত ক্ষমতার রয়েছে দুটি দিক। যেমন— ক. অভ্যন্তরীণ ও খ. বাহ্যিক ।
ক. অভ্যন্তরীণ সার্বভৌম ক্ষমতার বলে রাষ্ট্র তার অন্তর্গত সকল প্রকার সংঘ ও প্রতিষ্ঠানের উপর কর্তৃত্ব আরোপ ও নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখে এবং রাষ্ট্র তার অধীন সকল জনসমষ্টি ও সকল সংস্থার পূর্ণ আনুগত্য লাভ করে।
খ. বাহ্যিক সার্বভৌম ক্ষমতার বলে রাষ্ট্র বহিঃশক্তির নিয়ন্ত্রণ থেকে মুক্ত থাকে। এই ক্ষমতা বলেই একটি রাষ্ট্র স্বাধীনভাবে অন্য কোনো রাষ্ট্রের সাথে চুক্তি, সন্ধি ও বন্ধুত্ব স্থাপন করতে পারে। পঞ্চদশ শতাব্দীর শেষ দিকে রোমান সাম্রাজ্যে বিদ্যমান চরম বিশৃঙ্খলা ও পোপের নৈতিক অধঃপতনের জন্য তার কর্তৃত্বের বিরুদ্ধে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। এ সময় ইউরোপে শুরু হয় রেনেসাঁ ও ধর্মীয় সংস্কার আন্দোলন। ফলে সাম্রাজ্য ও পোপের প্রতি আনুগত্যকে চ্যালেঞ্জ করা হয়। এই বিরোধের পরিণতিতে সামন্ততন্ত্র বিলুপ্ত হয়ে পুঁজিবাদী সমাজের উদ্ভব ঘটে এবং পুঁজিবাদী সমাজকে টিকিয়ে রাখার জন্য গড়ে উঠে অসংখ্য সার্বভৌম রাষ্ট্র।
রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমত্বের ধারণাটি সর্বপ্রথম ষোড়শ শতাব্দীতে ফরাসি রাষ্ট্রবিজ্ঞানী কমদিনের কাছে পূর্ণতা লাভ করে। রাষ্ট্রের মধ্যে একটি চূড়ান্ত ক্ষমতাকেই তিনি সার্বভৌম ক্ষমতা বলে বুঝিয়েছেন। এই ক্ষমতা রাজতন্ত্রে রাজার উপর এবং গণতন্ত্রের জনগণের উপর ন্যস্ত। রাষ্ট্রের এই চরম ও পরম ক্ষমতাই রাষ্ট্রকে অন্যান্য যে কোনো প্রতিষ্ঠান থেকে পৃথক বৈশিষ্ট্য দান করে। | সার্বভৌমত্ব প্রকৃতিগতভাবে অবিভাজ্য। কিন্তু সার্বভৌমত্ব রাষ্ট্রের চূড়ান্ত ক্ষমতাকে বুঝালেও আন্তর্জাতিক আইনে এ ক্ষমতা অসীম নয় এবং এর প্রয়োগ আন্তর্জাতিক আইনের মূলনীতিসমূহ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। অর্থাৎ রাষ্ট্র আন্তর্জাতিক আইন মেনে চলেই আইনের মূলনীতিসমূহ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত।
সার্বিক আলোচনায় বুঝা যায়, সার্বভৌমত্ব রাষ্ট্রের একক ও অবিভাজ্য ক্ষমতা যা একটি রাষ্ট্রের অপরিহার্য বিষয়। তাই রাষ্ট্রের সার্বভৌম ক্ষমতা মেনে চলা যেমন প্রত্যেক রাষ্ট্রের কর্তব্য তেমনি নিজ ভূখণ্ডের মানবাধিকারসহ আন্তর্জাতিক আইনের সব বিধান মেনে চলতেও রাষ্ট্র বাধ্য।