সার্বভৌমত্বের বৈশিষ্ট্যসমূহ কী কী?

সার্বভৌমত্বের বৈশিষ্ট্যগুলো আলোচনা কর।
সার্বভৌমত্বের বৈশিষ্ট্যগুলো কি কি?
সার্বভৌমত্বের বৈশিষ্ট্যসমূহ আলোচনা কর।
সার্বভৌমত্বের অপরিহার্য বৈশিষ্ট্যগুলো বর্ণনা কর
সার্বভৌমত্বের বৈশিষ্ট্যগুলো লিখ।

সার্বভৌমত্ব হচ্ছে রাষ্ট্রের অপরিহার্য বিষয়। সার্বভৌমত্ব ছাড়া রাষ্ট্রের অস্তিত্বই কল্পনা করা যায় না। কেননা রাষ্ট্র গঠনের জন্য অপরিহার্য চারটি উপাদানের মধ্যে সার্বভৌমত্ব হচ্ছে সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। রাষ্ট্রের এ ক্ষমতাবলে রাষ্ট্র অভ্যন্তরীণ নিয়ন্ত্রণ ও বহিঃশত্রুর আক্রমণ থেকে মুক্ত থাকে। সর্বোপরি সার্বভৌমত্বের কতকগুলো গুণ বা বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক নিয়ন্ত্রণ করে।

সার্বভৌমত্বের বৈশিষ্ট্য : সার্বভৌমত্বের প্রকৃতি ও সংজ্ঞাগুলো বিশ্লেষণ করলে এর নিম্নলিখিত বৈশিষ্ট্যগুলো দেখতে পাওয়া যায়':

১. স্থায়িত্ব (Permanence) : স্থায়িত্ব সার্বভৌমত্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য। রাষ্ট্রের অস্তিত্ব যতদিন বিদ্যমান থাকে ততদিন সার্বভৌমত্ব স্থায়ী হয়। রাষ্ট্রের সরকার পরিবর্তন হতে পারে, কিন্তু সেজন্য সার্বভৌমত্ব বিনষ্ট হবে না। কারণ সরকার পরিবর্তন হলেও রাষ্ট্রের বৈশিষ্ট্যগুলো অক্ষুণ্ণ ও অপরিবর্তিত থাকে। সার্বভৌম ক্ষমতা হচ্ছে রাষ্ট্রের চিরন্তন ও চিরস্থায়ী ক্ষমতা।

২. সার্বজনীনতা (Universality) : সার্বভৌমত্ব সার্বজনীন। সর্বজনীন অর্থ হচ্ছে রাষ্ট্রের অভ্যন্তরে সকল ব্যক্তি, গোষ্ঠী, সংস্থা, সংঘ বা প্রতিষ্ঠান প্রভৃতির উপর সার্বভৌম ক্ষমতা অবাধ ও বাধাবন্ধহীন। তবে বিদেশি রাষ্ট্রদূত ও কূটনীতিবিদগণ রাষ্ট্রীয় কর্তৃত্ব ও সার্বভৌমত্বের অধীন নয় ।

৩. অবিভাজ্যতা (Indivisibility) : প্রকৃতিগত দিক থেকে সার্বভৌমত্ব একক ও অবিভাজ্য ক্ষমতা। সার্বভৌম ক্ষমতাকে বিভক্ত করে বিভিন্ন ব্যক্তি বা সংস্থার হাতে অর্পন করা যায় না। তাহলে সার্বভৌমত্বের বিলুপ্তি ঘটে।

৪. অহস্তান্তরযোগ্যতা ( Inalienability) : সার্বভৌমত্ব হচ্ছে রাষ্ট্রের অবিচ্ছেদ্য কর্তৃত্ব। সার্বভৌম ক্ষমতা হস্তান্তরযোগ্য নয়। সার্বভৌম ক্ষমতা হস্তান্তর করার অর্থ রাষ্ট্রের আত্মহত্যারই নামান্তর। মানুষ যেমন নিজের জীবন অপরকে দান করে বাঁচতে পারে না, গাছপালা যেমন অঙ্কুরোগম হওয়ার এবং বৃদ্ধির অধিকার ত্যাগ করলে বাঁচতে পারে না, তেমনি সার্বভৌম ক্ষমতা হস্তান্তর করলে রাষ্ট্রও বাঁচতে পারে না। সার্বভৌমত্ব হলো রাষ্ট্রের প্রাণ।

৫. মৌলিকত্ব ও চরমত (Originality and absoluteness) : আইনগত দিক থেকে সার্বভৌমত্ব হচ্ছে। মৌলিক, চরম ও সীমাহীন। অভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রে এই ক্ষমতা অসীম। ব্যক্তি, সংঘ প্রভৃতি সকল প্রতিষ্ঠানের উপরই সার্বভৌম ক্ষমতা অবাধ, চরম ও চূড়ান্ত। সার্বভৌমের ইচ্ছাই আইন। সার্বভৌম ক্ষমতাসম্পন্ন রাষ্ট্র প্রণীত আইন লঙ্ঘন করলে শাস্তি। পেতে হয়। সার্বভৌম ক্ষমতাকে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান চ্যালেঞ্জ বা অস্বীকার করতে পারে না।

৬. অনন্যতা (Uniqueness) : সার্বভৌম ক্ষমতা অনন্য। অন্য কোনো ক্ষমতার সাথে এর তুলনা চলে না। রাষ্ট্রের হাতে এই ক্ষমতা রয়েছে বলেই তা অন্যান্য সংঘ বা সংস্থা থেকে অনন্য। এই অনন্য ক্ষমতাবলেই রাষ্ট্র সর্বোচ্চ ক্ষমতার অধিকারী এবং বাধ্যতামূলকভাবে নাগরিকদের নিকট থেকে আনুগত্য লাভ করে থাকে।

৭. ব্যাপকতা (Comprehensiveness) : সমগ্র ভূখণ্ডব্যাপী রাষ্ট্রের সার্বভৌম ক্ষমতা বিরাজমান। সার্বভৌম ক্ষমতা রাষ্ট্রের অভ্যন্তরে সকল ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের উপর সমভাবে প্রযুক্ত হয় । প্রত্যেক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান রাষ্ট্রের সার্বভৌম ক্ষমতার অধীন। কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান সার্বভৌম ক্ষমতার বিরোধিতা করতে পারে না। অভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রে সার্বভৌম ক্ষমতা বাধবন্ধহীন, অবাধ ও অসীম।

উপরিউক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, সার্বভৌমত্ব রাষ্ট্রের সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। রাষ্ট্রের অস্তি ত্ব সার্বভৌমত্বের উপর নির্ভরশীল। সার্বভৌমত্বই রাষ্ট্রকে বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত করেছে। সার্বভৌমত্ব ব্যতীত রাষ্ট্রের অস্তিত্বের কথা কল্পনাও করা যায় না।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url