ফরাজী শব্দের অর্থ কি? ফারায়েজী আন্দোলন কাকে বলে?

ফারায়েজী আন্দোলন কি 

ওয়াহাবী মতাদর্শে বিশ্বাসী হাজী শরীয়তউল্লাহ পরিচালিত আন্দোলনের নাম 'ফারায়েজী আন্দোলন'। ফারায়েজী শব্দটি এসেছে 'ফরজ' শব্দ থেকে। 'ফরজ' শব্দের অর্থ হচ্ছে “অবশ্য পালনীয়।' তিনি তাঁর অনুসারীদের ধর্মীয় কুসংস্কারমুক্ত হয়ে মুসলমানদের অবশ্য করণীয় কর্তব্য পালনে আহ্বান জানান। কেননা, হাজী শরীয়তউল্লাহ লক্ষ্য করেন যে, মুসলমান জনগণ পীরপূজা, পীরের দরগায় ওরশ, মানতপালন এবং কবর পূজায় লিপ্ত। মুসলমানদের এসব ধর্মীয় কুসংস্কার ও অনাচার এবং নৈতিক অধঃপতন হাজী শরীয়তউল্লাহকে বিচলিত করে তোলে। তিনি এসব পালনের ঘোর বিরোধিতা করেন। তিনি মুসলমানদেরকে পাঁচটি ফরজ পালনের উপর গুরুত্ব আরোপ করেন। এ লক্ষ্যে তিনি সামাজিক ও ধর্মীয় আন্দোলন শুরু করেন। এ জন্যই তাঁর নেতৃত্বে পরিচালিত আন্দোলনের নাম ফারায়েজী আন্দোলন। ফারায়েজী আন্দোলন ছিল মূলত ধর্মীয় আবরণে একটি সংস্কার আন্দোলন।

ওয়াহাবী আদর্শে বিশ্বাসী হাজী শরীয়তউল্লাহ্ ছিলেন ইসলামী শাসন ব্যবস্থায় বিশ্বাসী। তিনি বিশ্বাস করতেন যে, বিদেশী ও বিধর্মী ইংরেজ রাজত্বে ইসলামী জীবন ব্যবস্থার বিকাশ সম্ভব নয়। ব্রিটিশ ভারতকে তিনি এজন্যই 'দারুল হারব' বা 'বিধর্মীর রাজ্য' বলে ঘোষণা করেন। এরূপ বিধর্মী শাসিত দেশে মুসলমানদের ধর্মীয় রীতিনীতি ও অনুশাসন ঠিকমত পালন করা সম্ভব নয়। এজন্য তিনি ভারতবর্ষের মুসলমানদের জুমআ ও ঈদের নামাজ বর্জনের নির্দেশ দেন।

হাজী শরীয়তউল্লাহর আহ্বানে ফরিদপুর ও তার আশেপাশের কারিগর, কৃষক, তাঁতি, জেলে সম্প্রদায়ের মুসলমানগণ ব্যাপকভাবে সাড়া দেয়। তিনি লক্ষ করেন যে, এসব নিম্নবিত্তের মানুষদের উপর অত্যাচারী জমিদার ও নীলকর ইংরেজ সাহেবরা নির্যাতন ও শোষণ চালাচ্ছে। কাজেই তিনি এই শোষণ-নির্যাতনের বিরুদ্ধে জনগণকে সংগঠিত করতে সচেষ্ট হন। ফলে তিনি ধর্মীয় নেতা হলেও তাঁর উপর সামাজিক ও রাজনৈতিক নেতৃত্বের দায়িত্ব বর্তায়। তিনি জনগণকে জমিদার ও ইংরেজ নীলকরদের বিরুদ্ধে সংগঠিত করেন। কিন্তু শক্তিশালী জমিদার নীলকরদের প্রবল আক্রমণের মুখে হাজী শরীয়তউল্লাহর ফারায়েজী আন্দোলন ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url