বারাসাত বিদ্রোহ কী? বারাসাত বিদ্রোহ টীকা লেখ।

বারাসাত বিদ্রোহ

তিতুমীরের কৃষক আন্দোলন প্রথমে ছিল নীলকর সাহেব এবং স্থানীয় সামন্ত রাজা-জমিদারদের শোষণ নির্যাতনের বিরুদ্ধে। এ আন্দোলন ছিল অত্যাচারী নীলকর বণিক ও এদেশীয় জমিদারদের অত্যাচারের বিরুদ্ধে গণআন্দোলন। কিন্তু বার বার তিতুমীরের নিকট পরাজিত হয়ে স্থানীয় জমিদার এবং নীলকর ইংরেজ বণিক দল ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সরকারকে বুঝাতে চেষ্টা করেন যে, তিতুমীরের এ আন্দোলনের মূল হল স্বাধীনতা অর্জন। তিতুমীর ইংরেজ সরকারের নিকট বহুবার জমিদার ও নীলকর সাহেবদের বিরুদ্ধে নালিশ করেছিলেন। কিন্তু ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সরকার তিতুমীরের বক্তব্যে বর্ণপাত করেনি। বাধ্য হয়ে তিতুমীর নিজ বাহিনীকে সংগঠিত করে তুলতে সচেষ্ট হন। 

১৮২৫ সালে চব্বিশ পরগণা, নদীয়া ও ফরিদপুর জেলার কিয়দংশ সংযুক্ত করে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র গঠনে তিনি মনোনিবেশ করেন। উইলিয়াম হান্টারের মতে, যতঃস্ফূর্তভাবে সংগঠিত প্রায় ৮৩ হাজার কৃষক সেনাকে নিয়ে তিনি ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেন। তিনি ঘোষণা করেন, "তিতুমী এখন এদেশের নবাব। দেশের সকল প্রজাই স্বাধীন। কৃষকরাই এ দেশের জমির মালিক। আমরা ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসন মানি না।" তিতুমীরের এ বিদ্রোহই ইতিহাসে 'বারাসাত বিদ্রোহ' নামে পরিচিত। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি এই বিদ্রোহ দমনের জন্য "হিন্দু-মুসলিম বিভেদ নীতির" কৌশলও অবলম্মন করেন। তাঁরা প্রচার করেন যে, তিতুমীর একজন ধর্মান্ধ মুসলমান। সুতরাং হিন্দু কৃষকদের উচিত এ আন্দোলনের বিরোধিতা করা।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url