সমকালীন পাশ্চাত্য রাষ্ট্রদর্শনের প্রধান প্রধান ধারাসমূহ লিখ ।
রাষ্ট্রচিন্তার ইতিহাসকে প্রধানত চারটি ভাগে ভাগ করা যায়। সমকালীন যুগ তার মধ্যে অন্যতম। এ সময় রাষ্ট্রদর্শনের ব্যাপক পরিবর্তন সাধিত হয়। ১৮৩১ সালের পর থেকে সমকালীন বা উত্তরাধুনিক যুগের সূত্রপাত ঘটে। এ সময় সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক অবস্থার ব্যাপক পরিবর্তন লক্ষ করা যায়।
সমকালীন রাষ্ট্রদর্শনের প্রধান ধারাসমূহ নিম্নে উল্লেখ করা হলো :
১. বিবর্তনবাদী দর্শন : সমকালীন রাষ্ট্রদর্শনে বিবর্তনবাদের প্রভাব লক্ষ করা যায়। চার্লস ডারউইন ও হার্বার্ট স্পেন্সারের বিবর্তনবাদী মতবাদ ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করে।
২. প্রয়োগবাদী দর্শন : সমকালীন যুগে পাশ্চাত্য দর্শনের অভিনব মতবাদগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো প্রয়োগবাদ। এটি বাস্তবজীবনমুখী দর্শন। এই মতবাদের প্রবর্তক উইলিয়াম জেমস্ ও সি. এস পিয়ার্স। এটাকে আমেরিকান মতবাদও বলা হয়।
৩. বস্তুবাদী দর্শন : হেগেলের ভাববাদী দর্শনের বিরুদ্ধে মতবাদ হলো বস্তুবাদী দর্শন। মার্কস ও এঙ্গেলস তাঁদের মার্কসবাদে দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদ সম্পর্কে ব্যাখ্যা করেন।
৪. দুঃখবাদী দর্শন: দুঃখবাদী দর্শনের প্রতিষ্ঠাতা হলো শোপেন হওয়ার। তিনি ইচ্ছাতত্ত্ব প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে দুঃখবাদী দর্শনের জন্ম দেন।
৫. অস্তিত্ববাদ : সমকালীন যুগের বাস্তব জীবনমুখী দর্শনের মধ্যে অস্তিত্ববাদ অন্যতম। এ মতবাদের জনক হিসেবে সোরেন কিয়ার্কেগার্ড অমর হয়ে আছেন। জ্যাঁ পল সার্ত্রের সাহিত্য ও দর্শনে এই মতবাদের চরম উৎকর্ষ লক্ষ করা যায়।
৬. বাস্তববাদী দর্শন : বাস্তববাদ ভাববাদের বিরুদ্ধে এক প্রতিবাদস্বরূপ। ব্রিটিশ ও আমেরিকার দার্শনিকগণ এই মতবাদ সৃষ্টি করেন।
৭. রূপ বিজ্ঞান : এডমন হুসার্ল রূপ বিজ্ঞান নামক এক অভিনব দর্শনের সৃষ্টি করেন।
৮. যৌক্তিক প্রত্যক্ষবাদ : যৌক্তিক প্রত্যক্ষবাদের সূচনা করেন ভিয়েনা সার্কেলভুক্ত একদল দার্শনিক। তাঁরা দর্শনকে বৈজ্ঞানিক জ্ঞানের মতো স্বচ্ছ করার জন্য অধিবিদ্যাকে বর্জন করেছে।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায় যে, সমকালীন পাশ্চাত্য রাষ্ট্রদর্শনের মূল বৈশিষ্ট্য ছিল জীবনমুখী দর্শন সৃষ্টি করা। যার ফলশ্রুতিতে, অস্তিত্ববাদ, বাস্তববাদ, প্রয়োগবাদ, বিবর্তনবাদ, যৌক্তিক প্রত্যক্ষবাদ প্রভৃতি অভিনব দর্শনের সৃষ্টি হয়।