১৯৪৭ সালের ভারত স্বাধীনতা আইনের বৈশিষ্ট্য

১৯৪৭ সালের ভারত স্বাধীনতা আইন

ভূমিকা : ১৯৪৭ সালের ভারতের ভাইসরয় ছিলেন লর্ড মাউন্টব্যাটেন। মাউন্টব্যাটেনের ৩ জুন পরিকল্পনা ১৯৪৭ সালের ৪ জুলাই কমন্স সভায় এবং ১৫ জুলাই লর্ড সভায় পাস হয়। যার মাধ্যমে এটি আইনে পরিণত হয়। এমনকি এ বিলটি ১৮ জুলাই রাজকীয় সম্মতি লাভ করে। এভাবেই ২০০ বছরের ব্রিটিশ শাসনের অবসান হয়।


১৯৪৭ সালের ভারত স্বাধীনতা আইনের ধারা বা বৈশিষ্ট্য

নিম্নে ১৯৪৭ সালের ভারত স্বাধীনতা আইনের ধারাসমূহ আলোচনা করা হলো :

১. ভারত ও পাকিস্তান নামে দুটি স্বাধীন রাষ্ট্র : ১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট থেকে ভারত ও পাকিস্তান নামক দুটি স্বাধীন ডোমিনিয়নে বিভক্ত করা হবে। ব্রিটিশ সরকারের সার্বভৌমত্বের অবসান ঘটে। রাজ্যগুলো স্বাধীন থাকবে, নাকি কোনো ডোমিনিয়নে যোগদান করবে, সে ব্যাপারে উক্ত রাজ্যসমূহ নিজস্ব সিদ্ধান্ত গ্রহণের অধিকারী হবে।

২. ডোমিনিয়নের সীমানা নির্ধারণ : পূর্ব বাংলা, পশ্চিম পাকিস্তান, সিন্ধু, বেলুচিস্তান ও উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশ নিয়ে গঠিত হবে পাকিস্তান। অপরদিকে অবশিষ্ট ব্রিটিশ ভারতীয় ভূখণ্ড নিয়ে ভারত ডোমিনিয়ন সৃষ্টি হবে।

৩. ব্রিটিশ সরকারের কর্তৃত্ব হ্রাস : ১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্টের পর থেকে এই দুই ডোমিনিয়ন কিংবা এর কোনো অংশের উপর ব্রিটিশ সরকারের কোনো কর্তৃত্ব থাকবে না ।

৪. গভর্নর জেনারেল নিয়োগ : প্রত্যেক নতুন ডোমিনিয়নের জন্য একজন গভর্নর জেনারেল থাকবেন। তবে কোনো ডোমিনিয়ন কর্তৃক অনুরূপ আইন পাস না হওয়া পর্যন্ত একই ব্যক্তি উভয় ডোমিনিয়নের গভর্নর জেনারেল হতে পারবেন। তবে গভর্নর জেনারেল ব্রিটিশ সম্রাট কর্তৃক নিযুক্ত হবেন। ডোমিনিয়ন আইনসভার প্রণীত যে কোনো আইন ব্রিটিশ সম্রাটের নামে সম্মতি দানের পূর্ণ ক্ষমতা গভর্নর জেনারেল থাকবে।

৫. নিজস্ব আইনসভা গঠন : এই আইন অনুসারে উভয় ডোমিনিয়ন তার নিজস্ব আইনসভা গঠন করে স্ব-স্ব ডোমিনিয়নের জন্য আইন প্রণয়নের অধিকার লাভ করবে।

৬. ডোমিনিয়ন গণপরিষদ : ডোমিনিয়নের নতুন সংবিধান প্রণীত না হওয়া পর্যন্ত প্রত্যেক ডোমিনিয়নের আইনসভা রূপে কাজ করবে। ইতঃপূর্বে ভারতের কেন্দ্রীয় আইনসভা যেরূপ ক্ষমতার অধিকারী ছিল অনুরূপ ক্ষমতা প্রত্যেক ডোমিনিয়নের আইনসভা ভোগ করবে যে পর্যন্ত না গণপরিষদ অনুরূপ বিধান করে ।

৭. ১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইন : নতুন সংবিধান প্রণীত না হওয়া পর্যন্ত প্রত্যেক ডোমিনিয়ন এর সরকার এবং ডোমিনিয়নের অন্তর্ভুক্ত প্রাদেশিক সরকারসমূহ প্রয়োজনীয় পরিবর্তন সাপেক্ষে ১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইন অনুসারে হবে।

৮. গভর্নর জেনারেলের ক্ষমতা : ১৯৪৮ সালের ৩১ মার্চ পর্যন্ত গভর্নর জেনারেল ১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইন গ্রহণ কিংবা প্রয়োজন অনুসারে রদবদলের ক্ষমতা ভোগ করবেন। উক্ত সময়ের পর এই ক্ষমতা ভোগ করবেন গণপরিষদ।

৯. ভারত সচিব পদের বিলুপ্তি : ১৯৪৭ সালের ভারত স্বাধীনতা আইনের মাধ্যমে ভারত সচিবের পদ বিলুপ্ত হয়। ভারত সচিবের দায়িত্ব গ্রহণ করেন কমনওয়েলথ সেক্রেটারি।

১০. সরকারি কর্মচারী ও সশস্ত্র বাহিনী বণ্টন : সকল সরকারি কর্মচারী এবং সশস্ত্র বাহিনীকে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে ভাগ করে দেয়ার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

১১. আইন কার্যকরের সময়সীমা : ১৯৪৮ সালের ৩১ মার্চের মধ্যে এ আইনের বিভিন্ন ধারা কার্যকর করার কথা বলা হয়।

১৯৪৭ সালের ভারত স্বাধীনতা আইনের গুরুত্ব 

১৯৪৭ সালের ভারত স্বাধীনতা আইনের গুরুত্ব অপরিসীম। যথা :

১. ১৯৪৭ সালের ভারত স্বাধীনতা আইন হলো ব্রিটিশ ভারতের রাজনৈতিক ও শাসনতান্ত্রিক সমস্যা সমাধানের সর্বশেষ পদক্ষেপ ।

২. এ আইনের ফলে প্রায় সুদীর্ঘ ২০০ বছরের ব্রিটিশ শাসনের অবসান হয়। এর মাধ্যমে অভ্যুদয় ঘটে দুটি রাষ্ট্রের। যা হলো ভারত ও পাকিস্তান।

৩. এ আইনের দ্বারা গভর্নর জেনারেল ও গভর্নরের স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতা লোপ পায় ।

১৯৪৭ সালের ভারত স্বাধীনতা আইনের ত্রুটি 

১. ব্রিটিশরা ভারতকে ঠিকমতো দ্বিখণ্ডিত করেই যায়নি, অনেক রাজনৈতিক বিষয় তারা অমীমাংসিত রেখে যায়। এক্ষেত্রে কাশ্মীরের কথা বলা যেতে পারে। কাশ্মীর একটি দেশীয় রাজ্য ছিল। কাশ্মীরের দখল নিয়ে ১৯৪৮ সাল এবং ১৯৬৫ সালে ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধ হয়।

২. ভারত বিভক্তির পর ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সম্পদ বণ্টনের বিষয়ে কোনো সুস্পষ্ট ধারা এই আইনে সংযোজিত না হওয়ায় পরবর্তীকালে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে তিক্ত সম্পর্কের সৃষ্টি হয়।

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, ১৯৪৭ সালের দেশবিভাগ হলো দীর্ঘদিনের ভারতীয়দের আশার প্রতিফলন, - আন্দোলনের ফল। এ আইনের মাধ্যমে পাকিস্তান ও ভারত দুটি ডোমিনিয়ন সৃষ্টির পাশাপাশি পূর্ববর্তী অনেক পদের বিলুপ্তির পাশাপাশি কিছু নতুন পদের সৃষ্টি হয়।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url