কম্পিউটার ভাইরাস কি ব্যাখ্যা কর

কম্পিউটার ভাইরাস হলো এক ধরনের ক্ষতিকারক সফটওয়্যার বা ম্যালওয়্যার যা পুনরুৎপাদনে সক্ষম এবং এক কম্পিউটার থেকে অন্য কম্পিউটারে সংক্রমিত হতে পারে। অনেকে ভুলভাবে ভাইরাস বলতে সব ধরনের ম্যালওয়্যারকে বুঝিয়ে থাকে, যদিও অন্যান্য ম্যালওয়্যারের যেমন স্পাইওয়্যার বা এডওয়্যারের পুনরুৎপাদন ক্ষমতা নেই। কম্পিউটার ভাইরাস কম্পিউটার সিস্টেমের নানা ধরনের ক্ষতি করে থাকে।
 

এর মধ্যে দৃশ্যমান ক্ষতি যেমন কম্পিউটারের গতি কমে যাওয়া, হ্যাং হয়ে যাওয়া, ঘন ঘন রিবুট (Reboot) হওয়া ইত্যাদি। তবে, বেশিরভাগ ভাইরাসই ব্যবহারকারীর অজান্তে তার সিস্টেমের ক্ষতি করে থাকে। কিছু কিছু ভাইরাস সিস্টেমের ক্ষতি করে না, কেবল ব্যবহারকারীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে। সিআইএইচ (CIH) নামে একটি সাড়াজাগানো ভাইরাস প্রতিবছর ২৬ এপ্রিল সক্রিয় হয়ে কম্পিউটার হার্ডডিস্ককে ফরম্যাট করে ফেলতো। বর্তমানে এটি নিষ্ক্রিয় রয়েছে।

কম্পিউটার ভাইরাস কত প্রকার

পুনরুৎপাদনের জন্য যেকোনো প্রোগ্রামকে অবশ্যই তারা কোড চালাতে (execute) এবং মেমোরিতে লিখতে সক্ষম হতে হয়। যেহেতু, কেউ জেনে-শুনে কোনো ভাইরাস প্রোগ্রাম চালাবে না, সেহেতু ভাইরাস তার উদ্দেশ্য পূরণে একটি সহজ পদ্ধতি বেছে নেয়। যে সকল প্রোগ্রাম ব্যবহারকারী নিয়মিত চালিয়ে থাকেন (যেমন লেখালেখির সফটওয়্যার) সেগুলোর কার্যকরী ফাইলের পেছনে ভাইরাসটি নিজের কোডটি ঢুকিয়ে দেয়া। যখন কোনো ব্যবহারকারী ওই কার্যকরী ফাইলটি চালায়, তখন ভাইরাস প্রোগ্রামটিও সক্রিয় হয়ে উঠে।

কাজের ধরনের ভিত্তিতে কম্পিউটার ভাইরাসকে দুইভাগে ভাগ করা হয়। যথা: 

  • অনিবাসী ভাইরাস (Non Resident Virus)
  • নিবাসী ভাইরাস (Resident Virus)


অনিবাসী ভাইরাস (Non Resident Virus) কি ?

কোনো কোনো ভাইরাস সক্রিয় হয়ে ওঠার পর, অমান্য কোন কোন প্রোগ্রামকে সংক্রমণ করা যায় সেটি খুঁজে বের করে। তারপর সেগুলোকে সংক্রমণ করে এবং পরিশেষে মূল প্রোগ্রামের কাছে নিয়ন্ত্রণ দিয়ে নিষ্ক্রিয় হয়ে যায়। এগুলোকে বলা হয় অনিবাসী ভাইরাস (Non Resident Virus)। 

অনিবাসী ভাইরাস (Non Resident Virus) কি?

অন্যদিকে, কোনো কোনো ভাইরাস সক্রিয় হওয়ার পর মেমোরিতে স্থায়ী হয়ে বসে থাকে। যখনই অন্য কোনো প্রোগ্রাম চালু হয়, তখনই সেটি সেই প্রোগ্রামকে সংক্রমিত করে। এ এখনের ভাইরাসকে বলা হয় নিবাসী ভাইরাস (Resident Virus)।

কম্পিউটার ভাইরাসের ইতিহাস

কম্পিউটার ভাইরাস প্রোগ্রাম লেখার অনেক আগে ১৯৪৯ সালে কম্পিউটার বিজ্ঞানী জন ভন নিউম্যান এ বিষয়ে আলোকপাত করেন। তার স্ব-পুনরুৎপাদিত প্রোগ্রামের ধারণা থেকে ভাইরাস প্রোগ্রামের (তখন সেটিকে ভাইরাস বলা হতো না) আবির্ভাব। পুনরুৎপাদনশীলতার জন্য এই ধরনের কম্পিউটার প্রোগ্রামকে ভাইরাস হিসেবে প্রথম সম্বোধন করেন আমেরিকার কম্পিউটার বিজ্ঞানী ফ্রেডরিক বি কোহেন। জীবজগতে ভাইরাস পোষক দেহে নিজেই পুনরুৎপাদিত হতে পারে।

ভাইরাস প্রোগ্রামও নিজের কপি তৈরি করতে পারে। সত্তর দশকেই, ইন্টারনেটের আদি অবস্থা, আরপানেট (ARPANET)-এ ক্রিপার ভাইরাস নামে একটি ভাইরাস চিহ্নিত করা হয়। সে সময় রিপার (Reaper) নামে আর একটি সফটওয়্যার তৈরি করা হয়, যা ক্রিপার ভাইরাসকে মুছে ফেলতে পারত। সে সময় যেখানে ভাইরাসের জন্ম হতো সেখানেই সেটি সীমাবদ্ধ থাকত।

১৯৮২ সালে এলক ক্লোনার (ELK CLONER) ফ্লপি ডিস্ক ব্যবহারের মাধ্যমে সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ে। তবে, ভাইরাসের বিধ্বংসী আচরণ প্রথম প্রকাশিত হয় ব্রেইন ভাইরাসের মাধ্যমে, ১৯৮৬ সালে। পাকিস্তানি দুই ভাই লাহোরে এই ভাইরাস সফটওয়্যারটি তৈরি করেন। এর পর থেকে প্রতিবছরই সারাবিশ্বে অসংখ্য ভাইরাসের সৃষ্টি হয়। বিশ্বের ক্ষতিকারক ভাইরাস ও ম্যালওয়্যারের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- ব্রেইন,ভিয়েনা, জেরুজালেম, পিংপং, মাইকেল এঞ্জেলো, ডার্ক এভেঞ্জার, সিআইএইচ (চেরনোবিল), অ্যানাকুর্নিকোভা, কোড রেড ওয়ার্ম, নিমডা, ডাপরোসি ওয়ার্ম ইত্যাদি ।

কম্পিউটার ভাইরাস ও এন্টিভাইরাস এর তালিক

কম্পিউটার ভাইরাস এন্টিভাইরাস
ট্রোজান হর্স ভাইরাস। AVG (এভিজি)।
বুট সেক্টর ভাইরাস। Avast (অ্যাভাস্ট)।
পার্টিশন সেক্টর ভাইরাস। Kaspersky (ক্যাসপারস্কি)
ম্যাক্রো ভাইরাস। Norton (নর্টন)
প্রোগ্রাম ভাইরাস। McAfee (ম্যাকাফি)
ফাইল ভাইরাস। Anti-Virus Toolkit
জেনারাল পারপাস ভাইরাস। Dr. Solomon’s Anti-Virus Software
ওভার রাইটিং ভাইরাস। Cure Antivirus Software
কমান্ড পারপাস ভাইরাস। PC Cilin
পলিমরফিক ভাইরাস।

কিছু অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর

প্রশ্ন: পৃথিবীর প্রথম কম্পিউটার ভাইরাসের নাম কি? 

উত্তর: পৃথিবীর প্রথম কম্পিউটার ভাইরাসের নাম ছিল Brain

প্রশ: কম্পিউটার ভাইরাসের নামকরণ করেন কে

উত্তর: কম্পিউটার ভাইরাস এর নামকরণ করেন ফ্রেড কোহেন। 

প্রশ্ন: কয়েকটি কম্পিউটার ভাইরাসের নাম

  1. ক্রিপ্টোলকার (Cryptolocker)
  2. মাইডুম (MyDoom)
  3. নিমডা (Nimda)
  4. মেলিসা (Melissa)

প্রশ্ন: ১০ টি কম্পিউটার ভাইরাসের নাম 
  1. ক্রিপ্টোলকার (Cryptolocker)
  2. স্টর্ম ওয়ার্ম (Storm Worm)
  3. স্যাসার ও নেটস্কাই (Sasser & Netsky)
  4. মাইডুম (MyDoom)
  5. এস কিউ এল স্ল্যামার
  6. নিমডা (Nimda)
  7. কোড রেড ও কোড রেড-২ (Code Red and Code Red II)
  8. দ্য ক্লেজ ভাইরাস (The Klez Virus)
  9. আইলাভইউ (ILOVEYOU)
  10. মেলিসা (Melissa
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url