রাষ্ট্রবিজ্ঞান কি(Rastrobiggan Ki)? রাষ্ট্রবিজ্ঞানের সংজ্ঞা দাও অথবা রাষ্ট্রবিজ্ঞান কাকে বলে?
ভূমিকা: মানুষ সামাজিক, রাজনৈতিক,অর্থনৈতিক সম্মান ও ক্ষমতার জীব। গুণ-ক্ষমতা ও যোগ্যতার প্রেক্ষিতে মানুষ বিচিত্র এবং পরস্পর নির্ভরশীল। মূলতঃ এ কারণে মানুষ বাঞ্ছিত জীবন যাপনের প্রত্যাশায় সমাজ গঠন করে। আর এই সমাজকে সুষ্ঠু সামঞ্জস্যশীল উপায়ে পরিচালনার মাধ্যমে শান্তি-শৃঙ্খলা, ঐক্য, সংরক্ষণ ও বিকাশ ধারা প্রবর্তনের জন্য গঠন করা হয় রাষ্ট্র। তাই সহজ কথায় বলতে গেলে যে বিজ্ঞান রাষ্ট্র নিয়ে আলোচনা করে তাই রাষ্ট্রবিজ্ঞান।
রাষ্ট্রবিজ্ঞান শব্দের উৎপত্তি: রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ইংরেজী প্রতিশব্দ Politics শব্দটি এসেছে গ্রিক শব্দ Politikos থেকে যা গ্রীক Politics থেকে উদ্ভুত। Politics-এর অর্থ হল Citizen যা Polis-এর সাথে সম্পর্কযুক্ত। আর Polis অর্থ হল City বা নগর। সুতরাং ব্যুৎপত্তিগত দিক থেকে বলা যায় যে, নগরকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা রাষ্ট্রের বসবাসকারী নাগরিকদের পরিচালনা পদ্ধতি সম্পর্কে আলোকপাত করে যে শাস্ত্র তাই রাষ্ট্রবিজ্ঞান।
রাষ্ট্রবিজ্ঞানের প্রামাণ্য সংজ্ঞা: বিভিন্ন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী রাষ্ট্রবিজ্ঞানকে বিভিন্নভাবে সংজ্ঞায়িত করেছেন। তা নিম্নে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো-
অধ্যাপক আর. জি. গেটেল (R.G. Gettell) এর মতে, 'রাষ্ট্রবিজ্ঞান হলো সেই বিজ্ঞান যা রাষ্ট্রীয় সংগঠন, প্রতিষ্ঠান ও মতবাদের অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ সম্পর্কে আলোচনা করে (Political science is the study of the state in the past, present and future.)
রাষ্ট্রবিজ্ঞানী পল জেনেট (Paul Janet)- এর মতে, রাষ্ট্রবিজ্ঞান হলো সমাজ বিজ্ঞানের সেই অংশ যা রাষ্ট্রের ভিত্তি ও সরকারের নীতিসমূহের আলোচনা করে (Political science is that part of social science which treats of the foundations of the state and the principles of the government
রাষ্ট্রবিজ্ঞানী গ্যারিস (Garise) বলেন, Political science deals with the origin, development, purpose and all other political problems of the state.' 'অর্থাৎ রাষ্ট্রবিজ্ঞান রাষ্ট্রের উৎপত্তি, অগ্রগতি, উদ্দেশ্য এবং রাষ্ট্রের অন্যান্য সকল সমস্যা নিয়ে আলোচনা করে।'
লর্ড অ্যাকটন (Lord Acton) বলেন, Political science, is concerned with the state and with conditions essential for its development. অর্থাৎ রাষ্ট্রবিজ্ঞান রাষ্ট্র এবং এর অগ্রগতির জন্য প্রয়োজনীয় শর্তাবলি নিয়ে আলোচনা করে।
অধ্যাপক লাসওয়েল (Lasswell)-এর মতে, "সমাজের অন্তর্ভুক্ত প্রভাব ও প্রভাবশালীদের ক্রিয়াকলাপের বিশ্লেষণ এবং পর্যালোচনাই হল রাষ্ট্রবিজ্ঞান (Politics is the stuty of influence and influential)
অধ্যাপক জে, ডব্লিউ, গার্নার (J.W. Garner) বলেন, 'Political science begins and ends with the state.' 'অর্থাৎ রাষ্ট্রবিজ্ঞান হলো সেই বিষয় যা কেবল রাষ্ট্রকে নিয়ে আলোচনা কর।'
অধ্যাপক লাঙ্কি (Laski) বলেন, 'Political science concerns itself with the life of men in relation to organised state,' 'অর্থাৎ সংগঠিত রাষ্ট্রের পরপ্রেক্ষিতে মানবজীবনের আলোচনাই হচ্ছে রাষ্ট্রবিজ্ঞান।'
রাষ্ট্রচিন্তাবিদ ম্যাক্স ওয়েবার (Max Weber)-এর মতে, 'রাষ্ট্রবিজ্ঞান একাধারে বাস্তববাদী ও আদর্শবাদী বিজ্ঞান, যা ন্যায়নীতি অনুসন্ধানের দৃষ্টিকোণ থেকে মানুষের আচরণকে নিয়ে আলোচনা করে।'
উপরোক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে আমরা বলতে পারি যে, 'রাষ্ট্রবিজ্ঞান হলো এমন এক সামাজিক বিজ্ঞান যেখানে রাষ্ট্র ও রাজনীতির দার্শনিক, সাংগঠনিক, প্রশাসনিক প্রসঙ্গ, জাতীয়, আন্তর্জাতিক আইন ও সাংগঠনিক সম্পর্কের প্রসঙ্গ এবং বহুবিধ রাজনৈতিক ব্যবস্থার তুলনামূলক প্রসঙ্গের বিজ্ঞানসম্মত আলোচনা ও পর্যালোচনা চলে।