বাংলাদেশের শরণার্থী সমস্যা সম্পর্কে লিখ।
বাংলাদেশের শরণার্থী সমস্যা সম্পর্কে লিখ।
বাংলাদেশের শরণার্থী সমস্যা: বাংলাদেশের শরণার্থী সমস্যা বলতে মূলত রোহিঙ্গা সমস্যাকে বুঝানো হয়। এ সমস্যার সূচনা হয়েছিল ঊনবিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয় ভাগে ১৮৭৪ সালে বার্মারাজ থিবো কর্তৃক আরাকান রাজ্য দখলের মাধ্যমে। ১৯৪৭ ও ১৯৭১ সালে দুই দফা স্বাধীনতা লাভের পর বাংলাদেশের জন্য বর্তমানে রোহিঙ্গারা এক বিরাট সমস্যা সৃষ্টি করে চলেছে। রোহিঙ্গাদের জন্য বাংলাদেশের যেসব সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছে তার মধ্যে বিশেষ উল্লেখযোগ্য হচ্ছে
১. জনসংখ্যার চাপ বৃদ্ধি : বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম ঘনবসতিপূর্ব এবং জনবহুল দেশ। প্রায় ১৬ কোটি জনগণের মৌলিক চাহিদা পূরণ করা দেশের সরকারের পক্ষে বিশেষ কষ্টদায়ক। এর মধ্যে প্রায় ৭ লক্ষ নিবন্ধিত রোহিঙ্গা বাংলাদেশে বসবাস করছে। ফলে তাদের চাহিদা পূরণ করার জন্য সরকারকে বিশেষ চিন্তা করতে হয়। তাছাড়া নিবন্ধিত সংখ্যার বাইরেও অনেক রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আছে বলে মনে করা হয় যার সংখ্যা প্রতি নিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছে।
২. আইন শৃঙ্খলার জন্য হুমকি : রোহিঙ্গাদের একটি অংশ অবৈধ অস্ত্র ও মাদক চোরাচালানের সাথে জড়িত থেকে দেশের আইন শৃঙ্খলার জন্য বিশেষ চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করছে। তাদের মধ্যে কেউ কেউ আবার চুরি, ছিনতাইসহ সরাসরি অপরাধের সাথেও যুক্ত হয়ে ধরা পড়ছে। ফলে রাষ্ট্রের জন্য তারা মাথাব্যথার কারণ হয়েছে।
৩. রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি : রোহিঙ্গাদের একটি গ্রুপ দেশের রাজনীতির ক্ষেত্রেও বিশৃঙ্খলার সাথে যুক্ত বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে। তারা কোনো পক্ষের হয়ে অপর পক্ষের ওপর আবার কখনো কখনো মায়ানমার সরকারের প্ররোচনায় একজোট হয়ে স্থানীয়দের ওপরেও আক্রমণ চালানোর অভিযোগ পাওয়া গেছে।
৪. আন্তর্জাতিক অপরাধচক্রের সাথে সংযোগ : রোহিঙ্গাদের মধ্যে অনেকেই স্থানীয় কিছু অসাধু ব্যক্তির সাহায্যে বাংলাদেশি পাসপোর্ট সংগ্রহ করে বিদেশে পাড়ি জমিয়েছে। তারা সেখানে বিভিন্ন অপকর্মের সাথে জড়িত হয়ে ধরা পড়ার ফলে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে। কোনো কোনো দেশ এসবের কারণে বাংলাদেশি শ্রমিক নেওয়াই বন্ধ করে দিয়েছে যা বাংলাদেশের জন্য খুবই উদ্বেগের কারণ হয়েছে। এর কারণে ভাবমূর্তির পাশাপাশি দেশ অর্থনৈতিকভাবেও ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে।
রোহিঙ্গা সমস্যা বাংলাদেশের জন্য বর্তমানের বৃহৎ চ্যালেঞ্জগুলোর মধ্যে অন্যতম। বাংলাদেশ এক্ষেত্রে আন্তর্জাতিকভাবে তেমন সহযোগিতা না পাওয়ায় সরকারকে কঠোরভাবে এ সমস্যা মোকাবিলা করতে হবে। আবেগকে দূরে সরিয়ে বাস্তবতার নিরীখে এ পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হবে। নজরদারী বৃদ্ধির পাশাপাশি কূটনৈতিক তৎপরতার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা অর্জনের চেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে।