আইনগত সার্বভৌমত্ব ও রাজনৈতিক সার্বভৌমত্ব কী?

সার্বভৌমত্ব হচ্ছে রাষ্ট্রের অসীম, চরম ও অবিভাজ্য ক্ষমতা যা রাষ্ট্রের অপরিহার্য চারটি উপাদানের মধ্যে অন্যতম একটি উপাদান। কিন্তু এর প্রকৃতি, অবস্থান ও মতবিরোধের ফলে এর বিভিন্ন রূপ সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায় । তন্মধ্যে আইনগত সার্বভৌমত্ব ও রাজনৈতিক সার্বভৌমত্ব একটি রূপ।

আইনগত সার্বভৌমত্ব ও রাজনৈতিক সার্বভৌমত্ব (Legal Sovereignty and Political Sovereignty) : কোনো ভিত্তিতে সার্বভৌম ক্ষমতা প্রয়োগ করা হচ্ছে তার ফলেই সার্বভৌমত্বের এই বিভাজন ঘটে। প্রত্যেক রাষ্ট্রের আইন প্রণয়নকারী চূড়ান্ত কর্তৃপক্ষকেই আইনগত সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী বলা হয়। আইন প্রণয়নকারী কর্তৃপক্ষের আদেশই চূড়ান্ত। সামাজিক রীতিনীতি, ধর্মীয় অনুশাসন, বিচারালয়ের রায়, নির্বাচকমণ্ডলীর রায়, জনমতের নির্দেশ প্রভৃতি কোনোক্রমেই আইনগত সার্বভৌমত্বের ঊর্ধ্বে নয়। সার্বভৌমত্ব তত্ত্বের প্রবক্তা জন অস্টিন এর মতে, গ্রেট ব্রিটেনের রাজাসহ পার্লামেন্ট হচ্ছে আইনগত সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠান ।

রাষ্ট্রের যে সমষ্টিগত প্রভাব আইনগত সার্বভৌমত্বের পেছনে অবস্থান করে সেগুলোর ঐক্যবদ্ধ বা সমষ্টিগত রূপই হচ্ছে রাজনৈতিক সার্বভৌমত্ব। ডাইসির মতে, আইনবিদগণ যাকে সার্বভৌম বলে স্বীকার করেন তার পেছনে আরো এক প্রকার | সার্বভৌম রয়েছে যার নির্দেশেই আইনগত সার্বভৌমকে শ্রদ্ধা বা প্রণতি জানাতে হয়। গার্নারের মতে, আইনগত সার্বভৌমত্বের পিছনে অন্য একটি শক্তি থাকে, আইন যাকে স্বীকৃতি দেয় না, খা অসংগঠিত, যা আইনসিদ্ধ আদেশরূপে রাষ্ট্রের ইচ্ছাকে প্রকাশ করতে অসমর্থ। তথাপি সেই শক্তির নির্দেশেই আইনগত | সার্বভৌমত্বকে কার্যক্ষেত্রে মাথা নত করতে হয় এবং রাষ্ট্রে তার ইচ্ছা শেষ পর্যন্ত বজায় থাকে। কাজেই, আইনসংগত সার্বভৌমত্বকে নিয়ন্ত্রণকারী শক্তি বা প্রভাবকে রাজনৈতিক সার্বভৌম বলা হয়। ধর্মীয় ও নৈতিক অনুশাসন, জনমত গঠনকারী বিভিন্ন প্রভাব এবং নির্বাচকমণ্ডলীকে যুক্তভাবে রাজনৈতিক সার্বভৌম বলা যেতে পারে। কেননা জনমত ও নির্বাচকমণ্ডলীকে উপেক্ষা করে কোনো আইনগত সার্বভৌমই ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারে না বা টিকে থাকা সম্ভব নয়।

সার্বিক আলোচনায় আইনগত সার্বভৌমত্বকে বুঝিয়েছেন আইন প্রণয়নকারী চূড়ান্ত কর্তৃপক্ষকে। অপরদিকে, আইনগত সার্বভৌমত্বকে নিয়ন্ত্রণকারী শক্তি বা প্রভাবকে রাজনৈতিক সার্বভৌম বলা হয়ে থাকে। উপর্যুক্ত দুটি সার্বভৌমত্বের দিকের মধ্যে একটিকেও উপেক্ষা করা যাবে না। কারণ এতে রাষ্ট্রের অস্তিত্ব বিদ্যমান রয়েছে।


Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url