ব্যর্থ রাষ্ট্র কাকে বলে? ব্যর্থ রাষ্ট্রের বৈশিষ্ট্য কি কি?
ব্যর্থ রাষ্ট্র
ব্যর্থ রাষ্ট্র কাকে বলে?
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিজের স্বার্থে স্নায়ুযুদ্ধ উত্তরকালে 'ব্যর্থ রাষ্ট্র' ধারণাটির জন্ম দেয়। ব্যর্থ রাষ্ট্রকে সংজ্ঞায়িত করলে বলা যায়, ব্যর্থ রাষ্ট্র হচ্ছে এমন এক ধরনের রাষ্ট্র যার উত্তর ঔপনিবেশিক সময়ে অর্থনৈতিক সাহায্য, ত্রাণ ইত্যাদি পেয়েও নিজেদের অবস্থার উন্নতি করতে পারেনি। এছাড়াও জিডিপি, জীবনযাত্রার মান ও সামাজিক মর্যাদারও পরিবর্তন করত পারেনি এমন অবস্থা। রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার মধ্যে যাদের বসবাস, কোনো পরিবর্তনের সম্ভাবনা ছাড়াই দিনের পর দিন চলছে। মানবাধিকার, গণতন্ত্র ইত্যাদি পাশ্চাত্য 'ভ্যালু' বা 'মূল্য'। এসব দেশে বিলুপ্ত বলা যায় তারা হলো সর্বাত্মকভাবে ব্যর্থ একটি দেশ। এ ধরনের দেশকে বলা হচ্ছে 'ব্যর্থ রাষ্ট্র বা Failing State'
ব্যর্থ রাষ্ট্রের ধারণাটির জন্মদাতা আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র অনুমান করতে পারল যে, ব্যর্থ রাষ্ট্রগুলো হচ্ছে সন্ত্রাসবাদের আস্তানা। যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক রাষ্ট্রপতি জর্জ বুশ ঘোষণা দিলেন 'Axis of Evil' রাষ্ট্রসমূহের যারা যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় স্বার্থের প্রতি হুমকি। এর ধারাবাহিকতায় আসে ক্ষয়িষ্ণু শাসকদের চালিত 'ব্যর্থ রাষ্ট্র' ধারণা ও এই ধারণাগুলো তৈরি করে 'Preemption' মূলক যুদ্ধকে আমেরিকা একমাত্র বিকল্প হিসেবে দেখালো। পশ্চিমা কট্টরপন্থিগণ এভাবেই ব্যর্থ রাষ্ট্রসমূহকে সন্ত্রাসের অভয়ারণ্য বলে যুক্তি প্রয়োগ করে থাকেন। এই রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে আছে সিরিয়া, ইরাক, সোমালিয়া, নাইজেরিয়াসহ মূলত মধ্যপ্রাচ্য, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, আফ্রিকা এবং মধ্য এশিয়ার কতিপয় দেশ।
উপরিউক্ত আলোচনার পর বলা যায়, যুদ্ধকবলিত দেশগুলোতে যুদ্ধের জন্য মানুষের সকল ধরনের অধিকার হতে বিচ্ছিন্ন হলে তখন তাকে ব্যর্থ রাষ্ট্র বলা হয়ে থাকে। এছাড়াও যুক্তরাষ্ট্র এসব রাষ্ট্রকে সন্ত্রাসবাদের অভয়ারণ্য বলে ব্যর্থ রাষ্ট্র বলে চিহ্নিত করেন।
ব্যর্থ রাষ্ট্রের বৈশিষ্ট্য:
উন্নত বিশ্বের নেতারা তৃতীয় বিশ্বকে যেসব কারণে ব্যর্থ রাষ্ট্রের তকমা দেন সেগুলো হলো, যে দেশগুলো বৈদেশিক সাহায্য পাবার পরও…
১. অর্থনৈতিক চেহারা পাল্টাতে পারেনি।
২. শিক্ষা ব্যবস্থায় পরিবর্তন আসেনি। কোনো কোনো দেশে শিক্ষা ব্যবস্থা যথেষ্ঠ হলেও শিক্ষার মান যথেষ্ঠ উন্নত নয়।
৩. রাজনৈতিক অস্থিতিশীল।
৪. মানবাধিকার, গণতান্ত্রিক চর্চার অভাব।
৫. দুর্বল শাসন ব্যবস্থা।
৬. মূল্যবোধের অবক্ষয়।
৭. শাসন ব্যবস্থায় সামরিক শক্তির প্রভাব।
৮. শাসক ও শাসিতের মধ্যে দূরত্ব।
৯. বিদেশি শাসনে নিজস্ব সংস্কৃতির বিপর্যয়।
১০. আমলাদের কর্তৃত্ব।
১১. জনমতের গুরুত্বহীনতা।
১২. ঋণ গ্রহণের প্রবণতা।
১৩. নিজেদের GDP বাড়াতে না পারা।
১৪. জীবনযাত্রার মান ও সামাজিক মর্যাদা বাড়াতে না পারা।
১৫. কোনো পরিবর্তনের সম্ভাবনা ছাড়াই দিনের পর দিন পার করা।
ব্যর্থ রাষ্ট্রের উদাহরণ: জিম্বাবুয়ে, আফগানিস্তান, চাঁদ, সুদান, মধ্য আফ্রিকা প্রজাতন্ত্র, সিরিয়া, দক্ষিণ সুদান, কঙ্গো, সোমালিয়া ও ইয়েমেন।