সার্বভৌমত্ব সম্পর্কে নব্য ধারণা কী?

রাষ্ট্র গঠনের অপরিহার্য উপাদানের মধ্যে সার্বভৌমত্ব অন্যতম। তাই সার্বভৌমত্বের গুরুত্ব অপরিসীম। পঞ্চদশ শতাব্দীর শেষ দিকে সার্বভৌমত্ব ধারণা উৎপত্তি হলেও এ পর্যন্ত সার্বভৌমত্বের ব্যাপক বিকাশ ও ব্যাপ্তি ঘটেছে। এতে সার্বভৌমত্ব সম্পর্কে নব্য ধারণার উৎপত্তি হচ্ছে। নিম্নে সার্বভৌমত্ব সম্পর্কে নব্য ধারণার আলোচনা করা হলো :

১. সার্বভৌমত্ব আন্তঃনির্ভরশীল ও সহযোগিতাপূর্ণ : বর্তমানে আন্তর্জাতিক ব্যবস্থায় কোনো রাষ্ট্র এককভাবে থাকতে পারে না। তারা কোনোভাবে অন্য রাষ্ট্রের উপর নির্ভরশীল। যেটা প্রথাগত ধারণাকে ভ্রান্ত প্রমাণিত করেছে যে, সার্বভৌমত্ব চরম ও একক ক্ষমতা। রাষ্ট্রসমূহের মধ্যে আন্তঃনির্ভরশীল ও সহযোগিতা দিন দিন বেড়েই চলেছে। যেমন- অর্থনীতি, বাণিজ্য ইত্যাদি।

২. আন্তর্জাতিক মানবাধিকার : জাতিসংঘের অন্যতম প্রধান কাজ হচ্ছে বৈশ্বিক মানবাধিকারের উন্নতি করা। এজন্য জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে ১৯৪৮ সালে “সার্বজনীন মানবাধিকারের ঘোষণা" (Universal Declaration of Human rights)। এ সময় জাতিসংঘভুক্ত সদস্য দেশগুলোর মধ্যে এ সংক্রান্ত বহুপাক্ষিক চুক্তি সম্পাদিত হয়। কেউ এসব চুক্তি লঙ্ঘন করলে তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে।

৩. সন্ত্রাসবাদ রুখতে: বিশ্বের অন্যতম শক্তিধর দেশ যুক্তরাষ্ট্র। ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর সন্ত্রাসী আক্রমণে যুক্তরাষ্ট্র মারাত্মকভাবে ক্ষতির শিকার হয়, যেটাকে বলা হয় ৯/১১ ঘটনা এর ফলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিরাপত্তার স্বার্থে 'বিশ্বব্যাপী সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ' (Global war on terror) ঘোষণা করে। যেখানে যুক্তরাষ্ট্র সন্ত্রাসী কার্যকলাপ দেখবে সেখানে তারা আক্রমণ করে তা দমন করবে। যেমনটা তারা আফগানিস্তান ও ইরাকে করেছে। এ দুটি দেশের সার্বভৌমত্বের প্রতি যুক্তরাষ্ট্র কোনো নিয়ম মানেনি ।

৪. জাতিসংঘ ও সার্বভৌমত্ব : জাতিসংঘের অন্তর্ভুক্ত সকল সদস্য দেশ সমান নয়। কিন্তু রাষ্ট্রগুলো একই আইনের দ্বারা আবদ্ধ। যদি কোনো সদস্য রাষ্ট্র অন্য কোনো সদস্য রাষ্ট্র কর্তৃক হুমকির সম্মুখীন হয়, তখন সমষ্টিগত নিরাপত্তা দ্বারা তাকে সুরক্ষিত করা হয় অর্থাৎ একযোগে মিল হয়ে শুধু রাষ্ট্রকে পরাস্ত করা। যার জন্য সার্বভৌমত্বের ধারণা পরিবর্তন হচ্ছে।

৫. সার্বভৌমত্ব হচ্ছে সংরক্ষণের দায়িত্ব : সার্বভৌমত্বকে বর্তমানে বলা হয় দায়িত্ব সংরক্ষণ। কোনো একটি রাষ্ট্রের দায়িত্ব হলো জনগণকে সকল প্রকার আক্রমণ থেকে রক্ষা করা। যার জন্য ২০০০ সালে কানাডা প্রতিষ্ঠা করে হস্তক্ষেপের উপর স্বাধীন আন্তর্জাতিক কমিশন এবং রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব যার উদ্দেশ্য হলো পর্যবেক্ষণ করা যে, রাষ্ট্র তার নাগরিকদের সবরকম নিরাপত্তা দিতে পারছে কি না। কল্যাণকর কাজ করতে পারছে কি না। কারণ তারা জাতিসংঘের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নিকট দায়বদ্ধ।

পরিশেষে বলা যায় যে, রাষ্ট্র গঠনের অন্যান্য উপাদান থাকলেও সার্বভৌমত্ব না থাকলে রাষ্ট্র হয় না। যদিও সময়ের সাথে সাথে সার্বভৌমত্বের ধারণায় পরিবর্তন এসেছে। সার্বভৌমত্ব রাষ্ট্রের চরম ও একক ক্ষমতা, যার উপর কেউ কর্তৃত্ব করতে পারে না। কিন্তু আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে দেখা যায়, সার্বভৌমত্বের ধারণার কোনো অস্তিত্ব নেই। সাম্প্রতিক দেখা যাচ্ছে, এক রাষ্ট্র অপর রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে অনায়াসেই হস্তক্ষেপ করছে, আক্রমণ চালাচ্ছে, যার জন্য সার্বভৌমত্বের অখণ্ডতা বিলুপ্ত হচ্ছে।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url