ভূ রাজনীতি ও রাজনৈতিক ভূগোলের পার্থক্য

ভূ-রাজনীতি ও রাজনৈতিক ভূগোলের মধ্যে পার্থক্য

ভৌগোলিক উপাদানকে কেন্দ্র করে যে কোনো রাষ্ট্রের জাতীয় স্বার্থ আদায়ের ক্ষেত্রে ভূরাজনীতি হলো একটি অত্যন্ত গুরুত্ববহ পঠিত বিষয় বা শাস্ত্র। ভূগোলকে ব্যাখ্যা করার জন্য রাজনৈতিক ভূগোল রাজনৈতিক নীতি পদ্ধতি অনুসারণ করে। ভূরাজনীতি ও রাজনীতিক ভূগোলের আলোচনায় দেশের অভ্যন্তরের ভৌগোলিক শক্তি ও দুর্বলতার নানা বিষয়াবলি নিয়ে নানা রকমের মতবাদ লক্ষ্য করা যায়। 


তবে ভূরাজনীতি ও রাজনীতিক ভূগোলের মতো মধ্যে বেশ কিছু পার্থক্য বিদ্যমান। বিশিষ্ট ভূগোলবিদ ও গবেষক কিয়েলেন ভূরাজনীতি ও রাজনীতি ভূগোলের মাঝে পার্থক্য নির্ণয় করেন। ভূরাজনীতি ও রাজনৈতিক ভূগোলের বিদ্যামান পার্থক্য নিচে আলোচনা করা হলো:

আলোচ্য বিষয়ের ক্ষেত্রে পার্থক্য: রাজনৈতিক প্রপঞ্চসমূহকে কেন্দ্র করে ভূরাজনীতি বিষয় আলোচনা হয় এবং এগুলোর ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করা হয় রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে।

অন্যদিকে, ভৌগোলিক প্রপঞ্চসমূহকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক ভূগোলের আলোচনা হয়। এসব প্রপঞ্চসমূহকে রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে ব্যাখ্যা করে রাজনৈতিক ভূগোল । আবার রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে ভৌগোলিক প্রপঞ্চগুলোর বিচারবিশ্লেষণ করা হয়

ধরনের ক্ষেত্রের পার্থক্য: ভূরাজনীতি বাস্তবিক প্রয়োগ করার বিষয় যেখানে উপদেশ বা নির্দেশনাও থাকে। 

অন্যদিকে, রাজনৈতিক ভূগোলে অনেক বর্ণনামূলক বিষয় এবং ক্ষেত্র বিশেষে মনো ঐতিহাসিক বর্ণনা ও এর অধিভুক্ত হয়।

কর্মক্ষেত্রে পার্থক্য: রাষ্ট্রের গঠন ও সরকারের গৃহীত নীতিমালা নিয়ে ভূরাজনীতি আলোচনা করে। রাষ্ট্রের বিভিন্ন সম্পদ ব্যবহার করে নিজেদের সক্ষমতা বৃদ্ধি করে বিশ্বের প্রভাবশালী ও শক্তিশালী রাষ্ট্র হিসেবে কিভাবে নিজ রাষ্ট্রকে অধিষ্ঠিত করা যায়। সেসব ব্যাপারে ভূরাজনীতি বিশ্লেষণ করে থাকে। রাষ্ট্রের বাস্তব ও প্রায়োগিক নীতি সংক্রান্ত বিষয় এবং ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক কার্যাবলি নিয়ে ভূরাজনীতিক কার্যাবলি নিয়ে ভূরাজনীতি আলোচনা করে।

অপরদিকে ছিটমহল, অপদখলীয় ভূমি, সীমান্ত সমস্যা এবং অন্যান্য অনেক সমস্যার বিবরণ রাজনৈতিক ভূগোল তুলে ধরে। ভৌগোলিকভাবে প্রতিকূল অবস্থানের কারণে একটি রাষ্ট্রকে প্রায়সই বৈদেশিক হুমকি মোকাবিলা করতে হয় এবং প্রতিবেশী দেশের সাথে দ্বন্দ্বের সূত্রপাত হয়।

অন্তর্নিহিত এলাকার ক্ষেত্রে পার্থক্য: যেসব রাষ্ট্রে প্রাকৃতিক সম্পদ বেশি এবং গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে এসব রাষ্ট্রের ভূরাজনীতির গুরুত্ব উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পায়। 

কিন্তু রাজনৈতিক ভূগোল ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করে বিশ্বের ক্ষমতাধর রাষ্ট্রের উপনিবেশবাদীও আগ্রাসী মনোভাবের দিক থেকে।

প্রকৃতির ক্ষেত্রে পার্থক্য: ভূরাজনৈতিক অভ্যন্তর ও পার্শ্ববর্তী রাজনৈতিক বিচিত্রার দিকে দৃষ্টি দেয়, ভৌগোলিক দিক থেকে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করে এবং বিচিত্র ভৌগোলিক বিষয় নিয়ে মতামত প্রদান করে। 

অন্যদিকে, ভৌগোলিক বৈচিত্র্যের উপর গুরুত্ব দেয় রাজনৈতিক রাজনৈতিক ভূগোলের দৃষ্টিকোণ থেকে ব্যাখ্যা দেয়।

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, দুটি আলাদা পরিভাষা থাকলেও ভূরাজনীতি এবং রাজনৈতিক ভূগোলের মাঝে নিজস্ব স্বকীয়তা বিদ্যমান। যদি ভিন্ন ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে দুটি বিষয় তাদের কার্যাবলির ব্যাখ্যা দিয়ে থাকে তথাপি একথা বলা আবশ্যক যে রাজনৈতিক বিষয়ক ভূরাজনীতির সাথে জড়িত বিষয়াবলি নিয়ে তারা আলোচনা করে রাষ্ট্রকে পথ দেখায় সামনে এগিয়ে চলার। তাই উভয়টির ভূমিকা অত্যন্ত মূল্যবান যে কোনো রাষ্ট্রের জন্য।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url