আন্তর্জাতিক সম্পর্কে শক্তিসাম্য তত্ত্ব

আন্তর্জাতিক সম্পর্কে শক্তিসাম্য তত্ত্ব

ভূমিকা : শক্তিসাম্য তত্ত্ব থেকে আমরা যেকোনো নির্দিষ্ট সাম্যাবস্থা ও রাষ্ট্রীয় আচরণের মধ্যে সংযোগ সম্পর্কে ধারণা লাভ করি। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে দুটি রাষ্ট্রের মধ্যে শক্তির কটন কী ধরনের, তাকে স্বাধীন চলক এবং রাষ্ট্রীয় আচরণকে নির্ভরশীল চলক হিসেবে গণ্য করা হয়। নিচে এ শক্তিসাম্য তত্ত্ব সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।


শক্তিসাম্য তত্ত্বের ধারণা: শক্তিসাম্য তত্ত্বটি তিনটি পৃথক ধারণার উপর গড়ে উঠেছে। নিচে প্রকল্পসমূহ আলোচনা করা হলো : 

১. শক্তিসাম্য ও রাষ্ট্রীয় আচরণের সংযোগ সম্পর্কে বলে যে, যখন দুটি রাষ্ট্র বা মৈত্রীজোটের মধ্যে শক্তির সমতা থাকে তখন তাদের মধ্যে যুদ্ধের সম্ভাবনা বেশি থাকে। আবার শক্তির অসমতা থাকলে যুদ্ধের সম্ভাবনা কম থাকে। শক্তি সমান থাকলে দুটি রাষ্ট্রই জয়লাভের চেষ্টা করবে। আর শক্তির অসমতা থাকলে কম শক্তিপূর্ণ দেশ যুদ্ধের দিকে এগুবে না।

২. যদি উভয় পক্ষেরই শক্তি সমান থাকে তবে তাদের যেমন জয়ের সম্ভাবনা থাকে তেমনি পরাজয়ের সম্ভাবনাও থাকে। এক্ষেত্রে কোন প্রচ্ছন্ন আগ্রাসনকারী আক্রমণে জড়াবে না। কারণ এক্ষেত্রে উভয় পক্ষই ভাববে বিপক্ষেরও সমান শক্তি বিদ্যমান। এতে জন্মের সম্ভাবনা যেমন ৫০% তেমনি পরাজয়ের সম্ভাবনা ৫০%। দ্বিতীয় প্রকল্প অনুযায়ী, যখন দুটি রাষ্ট্রে সমান শক্তি নিয়ে পরস্পরের সম্মুখীন হয়, তখন শক্তির সমতাই তাদেরকে আগ্রাসনমূলক কার্যাবলি থেকে বিরত রাখবে।

৩. উপরে আলোচিত পরস্পর বিরোধী প্রকল্পের একটি বলে শক্তি সমতা দ্বন্দ্বের পথ প্রশস্ত করতে চায়, অন্যটি বলে শক্তির সমতা বৃহৎ আকারে দ্বন্দ্বকে নিবারণ করে। এ দ্বান্দ্বিকতামূলক পদ্ধতি ব্যবহার করে তৃতীয় প্রকল্পে উপনীত হওয়া যায় যে, যখন দুটি রাষ্ট্র সঠিক সমশক্তি বিশিষ্ট, তখন তাদের মধ্যে দ্বন্দ্বের সম্ভাবনা। কমে যায় এবং যদি তারা দ্বন্দ্বে লিপ্ত হয় তবে তা নিচু পর্যায়ে হয়।

উপসংহার: উপযুক্ত আলোচনা থেকে বলা যায়, শক্তিসাম্য তত্ত্ব থেকে একটি বিষয় পরিলক্ষিত হয় যে শক্তি সমান হলে যেমন দ্বন্দ্বের সম্ভাবনা থাকে তেমনি দ্বন্দ্বের সম্ভাবনা কমও থাকে। যদিও দ্বন্দ্ব হয় তবে তা কম হয়। আর শক্তির অসমতা দ্বন্দ্বের পথকে সংকোচন করে।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url