ইউটোপীয় সমাজতন্ত্র কি? কাল্পনিক সমাজতন্ত্র কাকে বলে? কাল্পনিক সমাজতন্ত্র সম্পর্কে ব্যাখ্যা করো। কাল্পনিক সমাজতন্ত্রবাদ কি?

প্রিয় পাঠক, আসসালামু আলাইকুম। আজকে আমরা এই আর্টিকেলের মাধ্যমে যে প্রশ্নটির উত্তর জানবো এই প্রশ্ন কি কিভাবে কিভাবে হতে পারে চলুন তা দেখে নেই, কাল্পনিক সমাজতন্ত্রবাদ কি? কাল্পনিক সমাজতন্ত্রের সংজ্ঞা দাও। কাল্পনিক সমাজতন্ত্র কি? কাল্পনিক সমাজতন্ত্র বলতে কি বোঝায়? কাল্পনিক সমাজতন্ত্র সম্পর্কে লিখ। কাল্পনিক সমাজতন্ত্র আলোচনা কর। চলুন এবার মূল আলোচনায় চলে যাই,


কাল্পনিক সমাজতন্ত্রবাদ

বর্তমান বিশ্বরাজনীতিতে যে কয়টি শাসনব্যবস্থা বিদ্যমান তার মধ্যে একটি সমাজতন্ত্র। অষ্টাদশ শতাব্দীতে সমাজতন্ত্রের উদ্ভব ঘটে। জার্মান দার্শনিক কার্ল মার্কস সমাজতন্ত্রের প্রবক্তা। তিনি সমাজের শ্রেণি বৈষম্য লক্ষ্য করে এ তত্ত্ব প্রদান করেন। সমাজতন্ত্র ছিল মূলত পুঁজিবাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদস্বরূপ মতবাদ। যা কাল্পনিক সমাজতন্ত্রের হাত ধরে সৃষ্টি হয়।

কাল্পনিক সমাজতন্ত্র কি? 

পৃথিবীর শাসনব্যবস্থায় সমাজতন্ত্রের একটি অংশ হিসেবে কাল্পনিক সমাজতন্ত্র বিশেষ স্থান অধিকার করে। অষ্টাদশ শতাব্দীতে কাল্পনিক সমাজতন্ত্রের উদ্ভব ও বিকাশ ঘটলেও এর ভিত্তি মূল অনেক আগেই রচিত হয়। বিভিন্ন লেখক কাল্পনিক সমাজতন্ত্রের প্রসারের ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছিল। যেসব দার্শনিক কাল্পনিক সমাজতন্ত্রকে বিশ্ববাসীর কাছে তুলে ধরে তারা হলেন সেন্ট সাইমন, রবার্ট ওয়েন, চার্লস ফুরিয়ের প্রমুখ। 

কাল্পনিক সমাজতন্ত্র বলতে কল্পনা সর্বস্ব একটি রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিকল্পনাকে বুঝায়। রবার্ট ক্লাক বলেন, কাল্পনিক সমাজতন্ত্র হলো এমন একটি আদর্শ যার বাস্তব পরিস্থিতির সাথে কোনো মিল নেই। অর্থাৎ যাদের চিন্তাচেতনা ও দৃষ্টিভঙ্গির মধ্যে কল্পনার প্রবণতা সবচেয়ে বেশি তাদেরকে কাল্পনিক সমাজতন্ত্রী বলে। এই ধারণা প্রথম সূত্রপাত ঘটে ফ্রান্স ও ইংল্যান্ডে। মেন্ট সাইমন, রবার্ট ওয়েন, চা ফুরিয়ের, জোসেফ প্রধু প্রমুখ দার্শনিক সমাজ কাঠামো সম্পর্কে যে তত্ত্ব প্রদান করেন তা বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রের ভিত্তি রচিত হয়। কিন্তু তাদের প্রণীত এরূপ সমাজতন্ত্র কাল্পনিক সমাজতন্ত্রকে বিকশিত করে। 

কেননা সেখানে সামাজিক বৈষম্যের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা হয়েছে। কাল্পনিক সমাজতন্ত্রের মূল কথা ছিল কোনো প্রকার দ্বন্দ্ব-সংঘাত থাকবে না। তাদের চিন্তাচেতনা কার্ল মার্কসের চেতনার উপর প্রতিষ্ঠিত না হলেও প্রাচীন যুগীয় ও মধ্যযুগীয় রাষ্ট্রচিন্তা থেকে পৃথক ছিল। তবে কার্ল মার্কস তাদের ধারণাগুলোকে সমাজতান্ত্রিক ধারণা বলে উল্লেখ করেন। বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রের সাথে অমিল থাকায় কার্ল মার্কস একে কাল্পনিক সমাজতন্ত্র বলে অভিহিত করেছেন।

কাল্পনিক সমাজতন্ত্র পুঁজিবাদের খারাপ দিকগুলোর উপর আক্রমণ করে কিন্তু পুঁজিবাদী ব্যবস্থাকে নয়। কাল্পনিক সমাজতন্ত্র ব্যক্তিগত সম্পত্তি উচ্ছেদের কোনো কথা বলেনি। যদিও ব্যক্তিগত সম্পত্তি সকল অনিষ্টের মূল। কাল্পনিক সমাজতন্ত্রে শ্রমভিত্তিক সমাজের কথা কল্পনা করা হয়েছে। এখানে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে মুনাফা প্রদানের কথা বলা হয়েছে। শ্রমের উপর ভিত্তি করে প্রাপ্ত মুনাফা নির্ধারিত হবে। কাল্পনিক সমাজতন্ত্রে শ্রেণি সংগ্রাম অনুপস্থিত। কেননা এখানে বিরোধের কোনো অবস্থান নেই। সংস্কার ও বিবর্তনের পথ ধরে শান্তিপূর্ণ উপায়ে সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হবে। 

এখানে শ্রমিক শ্রেণির কোনো নেতৃত্বের কথা বলা হয়নি। বরং শিল্পপতিদের উপর নেতৃত্বের ভার অর্পণ করা হয়েছে। কাল্পনিক সমাজতন্ত্রে রাষ্ট্র একটি অপরিহার্য সংস্থা। সকলে রাষ্ট্রের কল্যাণে নিয়োজিত থাকবে। এখানে ধর্মকে সমাজতন্ত্রের সহায়ক হিসেবে মনে করা হয়। অর্থাৎ কাল্পনিক সমাজতন্ত্রীরা একটি দারিদ্র্যমুক্ত ও বৈষম্যমুক্ত পৃথিবী গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন কিন্তু কোনো বাস্তবিক পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি। ফলে তাদের মতামত দীর্ঘস্থায়ী হয়নি।

উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনা থেকে বলা যায় যে, কাল্পনিক সমাজতন্ত্রীরা সমাজ ব্যবস্থা নিয়ে যে কল্পনা করেছিলেন তা সমাজের জন্য মঙ্গলজনক ছিল। কিন্তু তাদের কল্পনাকে তারা বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হননি। তাই তাদের আদর্শ কল্পনার জগতেই থেকে যায়। অধ্যাপক ওয়েবার বলেন, “তারা গোলাপের সৌন্দর্যের প্রতি বিশেষ নির্দেশ দিলেও গোলাপ গাছের জন্য কোনো ক্ষেত্র প্রস্তুত করেননি।"
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url