সমাজতন্ত্রের সাথে গণতন্ত্রের সাদৃশ্য বৈসাদৃশ্যগুলো আলোচনা কর।

প্রিয় পাঠক, আসসালামু আলাইকুম। আজকে আমরা এই অনুচ্ছেদের মাধ্যমে যে সকল প্রশ্নের উত্তর জানবো চলুন সেগুলো আগে দেখে নেই, "গণতন্ত্র ও সমাজতন্ত্রের সাদৃশ্যগুলো আলোচনা কর।" অথবা "গণতন্ত্র ও সমাজতন্ত্রের মিলগুলো আলোচনা কর।" অথবা "গণতন্ত্র ও সমাজতন্ত্রের সাদৃশ্যগুলো তুলে ধরো।" গণতন্ত্র ও সমাজতন্ত্রের বৈসাদৃশ্য গুলো লিখ। অথবা গণতন্ত্র ও সমাজতন্ত্রের মধ্যে অমিল কোথায়? অথবা গণতন্ত্র ও সমাজতন্ত্রের বৈসাদৃশ্য কি কি? এছাড়াও আমরা আরো জানবো, সমাজতন্ত্রের সাথে গণতন্ত্রের সাদৃশ্য বৈসাদৃশ্য গুলো আলোচনা কর। বা সমাজতন্ত্র ও গণতন্ত্রের মধ্যে মিল ও অমিল বর্ণনা কর। গণতন্ত্র ও সমাজতন্ত্রের মধ্যে সাদৃশ্য বৈসাদৃশ্য, সমাজতন্ত্র ও গণতন্ত্রের মধ্যে সাদৃশ্য সমুহ। সমাজতন্ত্র ও গণতন্ত্রের মধ্যে বৈসাদৃশ্য। সমাজতন্ত্র ও গণতন্ত্রের মধ্যে পার্থক্য কী? সমাজতন্ত্র ও গণতন্ত্রের মধ্যে তফাৎ কি? চলুন এখন আমরা মূল আলোচনায় চলে যাই।


সমাজতন্ত্র ও গণতন্ত্রের মধ্যে সাদৃশ্য বৈসাদৃশ্য 

গণতন্ত্র ও সমাজতন্ত্র দুটি স্বতন্ত্র রাজনৈতিক মতবাদ। এই রাজনৈতিক শাসনব্যবস্থায় সমাজ ও রাষ্ট্রের সাধারণের কল্যাণে নিয়োজিত। সমাজতন্ত্র ও গণতন্ত্রের মধ্যে মিল থাকলেও অমিলও রয়েছে শাসনব্যবস্থার ক্ষেত্রে।

সমাজতন্ত্র কাকে বলে : সমাজতন্ত্র হলো এমন একটি গণতান্ত্রিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা যা সর্বোচ্চ ন্যায়বিচার ও স্বাধীনতা প্রচার করে।

গণতন্ত্র কাকে বলে: গণতন্ত্র বলতে এমন একটি শাসনব্যবস্থাকে বোঝায় যেখানে নীতিনির্ধারণ বা সরকারি প্রতিনিধি নির্বাচনের ক্ষেত্রে প্রত্যেক নাগরিক বা সদস্যের সমান ভোটাধিকার থাকে।

সমাজতন্ত্র ও গণতন্ত্রের সাদৃশ্য: 

গণতন্ত্র ও সমাজতন্ত্রের মধ্যে পার্থক্য বিদ্যমান থাকলেও এদের মধ্যে অনেক মিল বা সাদৃশ্য রয়েছে। নিচে গণতন্ত্র ও সমাজতন্ত্রের মধ্যে সাদৃশ্য সমূহ আলোচনা করা হলো:

১. জনগণের সমমর্যাদা দানের ক্ষেত্রে : জনগণের সমমর্যাদা দানের ক্ষেত্রে ক্ষেত্রে গণতন্ত্র ও সমাজতন্ত্র উভয় শাসনব্যবস্থাই সর্বাত্মক চেষ্টা করে। জনগণের সমমর্যাদা বাড়িয়ে তুলতে দুটোই বিভিন্ন কার্যক্রম নেয়া হয়। এ দুই শাসনব্যবস্থা সকল মানুষকেই সমান চোখে দেখে। এই ধারণায় সচেষ্ট থাকে।

২. অর্থনৈতিক সাম্য : অর্থনীতির সাম্য প্রতিষ্ঠার জন্য গণতন্ত্র ও সমাজতন্ত্র উভয়ই কাজ করে। জনগণের অর্থনৈতিক ভিত্তিকে সাম্যের উপর প্রতিষ্ঠা করতে সচেষ্ট থাকে। শোষণ ও পুঁজিবাদকে সমর্থন করে না।

৩. অবিচ্ছেদ্য মতবাদ : গণতন্ত্র ও সমাজতন্ত্র দুইটি শাসনব্যবস্থায়ই জনগণের কল্যাণের কাজ করে তাদের পারস্পরিক মতবাদ একই। গণতন্ত্র হচ্ছে সমাজতন্ত্রের প্রাণশক্তি। গণতান্ত্রিক পরিবেশ ছাড়া সমাজতন্ত্র সম্ভব নয়। তাই এই দুই শাসনব্যবস্থা অবিচ্ছেদ্য।

৪. সম্পদের সুষম বণ্টন : সমাজতন্ত্র ও গণতন্ত্র উভয়ই সম্পদের সুষম বণ্টনের ব্যবস্থা রয়েছে, সকলের সম্পদের বণ্টনের ব্যবস্থা রয়েছে। এ শাসনব্যবস্থায় জনগণের শোষণের কথা নয় বরং নিঃস্ব শ্রেণির ভোগ করার সুযোগের কথা বলা হয়েছে।

৫. ব্যক্তি জীবনের কল্যাণ সাধন : সমাজতন্ত্র ও গণতন্ত্র উভয় শাসনব্যবস্থার লক্ষ্য হচ্ছে জনগণকে নিরাপত্তা দান ও সর্বাত্মক কল্যাণ সাধন। ব্যক্তি জীবনের স্বাভাবিক বিকাশের গণতন্ত্র ও সমাজতন্ত্র একই ধরনের মতবাদ পেশ করেছে।

৬. সামাজিক বৈষম্য দূরীকরণে : সমাজের কল্যাণের জন্য গণতন্ত্র ও সমাজতন্ত্র দুই শাসনব্যবস্থাই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সমাজতন্ত্রে মানুষে মানুষে পার্থক্য দূর অর্থাৎ সামাজিক বৈষম্য আর গণতন্ত্রে অন্যায় অবিচার দূর করে সুখী সমৃদ্ধ সমাজ। গড়ে তুলতে সদা সচেষ্ট থাকে।

সমাজতন্ত্র ও গণতন্ত্রের বৈসাদৃশ্য : 

গণতন্ত্র এবং সমাজতন্ত্রের মধ্যে যেমন অনেক বিষয়ে মিল রয়েছে তেমনি অনেক বিষয়ে আবার বৈসাদৃশ্য বা অমিল বিদ্যমান রয়েছে। নিচে এ সম্পর্কে আলোচিত হলো :

১. সমাজিকীকরণের পার্থক্য : সমাজতন্ত্র ও গণতন্ত্র দুই শাসনব্যবস্থার মধ্যে সামাজিকীকরণে পার্থক্য লক্ষণীয়। গণতন্ত্রে সামাজিকীকায়নের মধ্য দিয়েই সকল নাগরিকের অধিকার প্রতিষ্ঠা করা হয় অন্যদিকে সমাজতন্ত্রে সব কিছুই জাতীয়করণ করা হয়। ব্যক্তি গণ সম্পত্তির কোন স্থান নেই সমাজতন্ত্রে এখানেই বৈসাদৃশ্য সূচিত হয় ।

২. বিপ্লব সংঘটনে পার্থক্য : গণতন্ত্র ও সমাজতন্ত্র বিপ্লব সংঘটনের দিক থেকে পৃথক কারণ সমাজতন্ত্রের মূলমন্ত্র হলো বিপ্লব। এ ব্যবস্থায় কেবল বিপ্লবকেই পুঁজি করে এক অর্থনৈতিক ব্যবস্থার প্রতিষ্ঠা করা হয় যেখানে শোষণমুক্ত সমাজ গঠনে সচেষ্ট। থাকে সবাই। অন্যদিকে গণতন্ত্রে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়ে থাকে বিপ্লব না হয়।

৩. সম্পদের মালিকানায় পার্থক্য : সম্পদের মালিকানার ক্ষেত্রে এই দুই সমাজ ব্যবস্থায় পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়। সমাজতন্ত্রে কোন ব্যক্তিগত সম্পত্তির স্থান নেই সকল সম্পত্তির মালিক হচ্ছে রাষ্ট্র। সমাজতন্ত্রে কোন সম্পদ কুক্ষিগত করার প্রয়াস নেই। কিন্তু গণতন্ত্রে জনগণ তার ইচ্ছামতো কর দিয়ে যত পরিমাণ সম্পদ অর্জন করতে পারে তাতে রাষ্ট্রীয় বাধা দেয়না।

৪. রাষ্ট্রীয় কাজে অংশগ্রহণ : গণতন্ত্রে জনগণ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে রাষ্ট্রীয় কাজে অংশগ্রহণ করতে পারে। রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্তে নিজের মতামত প্রকাশ করতে পারে। অন্যদিকে সমাজতন্ত্রে জনগণ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মতো ততটা রাষ্ট্রীয় কাজে অংশ নিতে পারে না। সমাজতন্ত্রে গণতন্ত্রের মতো সরকারের বিরোধিতা করার সুযোগও পায় না।

৫. জাতীয়তাবাদী দৃষ্টিভঙ্গি : জাতীয়তাবাদের দিক থেকে সমাজতন্ত্র ও গণতন্ত্রের মধ্যে পার্থক্য লক্ষণীয়। সমাজতন্ত্রে সর্বহারা শ্রেণির আন্তর্জাতিকভাবে মতামতকে প্রাধান্য দেয় কিন্তু গণতন্ত্রে জাতীয়তাবাদের চেতনাকে প্রাধ্যান্য দেয়। গণতন্ত্রে জাতীয় চেতনা দিকটি মাথায় রেখে পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়।

৬. শ্রেণিসংগ্রামের ক্ষেত্রে : গণতন্ত্রে শ্রেণির মধ্যে কোন সংঘাত মেনে নেয়া হয় না। শাসকরা বিভিন্ন শ্রেণির মধ্যে সংঘাতকে দূর করে অন্যদিকে সমাজতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় সমাজতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠা করেছেন শ্রেণির উপর। এখানেই দুই = শাসনব্যবস্থার মধ্যে পার্থক্য।

উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায় যে, গণতন্ত্র ও সমাজতন্ত্র যেহেতু দুটি স্বতন্ত্র রাজনৈতিক শাসনব্যবস্থা সুতরাং দুটোর মধ্যে ভিন্ন মতাদর্শ অর্থাৎ বৈসাদৃশ্য লক্ষিত হবেই। সমাজতন্ত্র ও গণতন্ত্র যদিও জনগণের কল্যাণে নিয়োজিত এ দুটি কল্যাণময়ী শাসনব্যবস্থা তবুও দুটোর মধ্যে বৈসাদৃশ্য । পরিলক্ষিত হয়।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url