ভূ রাজনৈতিক তত্ত্ব কাকে বলে?

ভূমিকা : ভূ-রাজনীতি তত্ত্বটি আন্তর্জাতিক সম্পর্কের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। প্রকৃতপক্ষে বর্তমান বিশ্বের সম্পূর্ণ আন্তর্জাতিক সম্পর্কই ভূরাজনীতির উপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠেছে বললে অচুক্তি হবে না মনে হয়। অর্থাৎ, ভূ-রাজনীতিই আন্তর্জাতিক সম্পর্কের মূল বিষয়। সাধারণভাবে বলা যায়, ভূমিকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক উপাদান ও প্রতিষ্ঠানের কৌশলগত প্রয়োগই হলো ভূ-রাজনীতি। বিশেষত ২য় বিশ্বযুদ্ধের মাধ্যমেই ভূ-রাজনৈতিক তত্ত্ব একটি যুক্তি হিসেবে কাজে লাগে।


ভূরাজনৈতিক তত্ত্ব কি? (Theory of Geo-politics)

ইংরেজি Geo-politics শব্দের বাংলা প্রতিশব্দ হচ্ছে ভূ-রাজনীতি বা ভৌগোলিক রাজনীতি। এটি একটি রাজনৈতিক প্রপঞ্চ যা বিশ শতকের প্রথমদিকে বর্তমান বিশ্বের একটি গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক পরিভাষা হিসেবে উৎপত্তি লাভ করে। সুইজারল্যান্ডের রাষ্ট্রবিজ্ঞানী রুডলফ কিয়েলেন ১৯০০ সালে এই তত্ত্বের প্রবর্তন করেন এবং পরবর্তীতে ফ্রেডরিক রোজেল (জার্মান), স্যার হ্যালফোর্ড ম্যাকিন্ডার (ব্রিটিশ), কার্ল হশোফার (জার্মান) প্রমুখ এই তত্ত্বের বিকাশসাধন করেন। 

সর্বপ্রথম দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নাৎসি জার্মানের রাষ্ট্রনায়ক হিটলার এই তত্ত্বকেই তার আগ্রাসনের যুক্তি হিসাবে কাজে লাগান। আর এর মাধ্যমে ভূ-রাজনীতি সাম্প্রতিককালের বহু আলোচিত বিষয়ে পরিণত হয়। সাধারণভাবে, কোন রাষ্ট্রের ভৌগোলিক চাহিদা যথা, তার সীমান্তের নিরাপত্তা, বহির্বিশ্বের দিকে বেরুবার জন্য জলপথের ওপর নিয়ন্ত্রণ, প্রাকৃতিক ও অর্থনৈতিকভাবে বিচ্ছিন্নযোগ্য নয় এমন এলাকাকে স্বীয় রাষ্ট্রের সঙ্গে অন্তর্ভুক্তিকরণ সামরিক কৌশল অর্থাৎ, Military Hrategy-র বিবেচনায় গুরুত্বপূর্ণ ওপর স্বীয় কর্তৃত্ব স্থাপন ইত্যাদির উপর ভিত্তি করে যে-রাজনীতি, বিশেষত পররাষ্ট্রীয় রাজনীতি গড়ে ওঠে, সেটাকেই বলে ভৌগোলিক রাজনীতি বা Geo-Politics.

অন্যভাবে বলা চলে, আন্তর্জাতিক রাজনীতি এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্কের গুরুত্বপূর্ণ আলোচনাই ভূ-রাজনীতি। ভূ রাজনীতিকে কেন্দ্র করে অনেক আলোচনা-পর্যালোচনা ও গবেষণা হয়েছে। বিভিন্ন বিশেষজ্ঞগণ ভূ-রাজনৈতিক তত্ত্ব প্রদান করেছেন । বিভিন্ন বিশেষজ্ঞগণ তাদের গবেষণার মাধ্যমে ভূ-রাজনীতির সংজ্ঞা, গতি-প্রকৃতি, শক্তি, প্রভাব, বৈশিষ্ট্য ইত্যাদি ফুটিয়ে তোলার প্রয়াস চালিয়েছেন। ভূ-রাজনীতি সম্পর্কে তাদের গবেষণালব্ধ ফলকেই বলা হয় ভূ-রাজনৈতিক তত্ত্ব। অর্থাৎ বিভিন্ন সময়ে বিশেষজ্ঞদের গবেষণার মাধ্যমে ভূ-রাজনীতি সম্পর্কে প্রতিষ্ঠিত মতবাদকেই ভূ-রাজনৈতিক তত্ত্ব বলে ।

অতএব, ভূগোল, রাজনীতি, রাষ্ট্র, রাষ্ট্রীয় সম্পর্ক ইত্যাদি বিষয়ে পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে গবেষণার মাধ্যমে যেসব তত্ত্ব গবেষকরা প্রদান করেছেন তাই ভূ-রাজনৈতিক তত্ত্ব।

উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে পরিশেষে বলা যায় যে, ভূ-রাজনীতি একটি রাজনৈতিক এবং আন্তর্জাতিক প্রপঞ্চ। বিশ শতকের প্রথমার্ধে উৎপত্তি লাভ করা এই রাজনৈতিক পরিভাষাটি সাম্প্রতিকালের সর্বাপেক্ষা আলোচিত বিষয়ে পরিণত হয়েছে। কেননা বর্তমানকালের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক অধ্যয়নই দাঁড়িয়ে আছে এ ভূ-রাজনীতির উপর ভিত্তি করে। সাধারণভাবে বিভিন্ন দেশের ভৌগোলিক চাহিদাকে কেন্দ্র করে যেসব পররাষ্ট্রনীতি গড়ে ওঠে, সেসব নিয়ে বিজ্ঞানভিত্তিক গবেষণালব্ধ ফলই হচ্ছে ভূ-রাজনৈতিক তত্ত্ব।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url