আন্তর্জাতিকতাবাদ বলতে কী বোঝায়
ভূমিকা : বিংশ শতাব্দীর ইতিহাসে যে কয়টি মতবাদ গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে তার মধ্যে অন্যতম হলো আন্তর্জাতিকতাবাদ। এটি জাতীয়তাবাদের পরবর্তী ধাপ। উগ্র জাতীয়তাবাদের ধ্বংসলীলার উপর প্রতিষ্ঠিত হয় আন্তর্জাতিকতাবাদ। বিগত শতাব্দীর দুটি বিশ্বযুদ্ধ বিশ্ববাসীকে আতঙ্কিত করে তুলে। যার ফলে মানুষ জাতীয়তাবাদের পরিবর্তে আন্তর্জাতিকতাবাদে উদ্বুদ্ধ হচ্ছে।
আন্তর্জাতিকতাবাদ কি : আন্তর্জাতিকতাবাদ একটি মানসিক ধারণা এবং একটি আত্মিক অনুভূতি। যা একজন ব্যক্তির মনে আন্তর্জাতিক ধারণার বিকাশ ঘটায়। ফলে তার দৃষ্টিভঙ্গি সংকীর্ণতার বেড়াজাল ভেদ করে প্রসারিত হয়। যা তাকে বিশ্বমানের নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলে।
আন্তর্জাতিকতাবাদ বলতে এমন একটি রাজনৈতিক দর্শনকে বুঝায় যা রাষ্ট্রের সংহতি, বিভিন্ন জাতির মধ্যে পারস্পরিক ঐক্য, বিশ্বভ্রাতৃত্ব এবং বিশ্বশান্তির পথকে ত্বরান্বিত করে। ফলে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক গড়ে উঠে।
প্রামাণ্য সংজ্ঞা : নিম্নে আন্তর্জাতিকতাবাদ সম্পর্কে বিভিন্ন দার্শনিকের মতাদর্শন তুলে ধরা হলো :
অধ্যাপক হ্যান্স কোহন বলেন, “আন্তর্জাতিকতাবাদ হলো এমন একটি ব্যবস্থা যেখানে বিশ্বের সকল জনগণ ঐক্য ও সংহতির মাধ্যমে জাতীয়তাবাদের ঊর্ধ্বে উঠে সকল জাতিকে একত্রিত করে।”
জিম্মান বলেন, “জাতীয় রাষ্ট্র ব্যবস্থাই আন্তর্জাতিকতার ভিত্তি।”
বার্ট্রান্ড রাসেল বলেন, “জাতির সীমানা এবং রাষ্ট্রের সীমানা প্রায় এক না হলে প্রকৃত আন্তর্জাতিকতা গড়ে উঠে না।” তিনি আরো বলেন, "Internationalism is the completion of nationalism."
অধ্যাপক গোল্ড স্মিথ বলেন, “আন্তর্জাতিকতাবাদ হলো এমন এক ধরনের অনুভূতি, যা ব্যক্তিকে কেবল তার নিজ রাষ্ট্রের সদস্য হিসেবেই নয়, বিশ্বের একজন নাগরিক হিসেবেই ভাবতে শেখায়।”
উপসংহার : আন্তর্জাতিকবাদ হলো এমন এক ধরনের মানসিক চেতনা যা মানুষকে বিশ্বমানের নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলে। জাতীয়তাবাদের ঊর্ধ্বে উঠে মানুষকে বিশ্বজনীন কল্যাণের কাজে নিয়োজিত করে। যা বিশ্বভ্রাতৃত্বের এক মেলবন্ধন সৃষ্টি করে।