নাম পরিবর্তন করলে কি আকিকা করতে হয়? আকিকা কেন করতে হয় ?

নাম পরিবর্তন করলে কি আকিকা করতে হয়?

যদি কোন ব্যক্তির প্রদত্ত নাম টি অসুন্দর বা অর্থহীন কোন নাম হয় সেই ক্ষেত্রে তার নাম পরিবর্তন করে সুন্দর এবং অর্থবহ ইসলামিক নাম রাখা সুন্নাহসম্মত কাজ। এক্ষেত্রে নাম পরিবর্তনের জন্য আলাদা করে আকিকা করার প্রয়োজন নেই। হযরত মুহাম্মদ (সা:) বিভিন্ন সময় নারী-পুরুষ উভয় সাহাবীদের নাম পরিবর্তন করে দিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি তাদের আকিকার নির্দেশ দিয়েছেন এরূপ কোন প্রমাণ নেই। হযরত আয়েশা (রা:) বলেন, "রাসুলুল্লাহ (সা.) মন্দ ও অসুন্দর নাম পরিবর্তন করে দিতেন।" (তিরমিজি শরিফ, হাদিস: ২৮৩৯)


ইসলামে সুন্দর নাম রাখার নির্দেশনা

ইসলামে সুস্পষ্টভাবে সুন্দর নাম রাখার বিধান রয়েছে। শেষ বিচারের দিন অর্থাৎ হাশরের ময়দানে আল্লাহ তা'আলা সকল সৃষ্টিকে তার নাম ধরে ডাকবেন। হাদীস শরীফে বলা হয়েছে," রাসূল সাঃ বলেন, হাশরের ময়দানে তোমাদেরকে ডাকা হবে তোমাদের এবং তোমাদের বাবার নাম নিয়ে। (হে অমুকের ছেলে অমুক) তাই তোমরা তোমাদের নিজেদের জন্য সুন্দর নাম রাখো।' (আবু দাউদ শরিফ, হাদিস: ৪৯৪৮)।”

আকিকা কেন করতে হয় ?

আমাদের সমাজ ব্যবস্থায় একটি কথা প্রচলন আছে যে, নাম পরিবর্তন করলে বা নাম বদলালে আকিকা দিতে হয়। এটি সম্পূর্ণ একটি ভুল ধারণা। একজন শিশু বা ব্যক্তি আল্লাহ তায়ালার রহমতে বিশেষ এই সদকার মাধ্যমে বিভিন্ন প্রকার বিপদ-আপদ থেকে নিরাপদে থাকে সেজন্যই ইসলামে আকিকার বিধান দেওয়া হয়েছে। নাম পরিবর্তনের জন্য নয়।

 আকিকা কখন দিতে হয় ?

সন্তান জন্মগ্রহণ করার সাত দিনের মধ্যে আকিকা করা উত্তম। আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সা:) তাঁর প্রিয় দুই দৌহিত্র হাসান এবং হুসাইন (রা.)-এর জন্মের ৭ম দিনে আকিকা করেছেন। হযরত মুহাম্মদ (সা:) এর স্ত্রী হযরত আয়েশা (রা.) বলেন যে, "আকিকা সপ্তম দিনে হওয়া উচিত। তা সম্ভব না হলে ১৪তম দিনে, তাও সম্ভব না হলে ২১তম দিনে। (মুসতাদরাকে হাকিম, হাদিস: ৭৬৬৯) তবে পরেও আকিকা করার সুযোগ আছে।

আকিকা কি দিতেই হবে? ইসলামে আকিকা দেওয়াটা কতটুকু জরুরি?

উত্তর : আকিকার বিষয়টি ইসলামে সুন্নতে মুয়াক্কাদা। অনেকেই আবার বলেছেন ওয়াজিব, গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। রাসুল (সা.) হাদিসের নির্দেশনাগুলো থেকে এটা বোঝা যায় যে, আকিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি সুন্নাহ। রাসুল (সা.)-এর কাছে আকিকার ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, "কোন ব্যক্তি সন্তানের আকিকা করার ইচ্ছা করে, সে যেন তা পালন করে।" এই ক্ষেত্রে ছেলে সন্তানের জন্য দুটি বকরি/ছাগল। এবং মেয়ে সন্তানের জন্য একটি বকরি/ছাগল। তবে ছেলে সন্তানের জন্য একটি বকরি/ছাগল আকিকা দিলেও মুস্তাহাব আদায় হয়ে যাবে। তবে দুটি বকরি দাওয়াই উত্তম। বকরির অনুরূপ গরু, মহিষ, উট ইত্যাদির মাধ্যমেও আকিকা দেওয়া যাবে।

আকিকার গোশত কারা খেতে পারবে?

আকিকা যে ব্যক্তির নামে করা হয়েছে সেই ব্যক্তি তার পিতা-মাতা এবং আত্মীয়স্বজন, পরিবার-পরিজন, বন্ধু-বান্ধব, ফকির-মিসকিনদের মধ্যেও আকিকার গোশত বণ্টন করতে পারেন। কাঁচা অথবা রান্না করে উভয় ভাবেই আকিকার গোশত সর্বস্তরের মানুষকে হাদিয়া হিসেবে দেওয়া যাবে। আকিকা যেহেতু একটি উৎসবের মতো বিষয় এবং আনন্দের বিষয় এজন্য একান্ত যেসব আত্মীয়স্বজন আছে, তাদের সঙ্গে গোশত ভাগাভাগি করা যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে আপনি আকিকার গোশত ভাগ করে লোকদের মধ্যে বণ্টন করে দিতে পারেন।

এক্ষেত্রে অন্য একটি মত রয়েছে

আকিকার গোশতের বিধান কোরবানির গোশতের মতই। যার নামে আকিকা করা হয়েছে সে ও তার পিতা-মাতা এবং আত্মীয়-স্বজনরা তা খেতে পারবেন। রান্নাকরা এবং কাঁচা দু’ভাবেই সর্বস্তরের মানুষকে আকিকার গোশত হাদিয়া হিসেবে দেওয়া যাবে। হজরত আয়শা (রা.) থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি বলেন, আকিকার গোশত নিজে খাবে, অন্যকে খাওয়াবে এবং কিছু সদকা করবে। (মুসতাদরাকে হাকিম, হাদিস: ৭৬৬৯) তবে এক্ষেত্রে সদকা করাটা বাধ্যতামূলক নয়, মুস্তাহাব। (ফাতাওয়ায়ে শামি : ৬/৩৩৬)


Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url