১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের কারণ ও ফলাফল
১৯৬৬ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক উত্থাপিত ৬ দফা এবং ১৯৬৯ সালে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ কর্তৃক উত্থাপিত ১১ দফার ভিত্তিতেই মূলত ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থান সংঘটিত হয়।
১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের কারণ
১৯৬৯ সালে যে গণঅভ্যুত্থান সূচিত হয় তার প্রধান কারণসমূহ নিম্নে আলোচনা করা হলো :
১. পাকিস্তানের উভয় অংশের মধ্যকার অর্থনৈতিক বৈষম্য : পাকিস্তান সৃষ্টির পর থেকেই পূর্ব পাকিস্তান ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে বৈষম্য শুরু হয়। ১৯৫৮ সালে সামরিক শাসন জারির পর থেকে এ বৈষম্য আরো তীব্রতর হয়।
২. মৌলিক গণতন্ত্রী ও স্থানীয় 'টাউট-বাটপার দের অত্যাচার : সামরিক শাসক আইয়ুব খান ক্ষমতায় এসে সর্বজনীন ভোটাধিকারের পরিবর্তে সমগ্র পাকিস্তানে ৮০,০০০ মৌলিক গণতন্ত্রীর হাতে ভোটাধিকার প্রদান করেন। যারা আইনসভার সদস্যদের নির্বাচিত করেন। এ সকল মৌলিক গণতন্ত্রীর হাতে স্থানীয় স্বায়ত্তশাষিত প্রতিষ্ঠানগুলোর পরিচালনার ক্ষমতা প্রদান করা হয়।
৩. গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার আকাঙ্ক্ষা : পাকিস্তান প্রতিষ্ঠালগ্নে গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় রাষ্ট্রপরিচালনার প্রতিশ্রুতি প্রদান করা হয়েছিল। কিন্তু দেশবিভাগের পর পশ্চিমা শাসকগোষ্ঠী পাকিস্তানের রাষ্ট্র ক্ষমতা গ্রহণ করে পূর্ব পাকিস্তানিদেরকে বিভিন্নভাবে শোষণ করা শুরু করে।
৪. স্বায়ত্তশাসনের দাবি প্রত্যাখান : স্বায়তশাসনের প্রতিষ্ঠার দাবি ছিল পূর্ব বাংলার জনগণের বহুদিনের প্রাণের দাবি। স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য তারা ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে আন্দোলনও করেছিল। পাকিস্তান রাষ্ট্রটি স্বায়ত্তশাসনের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠা হলেও প্রদেশগুলোকে স্বায়ত্তশাসন দেওয়া হয়নি।
৫. আমলাদের গণবিরোধী ভূমিকা : পাকিস্তান আমলে আমলা ও সামরিক বাহিনীর ক্ষমতা বৃদ্ধিও ১৯৬৯ সালের গণ অভ্যূত্থানের অন্যতম একটি কারণ।
৬. দুর্নীতির প্রসার : আইয়ুব শাসনামলে দুর্নীতির ব্যাপক প্রসার ঘটে। সর্বস্তরে ব্যাপক দুর্নীতির প্রচলন হয়। ফলে জনগণ দুর্নীতির প্রসার রোধকল্পে ১৯৬৯ সালে গণঅভ্যূত্থানে অংশগ্রহণ করে।
৭. জাতীয়তাবাদী চিন্তার প্রসার : ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের সময় থেকে বাঙালি জাতি বাংলা ভাষাকেন্দ্রিক একটি জাতীয়বাদী চিন্তা চেতনা ধারণ করা শুরু করে। বিভিন্ন ঘটনা পরম্পরায় এই চেতনার বিকাশ প্রকট আকার ধারণ করে।
৮. আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা : ১৯৬৮ সালে জানুয়ারি মাসে জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমানকে এক নম্বর আসামি এবং তার সাথে আরো ৩৪ জনকে অভিযুক্ত করে একটি রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা দায়ের করে আইয়ুব-মোনায়েম চক্র বিচারের নামে প্রহসন শুরু করে।
৯. সামরিক কারণ : পূর্ব পাকিস্তানের প্রতিরক্ষার কোনো প্রকার কার্যকরী ব্যবস্থা না করে সকল সামরিক দপ্তর, অস্ত্র দপ্তর ও অস্ত্র কারখানা পশ্চিম পাকিস্তানে স্থাপন করা হয়। ফলে ১৯৬৫ সালের পাক-ভারত যুদ্ধে পূর্ব পাকিস্তান সম্পূর্ণ অরক্ষিত ছিল। তাতে করে বাঙালিরা এমন একটি ধারণা গ্রহণে উদ্বুদ্ধ হয় যে, পশ্চিম পাকিস্তানিরা শুধু তাদের নিজেদের স্বার্থ হাসিলের জন্যই আমাদেরকে ব্যবহার করবে।
১০. কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে বৈষম্য : পাকিস্তানের মোট জনসংখ্যার ৫৬% পূর্ব পাকিস্তানের হওয়া সত্ত্বেও চাকরির ক্ষেত্রে বাঙালিদের প্রতি বৈষম্য করা হয়। কেন্দ্রীয় সিভিল সার্ভিসের চাকরির ক্ষেত্রে ১৬% এবং সামরিক বাহিনীতে ১০% এর বেশি পূর্ব পাকিস্তানের প্রতিনিধিত্ব ছিল না।
১১. ছাত্র বিক্ষোভ : ১৯৬৯ এর শুরুতে ছাত্ররা ১১ দফা দাবি সংবলিত যে আন্দোলন শুরু করে তা ১৯৬৯ এর গণ অভ্যুত্থানের গতিসঞ্চার করে।
১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের তাৎপর্য
১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের ব্যাপক তীব্রতায় দেশের শাসনব্যবস্থা পুরোপুরি ভেঙে পড়ে। আইয়ুব খান ব্যর্থ হলো, একাধিকবার সান্ধ্য আইন জারি করে দেখা গেল সামরিক কর্তৃত্ব অচল হয়েছে। কেননা এতদিনে মানুষ দেশপ্রেম পরীক্ষার প্রয়োজনে মরতে শিখছে। ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থান সমগ্র পাকিস্তানে সংঘটিত হয়।
পশ্চিম পাকিস্তানে অভ্যুত্থান ছিল আইয়ুব খানের স্বৈরাচারী শাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ, কিন্তু পূর্ব পাকিস্তানে অভ্যুত্থান ছিল আইয়ুব খানের শাসনের উচ্ছেদের মাধ্যমে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম।
সেই সাথে ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থান ছিল পশ্চিম পাকিস্তানের বৃহৎ পুঁজি ও উপনিবেশিক শোষণের কবল থেকে মুক্তির সংগ্রাম। যখন পাকিস্তানের উভয় অংশের মধ্যে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে বৈষম্যের পাহাড় রচিত হয়েছিল এবং সামাজিক ক্ষেত্রে তখন পূর্ব বাংলায় সংগ্রাম শুরু হয় ।
পশ্চিম পাকিস্তানের শাসক, সামরিক চক্র, আমলাতান্ত্রিক সাম্রাজবাদী দেশীয় সামন্তদের শ্রেণিক ও আঞ্চলিক শোষণে নিষ্পেষিত এ অঞ্চলের ছাত্র জনতা ও সাধারণ মানুষের সংগ্রামে। ফলে দেখা যাচ্ছে এই অভ্যুত্থানের প্রভাব ও গুরুত্ব ছিল সুদূর প্রসারী।
পূর্ব পাকিস্তানের ক্ষেত্রে ১৯৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান আকস্মিক কোনো ঘটনা নয় । ১৯৪৭ সাল থেকে পূর্ব বাংলার মানুষের উপর যে শোষণ চলছিল তারই বিরুদ্ধে একের পর এক প্রতিবাদ বিক্ষোভ এবং আন্দোলন ও সংগ্রামে এক নিরবচ্ছিন্ন প্রক্রিয়ায় ভেতর দিয়ে পরিপক্ক হয়ে ১৯৬৮-১৯৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান সংঘটিত হয়েছিল।
পূর্বের সংগ্রামগুলোর ধারাবাহিকতায় এ সংগ্রাম সংঘটিত হলেও এটি পূর্বেকারগুলোর চেয়ে অধিক ব্যাপকতা নিয়ে বৈপ্লবিক শক্তি রূপে দেখা দিয়েছিল।
গুণগত দিক থেকে এ অভ্যুত্থান ছিল পূর্বাপেক্ষা ভিন্নতর এবং এটি বাংলার গণচেতনায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনেছিল। তাই পাকিস্তান শোষণ থেকে বাঙালিদের মুক্তির ও বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের গুরুত্ব অপরিসীম। যে কারণে শোষণ থেকে ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থান ছিল সুদীর্ঘ ২২ বছরের শোষণ, অত্যাচার ও অবহেলার প্রত্যক্ষ ফল।
ইতিহাসের আমোঘ বিধান বিলম্বে হলেও আত্মপ্রকাশ করে, ঝড়ের বেগে এবং নির্মমভাবে। আইয়ুব খান যখন তাঁর শাসনের এক দশকের মহিমা কীর্তনের জন্য মধ্যযুগীয় জাঁকজমকে চোখ ঝলসানো আলোর ডালা সাজিয়েছেন, ঠিক তখনই পূর্ব বাংলার গণশক্তির প্রচণ্ড অভ্যুত্থান হয়। এ পথ ধরেই ১৯৭১ সালে অর্জিত হয় বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব। জন্ম নেয় বিশ্বের মানচিত্রে আর একটি স্বাধীন দেশ বাংলাদেশ।
১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের ফলাফল
১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানে যে স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলন সৃষ্টি হয়েছিল তা শেষ পর্যন্ত পাকিস্তানি সামরিক সরকারকে দমন করতে সক্ষম হয়। আন্দোলনের তীব্রতার ফলেই পাকিস্তান সরকার পূর্ব পাকিস্তানীদের দাবিদাওয়া মানতে বাধ্য হয়। ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের ফলাফল ছিল সুদূরপ্রসারী। গণআন্দোলনের দিনগুলোতে হরতাল, মিছিল, বিক্ষোভ, গুলি, নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনায় পরিণত হয়। সমগ্র দেশে উত্তপ্ত রাজনৈতিক পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। ফলে রক্তলোলুপ আইয়ুব মোনায়েম ক্রমে জাগ্রত জনতার নিকট নতিস্বীকার করতে শুরু করে। নিম্নে ১৯৬৯ এর গণঅভ্যুত্থানের ফলাফল তুলে ধরা হলো :
১. আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার অবসান : এ আন্দোলনের মাধ্যমে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার অবসান ঘটে। গণতান্ত্রিক সংগ্রাম পরিষদ ও ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের নেতাগণ ১৯৬৮ সালের জানুয়ারি মাসে শেখ মুজিবকে এক নম্বর আসামি করে আরো ৩৪ জনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগে আইয়ুব মোনায়েম চক্র কর্তৃক 'আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা' নামে দায়েরকৃত যে মামলা তা প্রত্যাহারের দাবিতে অনড় ও অটল থাকায় ২২ ফেব্রুয়ারি আগরতলা মামলায় অভিযুক্ত সব আসামিকে বিনা শর্তে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়।
২. রাজবন্দিদের মুক্তি : ১৯৬৯ সালে গণআন্দোলন সমগ্র পূর্ব পাকিস্তানে বিশেষ করে বাঙালি জনগণের প্রচণ্ড ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। তারা তাদের ন্যায্য অধিকারের দাবিতে দৃঢ় অবস্থানে থাকেন। প্রচণ্ড গণআন্দোলনের মুখে পূর্ব বাংলার সরকার আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় অভিযুক্ত শেখ মুজিবসহ অন্যান্য রাজবন্দিদের বিনা শর্তে মুক্তি দেয়া হয়।
৩. আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি : ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের তীব্রতা প্রশমনের জন্য প্রসিডেন্ট আইয়ুব খান ১৯৬৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে রাওয়ালপিন্ডিতে গোল টেবিল বৈঠক আহ্ববান করেন। এ বৈঠকে ৬ দফা কর্মসূচি প্রত্যাহার করা হয়। ফলে গণআন্দোলন আবারও তীব্র রূপধারণ করে এবং প্রশাসন নিশ্চল হয়ে পড়ে। এরূপ পরিস্থিতে সারাদেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি ঘটে। অবশেষে ২০ মার্চ আইয়ুব খানের সভাপতিত্বে রাওয়ালপিন্ডিতে পুনরায় গোল টেবিল বৈঠক বসে। এ বৈঠকে ১৩ মার্চ তিনটি সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
- প্রাপ্তবয়স্কের ভোটাধিকারের ভিত্তিতে প্রত্যক্ষ নির্বাচনের ব্যবস্থা করা হবে।
- যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসন পদ্ধতি প্রবর্তন করা হবে।
- সংসদীয় শাসনব্যবস্থা প্রবর্তন করা হবে।
গোল টেবিল বৈঠকে গৃহীত তিনটি বিষয়ে আইয়ুব খান ও বিরোধীদলীয় নেতৃবৃন্দ একমত হয়। কিন্তু ৬ দফার ভিত্তিতে পূর্ণ স্বায়ত্তশাসনের দাবি না মানায় আওয়ামী লীগ গোল টেবিল বৈঠক বর্জন করে আন্দোলন অব্যাহত রাখে। এ সময় মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী প্রত্যক্ষ সংগ্রামের ডাক দেন। ফলে সাধারণ আইন শৃঙ্খলার আরো অবনতি ঘটে।
৪. আইয়ুব সরকারের অবসান : এ আন্দোলনের মাধ্যমে আইয়ুব সরকারের পতন ঘটে। এ সময় আইয়ুব খান পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর মোনায়েম খানকে সরিয়ে ড. এস. এন হুদাকে গভর্নর নিযুক্ত করে অবস্থার উন্নয়নের চেষ্টা করেন। এতে গণআন্দোলন পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতি হয় বটে কিন্তু ইতোমধ্যে পূর্ব পাকিস্তানে সামরিক শক্তি বৃদ্ধি করে ২৫ মার্চ (৬৯) সার পাকিস্তানে সামরিক শাসন জারি করে। সেনাবাহিনী প্রধান - জেনারেল আগা মোহাম্মদ ইয়াহিয়া খানের হাতে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা হস্তান্তর করে লৌহমানব আইয়ুব খান প্রেসিডেন্ট পদ তথা রাজনীতি থেকে বিদায় নিতে বাধ্য হন।
৫. ১৯৭০ সালের নির্বাচন : মূলত ১৯৬৯ এর গণআন্দোলন পূর্ব পাকিস্তানের জনগণকে স্বাধিকার চেতনায় জাগ্রত করে তোলে। অপরদিকে, পূর্ব পাকিস্তানে ঘোলাটে রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিরাজ করে এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ক্রমান্বয়ে অবনতি ঘটতে থাকে। তাই শাসনতান্ত্রিক ব্যবস্থার উন্নতিকল্পে ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।
৬. জাতীয়তাবোধ সৃষ্টি : এ আন্দোলনের মাধমে পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের মধ্যে জাতীয়তাবোধের পুনর্জাগরণ ঘটে। আর জাতীয়তাবোধ চেতনা থেকে তাদের স্বাধীনতা আন্দোলনে অংশগ্রহণে উৎসাহ জোগায়।
৭. ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা সংগ্রামের ক্ষেত্রে : ১৯৬৯ এর গণআন্দোলনের সাথে ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা সংগ্রামের একটা প্রত্যক্ষ যোগাযোগ রয়েছে। মূলত ১৯৬৬ সালের ৬ দফার মাধ্যমে যে স্বাধিকার আন্দোলনের সূচনা হয় ১৯৬৯ সালে তা এক ধাপ এগিয়ে নেওয়া হয় এবং ১৯৬৯ এর গণআন্দোলনের শেষ পরিণতি ঘটে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশের স্বাধীনতার মাধ্যমে।
উপসংহার : উপযুক্ত আলোচনা শেষে বলা যায় যে, ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থান ছিল পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর ভারত বিভক্তি থেকে শুরু করে যে চরম শোষণ, নির্যাতন আরম্ভ করেন, তারই প্রত্যক্ষ ফলাফল। তবে এ অভ্যুত্থান সংঘটিত হওয়ার ক্ষেত্রে এক দিকে ছিল পশ্চিমা শোষকের অত্যাচার অন্যদিকে, ছিল এদেশের কৃষক, শ্রমিক, ছাত্র, শিক্ষক সকল শ্রেণির সক্রিয় মুক্তির আকাঙ্ক্ষা। আর বাংলার মুক্তিপাগল জনতার আশা-আকাঙ্ক্ষ থেকেই সংঘটিত হয় গণআন্দোলন। তবে আন্দোলনে প্রত্যক্ষ কিছু অর্জিত না হলেও আইয়ুব খানের পতন ছিল একটি বড় সাফল্য। এ সাফল্যের প্রেরণা থেকে পরবর্তীতে বাঙালিরা শিক্ষা লাভ করেন। যে শিক্ষা থেকে তারা মুক্তিসংগ্রামে অবতীর্ণ হন।