বাংলাদেশের সংবিধানের মৌলিক অধিকার সমূহ
বাংলাদেশ সংবিধানে বর্ণিত মৌলিক অধিকারসমূহ
১. আইনের চোখে সমতা : সকল নাগরিক আইনের চোখে সমান এবং সকলেই আইনের সমান আশ্রয় লাভের অধিকারী।
২. ধর্ম প্রভৃতি কারণে বৈষম্যহীনতা : ধর্ম, বর্ণ, গোষ্ঠী, নারী পুরুষভেদে বা জন্মস্থানের কারণে কোন নাগরিকের প্রতি রাষ্ট্র বৈষম্য প্রদর্শন করবে না। জনগণের কোন বিনোদন বা বিশ্রামের স্থানে প্রবেশের কিংবা কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভর্তির বিষয়ে কোন নাগরিককে কোনরূপ অক্ষমতা, বাধ্যবাধকতা, বাধা বা শর্তের অধীন করা যাবে না। তবে রাষ্ট্র নারী, শিশু বা অনগ্রসর অংশের অগ্রগতির জন্য বিশেষ বিধান প্রণয়ন করতে পারবে। রাষ্ট্র ও গণজীবনের সর্বস্তরে নারী-পুরুষ সমান অধিকার লাভ করবে।
৩. সরকারি নিয়োগ লাভে সুযোগের সমতা : প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োগ বা পদ-লাভের ক্ষেত্রে সকল নাগরিকের জন্য সুযোগের সমতা থাকবে। ধর্ম, গোষ্ঠী, বর্ণ, নারী-পুরুষ বা জন্মস্থানের কারণে নাগরিকদের প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োগের সুযোগের সমতার ক্ষেত্রে বৈষম্য প্রদর্শন করা যাবে না।
৪. উপাধি, সম্মান ও ভূষণের বিলোপসাধন: রাষ্ট্র কোন উপাধি, সম্মান বা ভূষণ প্রদান করবে না। রাষ্ট্রপতির পূর্ব-অনুমোদন ব্যতীত কোন নাগরিক বিদেশী রাষ্ট্রের নিকট থেকে কোন উপাধি, সম্মান বা ভূষণ গ্রহণ করবে না। তবে সাহসিকতার জন্য পুরস্কার বা একাডেমিক পুরুস্কার গ্রহণের ক্ষেত্রে তা প্রযোজ্য হবে না।
৫. আইনের আশ্রয় লাভের অধিকার: আইনের আশ্রয় লাভ করার অধিকার বাংলাদেশের সকল নাগরিকের এবং সাময়িকভাবে বাংলাদেশে অবস্থানরত অপরাপর ব্যক্তির অবিচ্ছেদ্য অধিকার। এজন্য আইনানুযায়ী ব্যতীত কোন ব্যক্তির জীবন, স্বাধীনতা, দেহ, সুনাম বা সম্পত্তির হানি ঘটে এরূপ ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাবে না।
৬. জীবন ও ব্যক্তিস্বাধীনতার রক্ষণ: আইনানুযায়ী ব্যতীত জীবন ও ব্যক্তিস্বাধীনতা হতে কোন ব্যক্তিকে বঞ্চিত করা যাবে না।
৭. গ্রেফতার ও আটক সম্পর্কে রক্ষাকবচ: কোন গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তিকে গ্রেফতারের কারণ জ্ঞাপন না করে প্রহরায় আটক রাখা যাবে না। কোন ব্যক্তিকে তার মনোনীত আইনজীবীর সাথে পরামর্শ ও তার দ্বারা আত্মপক্ষ সমর্থনের অধিকার হতে বঞ্চিত করা যাবে না। গ্রেপ্তারকৃত ও প্রহরায় আটক প্রত্যেক ব্যক্তিকে গ্রেন্তারের চব্বিশ ঘন্টার মধ্যে আদালতে হাজির করা হবে এবং আদালতের আদেশ ব্যতীত তাকে উক্ত সময়ের অধিককাল আটক রাখা যাবে না। তবে কোন বিদেশী শত্রুর ক্ষেত্রে উপরোক্ত কোন কিছুই প্রযোজ্য হবে না।
৮. জবরদস্তি শ্রম নিষিদ্ধকরণ: সকল প্রকার জবরদস্তি শ্রম নিষিদ্ধ এবং এ বিধান কোনভাবে লঙ্ঘন হলে তা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ বলে গণ্য হবে। তবে ফৌজদারি অপরাধের জন্য দন্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তির ক্ষেত্রে এই বিধান প্রযোজ হবে না।
৯. বিচার ও দণ্ড সম্পর্কে রক্ষণ : সংবিধানের ৩৫ নং অনুচ্ছেদে
ক. এক অপরাধের জন্য কোন বাক্তিকে একাধিকবার ফৌজদারিতে সোপর্দ ও দণ্ডিত করা যাবে না।
খ. ফৌজদারি অপরাধের দায়ে অভিযুক্ত প্রত্যেক ব্যক্তি আইনের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত স্বাধীন ও নিরপেক্ষ আদালত বা ন্যায়পীঠে দ্রুত ও প্রকাশ্য বিচার লাভের অধিকারী হবেন।
গ. কোন অপরাধের দায়ে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে নিজের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিতে বাধ্য করা যাবে না।
ঘ. কোন ব্যক্তিকে যন্ত্রণা দেওয়া, নিষ্ঠুর, অমানুষিক বা লাঞ্ছনাকর দণ্ড দেওয়া যাবে না।
১০. চলাফেরার স্বাধীনতা : জনস্বার্থে আইনের দ্বারা আরোপিত যুক্তিসঙ্গত বাধা-নিষেধ সাপেক্ষে বাংলাদেশের সর্বত্র অবাধ চলাফেরা, এর যে কোন স্থানে বসবাস এবং বাংলাদেশ ত্যাগ ও বাংলাদেশে পুনঃপ্রবেশ করার অধিকার প্রত্যেক নাগরিকের থাকবে।
১১. সমাবেশের স্বাধীনতা: জনশৃঙ্খলা বা জনস্বাস্থ্যের স্বার্থে আইনের দ্বারা আরোপিত যুক্তিসঙ্গত বাধা-নিষেধ সাপেক্ষে শান্তিপূর্ণভাবে ও নিরস্ত্র অবস্থায় সমবেত হবার এবং জনসভা ও শোভাযাত্রায় যোগদান করার অধিকার প্রত্যেক নাগরিকের থাকবে।
১২. সংগঠনের স্বাধীনতা: জনশৃঙ্খলা ও নৈতিকতার স্বার্থে এবং আইনের দ্বারা আরোপিত যুক্তিসঙ্গত বাধা-নিষেধ সাপেক্ষে সমিতি বা সংঘ গঠন করার অধিকার প্রত্যেক নাগরিকের থাকবে। কিন্তু রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে কোন সাম্প্রদায়িক সমিতি বা সংঘ বা ধর্মীয় নামযুক্ত বা ধর্মভিত্তিক কোন সংঘ গঠন করার অধিকার কোন ব্যক্তির থাকবে না।
১৩. চিন্তা ও বিবেকের স্বাধীনতা এবং বাকস্বাধীনতা : (ক) চিন্তা ও বিবেকের স্বাধীনতার নিশ্চয়তা প্রদান করা হয়। (খ) রাষ্ট্রের নিরাপত্তা বিদেশী রাষ্ট্রসমূহের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক জনশৃঙ্খলা, শালীনতা বা নৈতিকতার স্বার্থে এবং আইনের দ্বারা আরোপিত যুক্তিসঙ্গত বাধানিষেধ সাপেক্ষে—
১. প্রত্যেক নাগরিকের বাক ও ভাব প্রকাশের স্বাধীনতা থাকবে এবং
২. সংবাদপত্রের স্বাধীনতা থাকবে।
১৪. পেশা ও বৃত্তির স্বাধীনতা : আইনের দ্বারা আরোপিত যুক্তিসঙ্গত বাধা-নিষেধ সাপেক্ষে প্রত্যেক নাগরিকের যেকোন আইনসঙ্গত পেশা বা বৃত্তি গ্রহণের এবং যে কোন আইনসঙ্গত কারবার বা ব্যবসায় পরিচালনার অধিকার থাকবে।
১৫. ধর্মীয় স্বাধীনতা : আইন, জনশৃঙ্খলা ও নৈতিকতা সাপেক্ষে-
ক. প্রত্যেক নাগরিকের যে কোন ধর্ম অবলম্বন, পালন বা প্রচারের অধিকার থাকবে।
খ. প্রত্যেক ধর্মীয় সম্প্রদায়ের নিজস্ব ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান স্থাপন, রক্ষণ ও ব্যবস্থাপনার অধিকার থাকবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এক ধর্মাবলম্বী ব্যক্তিকে অন্য ধর্মীয় শিক্ষাগ্রহণে বাধ্য করা কিংবা ধর্মীয় অনুষ্ঠানে যোগদানে বাধ্য করা যাবে না।
১৬. সম্পত্তির অধিকার: আইনের দ্বারা আরোপিত বাধা-নিষেধ সাপেক্ষে প্রত্যেক নাগরিকের সম্পত্তি অর্জন, ধারণ, হস্তান্তর ও অন্যভাবে বিধি-ব্যবস্থা করার অধিকার থাকবে। আইনের কর্তৃত্ব ব্যতীত কোন সম্পত্তি বাধ্যতামূলকভাবে গ্রহণ, রাষ্ট্রায়ত্ত বা দখল করা যাবে না।
১৭. গৃহ ও যোগাযোগের রক্ষণ: রাষ্ট্রের নিরাপত্তা, জনশৃঙ্খলা, জনগণের নৈতিকতা বা জনস্বাস্থ্যের প্রতি হুমকি সৃষ্টি না করলে কোন নাগরিকের গৃহে বলপূর্বক প্রবেশ, তল্লাশি ও আটক করা যাবে না। এছাড়াও প্রত্যেক নাগরিক তার চিঠিপত্রের ও যোগাযোগের অন্যান্য উপায়ের গোপনীয়তা রক্ষার অধিকার লাভ করবে।
১৮. মৌলিক অধিকার বলবৎকরণ : মৌলিক অধিকারসমূহ বলবৎ করার জন্য সংবিধানের ১০২ অনুচ্ছেদের (১) দফা অনুযায়ী সুপ্রিম কোর্টের নিকট মামলা রুজ্জু করার অধিকার নিশ্চিত করা হল।
১৯. শৃঙ্খলামূলক আইনের ক্ষেত্রে অধিকারের পরিবর্তন: কোন শৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্য-সম্পর্কিত কোন শৃঙ্খলামূলক আইন উক্ত সদস্যদের যথাযথ কর্তব্যপালন বা উক্ত বাহিনীতে শৃঙ্খলা রক্ষা নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যে প্রণীত যেকোন বিধানের ক্ষেত্রে মৌলিক অধিকারগুলো প্রযোজ্য হবে না।
২০. দায়মুক্তি বিধানের ক্ষমতা : প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিযুক্ত কোন ব্যক্তি বা মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে কোন ব্যক্তি রাষ্ট্রীয় প্রয়োজনে কোন কিছু করে থাকলে জাতীয় সংসদ আইনের দ্বারা সেই ব্যক্তিকে দায়মুক্ত করতে পারবে।