বাংলাদেশের সংবিধানের মূলনীতি কি কি
সংবিধানের মূলনীতি
সংবিধানের ২য় ভাগে 'রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি' শিরোনামে ৮ হতে ২৫ অনুচ্ছেদ পর্যন্ত কতগুলো রাষ্ট্রীয় মূলনীতি লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। আধুনিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হচ্ছে কল্যাণকামী রাষ্ট্র। জনগণের সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও নৈতিক দিকের সর্বাঙ্গীণ কল্যাণ সাধন করাই কল্যাণমূলক রাষ্ট্রের অন্যতম লক্ষ্য। এই উদ্দেশ্যে ভারত, আয়ারল্যান্ড প্রভৃতি দেশের সংবিধানে রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য কতগুলো মৌলিক নীতি নির্ধারণ করা হয়েছে। এই নীতিগুলো হচ্ছে রাষ্ট্র শাসনের মূলসূত্র। সরকারের কর্তব্য হল রাষ্ট্রীয় জীবনের সর্বক্ষেত্রে এগুলোকে প্রয়োগ করা। অনুরূপভাবে বাংলাদেশের সংবিধানেও কতগুলো রাষ্ট্রীয় মৌলিক নীতি নির্দেশ করা হয়েছে। নিম্নে এগুলো সম্পর্কে আলোচনা করা হলো:
রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি
১. জাতীয়তাবাদ : অভিন্ন ভৌগোলিক সীমারেখার মধ্যে একই ভাষা, সাহিত্য, সংস্কৃতি, ইতিহাস ও ঐতিহ্যে লালিত, বাঙালি জাতি ভাষা আন্দোলনের সময় থেকে নিজেদেরকে পাকিস্তানি জনগোষ্ঠী হতে পৃথক মনে করতে শুরু করে। বাঙালি জনগণ ঐক্যবদ্ধভাবে মুক্তি সংগ্রামের মহান চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠা করে। তাই বাংলাদেশের শাসনতন্ত্রের ৯ম অনুচ্ছেদে বলা হয়, "ভাষাগত ও সংস্কৃতিগত একক সত্তাবিশিষ্ট যে বাঙালি জাতি ঐক্যবদ্ধ ও সংকল্পবদ্ধ সংগ্রাম করে জাতীয় মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব অর্জন করেছিলেন, সেই বাঙালি জাতির ঐক্য ও সংহতি হবে বাঙালি জাতীয়তাবাদের ভিত্তি।" বাঙালি জাতির ঐক্য ও সংহতির মূলে রয়েছে ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতির অভিন্নতা। বাঙালিরা একটি স্বতন্ত্র জাতি। ১৯৭৯ সালে সংবিধানের ৫ম সংশোধনী দ্বারা সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১-এর সংশোধন করে 'বাঙালি জাতীয়তাবাদের পরিবর্তে 'বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।
২. সমাজতন্ত্র : সমাজজীবন হতে সর্বপ্রকার শোষণের অবসান করে শোষণমুক্ত ন্যায়ানুণ সমাজব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা এবং অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে সকলের জন্য সমান সুযোগ-সুবিধা প্রদান করা হবে রাষ্ট্রের অন্যতম মূলনীতি। এ উদ্দেশ্যে উৎপাদন যন্ত্র, উৎপাদনের উপকরণ ও বণ্টন ব্যবস্থাকে রাষ্ট্রীয় মালিকানায় ন্যস্ত করা হবে। তবে আইনের দ্বারা আরোপিত সীমার মধ্যে ব্যক্তিগত মালিকানা থাকবে। কিন্তু সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হবে গণতান্ত্রিক পথে। এজন্য শ্ৰেণীসংগ্রাম বিপ্লবের প্রয়োজন নেই। ১৯৭৯ সালে সংবিধানের ৫ম সংশোধনী আনয়ন করে সংবিধানের ১০ অনুচ্ছেদ সংশোধন করে সমাজতন্ত্রের ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে সামাজিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে ন্যায় বিচার'-এই অর্থে।
৩. গণতন্ত্র: গণতন্ত্রের প্রতি অদম্য স্পৃহাই বাঙালি জাতিকে স্বাধীনতা সংগ্রামে অনুপ্রাণিত করেছিল। তাই সংবিধানে গণতন্ত্রকে রাষ্ট্রের অন্যতম মূল স্তম্ভ হিসেবে ঘোষণা করা হয়। সংবিধানের ১১নং অনুচ্ছেদে বলা হয়, “প্রজাতন্ত্র হবে একটি গণতন্ত্র। যেখানে মৌলিক মানবাধিকার ও স্বাধীনতার নিশ্চয়তা থাকবে।" প্রশাসনের সর্বস্তরে জনগণের অংশগ্রহণের সুযোগ নিশ্চিত করা হবে। প্রাপ্ত বয়স্কদের সর্বজনীন ভোটাধিকারের মাধ্যমে সরকার নির্বাচিত হবে। সমাজজীবন হতে সর্বপ্রকার বৈষম্য দূরীভূত করে নাগরিকদের মৌলিক মানবিক অধিকার এবং ব্যক্তিস্বাধীনতার নিশ্চয়তা বিধান করা হবে।
৪. ধর্মনিরপেক্ষতা: মূল সংবিধানের ১২নং অনুচ্ছেদে ধর্মনিরপেক্ষতার কথা বলা হয়েছে। মূল সংবিধানে বলা হয়েছিল যে, বাংলাদেশে কোন বিশেষ ধর্মকে রাষ্ট্রীয় ধর্ম হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হবে না। জনগণের পূর্ণ ধর্মীয় স্বাধীনতা থাকবে। রাজনৈতিক উদ্দেশ্য সাধনের জন্য ধর্মের অপব্যবহার বিলোপ করা হবে। প্রত্যেক ব্যক্তি তার নিজস্ব পছন্দ অনুযায়ী ধর্ম পালন, চর্চা ও প্রচার করতে পারবে। কোন বিশেষ ধর্মাবলম্বী ব্যক্তির প্রতি বিশেষ সুযোগ-সুবিধা বা তার প্রতি কোন বৈষম্যমূলক আচরণ করা হবে না। মোটকথা, সমাজ জীবন হতে সর্বপ্রকার সাম্প্রদায়িকতার অবসান ঘটিয়ে একটি ধর্মনিরপেক্ষ সমাজব্যবস্থা কায়েম করা হবে রাষ্ট্রের মূল লক্ষ্য।
বাংলাদেশ সংবিধানে উপরোল্লিখিত চারটি নীতিকে রাষ্ট্রীয় মূল স্তম্ভ বলা হয়। তবে এই নীতিসমূহ হতে উৎসারিত অন্য নীতিগুলোও রাষ্ট্রীয় মূলনীতি হিসেবে পরিগণিত হয়।
রাষ্ট্র পরিচালনার অন্যান্য মূলনীতি
১. মালিকানায় নীতি: উৎপাদন প্রক্রিয়া ও বণ্টন ব্যবস্থার নিয়ন্ত্রক হবেন জনগণ। এই উদ্দেশ্যে রাষ্ট্রে তিন প্রকার মালিকানা থাকবে। যথা : (১) রাষ্ট্রীয় মালিকানা (অর্থাৎ অর্থনৈতিক জীবনের প্রধান প্রধান ক্ষেত্রগুলোর সমন্বয়ে গতিশীল রাষ্ট্রীয় ও সরকারি খাত সৃষ্টি করা হবে), (২) সমবায় মালিকানা (অর্থাৎ আইনের যারা আরোপিত বাধানিষেধ সাপেক্ষে নির্দিষ্ট সীমারেখার মধ্যে সমবায়সমূহের সদস্যদের জন্য সমবায় মালিকানা। ও (৩) ব্যক্তিগত মালিকানা (অর্থাৎ আইনের দ্বারা নির্ধারিত সীমার মধ্যে ব্যক্তিগত মালিকানা।।
২. কৃষক ও শ্রমিকের মুক্তি : কৃষক, শ্রমিক তথা সকল অন্যদের শ্রেণীকে সব রকম শোষণ হতে মুক্ত করা হবে রাষ্ট্রের মূল লক্ষ্য।
৩. মৌলিক প্রয়োজনের ব্যবস্থা: পরিকল্পিত অর্থনৈতিক বিকাশের মাধ্যমে জনগণের জীবনযাত্রার বস্তুগত ও সংস্কৃতিগত মানের উন্নতি সাধন করা হবে রাষ্ট্রের অন্যতম মৌলিক দায়িত্ব। এ উদ্দেশ্যে রাষ্ট্র জনগণের (ক) জীবন ধারণের জন্য অন্ন, বস্ত্র, আশ্রয়, শিক্ষা ও চিকিৎসাসহ মৌগিক উপকরণের ব্যবস্থা করবে। (খ) কর্মের অধিকার ও যুক্তিসঙ্গত মজুরির বিনিময়ে কর্মসংস্থানের নিশ্চয়তা বিধান করবে, (গ) মুক্তিসঙ্গত বিশ্রাম, বিনোদন ও অবকাশের ব্যবসা করবে এবং (খ) বেকারত্ব, ব্যাধি, পঙ্গুত্ব কিংবা যে কোন পরিস্থিতিতে সামাজিক নিরাপত্তার ব্যবস্থা নিশ্চিত করবে।
৪. গ্রামীণ উন্নয়ন ও কৃষি বিপ্লব: কৃষি বিপ্লব, পল্লী অঞ্চলে বৈদ্যুতিকীকরণ, বিভিন্নমুখী শিল্পের বিকাশ, শিক্ষার প্রসার ও যোগাযোগ ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন সাধন করে শহর ও গ্রামীণ জীবনযাত্রার মানের বৈষম্য ক্রমাগতভাবে দূর করার জন্য রাষ্ট্র কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
৫. অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক শিক্ষা : নিরক্ষরতা দূর করার লক্ষ্যে এবং সমাজের প্রয়োজনের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে সমগ্র দেশে একই প্রকৃতির গণমুখী ও সর্বজনীন শিক্ষা প্রবর্তন করার জন্য রাষ্ট্র কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। রাষ্ট্র কর্তৃক নির্ধারিত স্তর পর্যন্ত শিক্ষা ব্যবস্থাকে সকল বালক-বালিকার জন্য বাধ্যতামূলক ও অবৈতনিক করা হবে।
৬. জনস্বাস্থ্য ও নৈতিকতা : জনস্বাস্থ্যের উন্নতি সাধন ও জনগণের পুষ্টির স্তর উন্নয়ন করা রাষ্ট্রের অন্যতম প্রাথমিক কর্তব্য। এ উদ্দেশ্যে রাষ্ট্র আইনের দ্বারা নির্ধারিত অন্যবিধ প্রয়োজন ব্যতীত অন্যান্য মান এবং মাধ্যহানিকর ভেষজের ব্যবহার নিষিদ্ধ করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। জুয়াখেলা ও গণিকাবৃত্তি নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হবে।
৭. সুযোগের সমতা : মানুষে মানুষে সকল প্রকার সামাজিক ও অর্থনৈতিক বৈষম্য দূরীভূত করে সম্পদের সুষম বণ্টনের মাধ্যমে সকলের জন্য সমান সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের অন্যতম কর্তব্য।
৮. অধিকার ও কর্তব্যরূপে কর্ম : কর্ম হচ্ছে কর্মক্ষম নাগরিকের পক্ষে অধিকার, কর্তব্য ও সম্মানের বিষয়। প্রত্যেকের নিকট হতে যোগ্যতানুসারে ও প্রত্যেককে কর্মানুযায়ী এই নীতির ভিত্তিতে পারিশ্রমিক প্রদান করা হবে। কোন ব্যক্তি যাতে অনুপার্জিত আয় ভোগে সমর্থ না হয় সেদিকে রাষ্ট্রের সজাগ দৃষ্টি থাকবে। রাষ্ট্র সকল প্রকার সৃষ্টিধর্মী ও বুদ্ধিবৃত্তিমূলক শ্রমকে উৎসাহিত করে ব্যক্তিত্বের পূর্ণতর বিকাশে সহায়তা করবে।
৯. নাগরিক কর্তব্য: প্রত্যেক নাগরিক এবং প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিযুক্ত সকল কর্মচারীর কর্তব্য হচ্ছে রাষ্ট্রের সংবিধান ও আইন মান্য করা, শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখা, যথাযথভাবে নাগরিক দায়িত্ব পালন করা, জাতীয় সম্পত্তির সুষ্ঠু ব্যবহার ও অপচয় রোধ করা এবং জনগণের সেবায় সর্বদা নিজেকে নিয়োজিত রাখা।
১০. বিচার বিভাগের স্বাধীনতা : জনগণের স্বাধীনতা রক্ষার্থে বিচার বিভাগ যাতে সকল প্রকার নিয়ন্ত্রণমুক্ত স্বাধীন ও নিরপেক্ষ রায় ঘোষণা করতে পারে সেজন্য নির্বাহী বিভাগ হতে বিচার বিভাগকে পৃথক করা হবে।
১১. জাতীয় সংস্কৃতি সংরক্ষণ: রাষ্ট্র জনগণের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও উত্তরাধিকার সংরক্ষণে ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। জাতীয় ভাষা, সাহিত্য ও শিল্পকলার উন্নয়ন ও বিকাশে রাষ্ট্র কার্যকর ভূমিকা পালন করবে যেন সর্বস্তরের জনগণ জাতীয় সমৃদ্ধিতে অংশগ্রহণের সুযোগ পায়।
১২. জাতীয় স্মৃতি নিদর্শন সংরক্ষণ : সংবিধানে বলা হয়েছে যে, “বিশেষ শৈক্ষিক কিংবা ঐতিহাসিক গুরুত্বসম্পন্ন বা তাৎপর্যমণ্ডিত স্মৃতি নিদর্শন, বস্তু বা স্থানসমূহকে বিকৃতি, বিনাশ বা অপসারণ হতে রক্ষা করার জন্য রাষ্ট্র প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
১৩. আন্তর্জাতিক নীতি : আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের ভূমিকা হবে জাতীয় সার্বভৌমত্ব ও সমতার প্রতি শ্রদ্ধা, অন্যান্য রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করা, আন্তর্জাতিক বিরোধের শান্তিপূর্ণ সমাধান এবং আন্তর্জাতিক আইনের ও জাতিসংঘের নীতিসমূহের প্রতি শ্রদ্ধাপোষণ। এসব নীতির ভিত্তিতে বাংলাদেশ বৈদেশিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে শক্তি প্রয়োগ পরিহার ও নিরস্ত্রীকরণের জন্য চেষ্টা চালাবে, প্রত্যেক জাতির নিজস্ব পছন্দ অনুযায়ী জীবন পদ্ধতি নির্ধারণের অধিকারকে সমর্থন করবে এবং সাম্রাজ্যবাদ, উপনিবেশিকতাবাদ ও বর্ণবৈষম্যবাদের বিরুদ্ধে নিপীড়িত মানুষের ন্যায়সঙ্গত সংগ্রামকে সমর্থন করবে।
১৪. মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর সাথে সম্পর্ক: ১৯৭৭ সালের সংশোধনী আদেশে বলা হয় যে, বাংলাদেশ ইসলামী সংহতির ভিত্তিতে মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর সাথে সৌভ্রাতৃত্বের সম্পর্ক এবং সংহতি জোরদার করবে।
রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতিসমূহের তাৎপর্য ও গুরুত্ব
বাংলাদেশ সংবিধানে রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতিসমূহের সন্নিবেশন বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে যে, "এই নীতিগুলো রাষ্ট্র পরিচালনার মূলসূত্র হবে, আইন প্রণয়নকালে এগুলো প্রয়োগ করবে, সংবিধান ও অন্যান্য আইনের ব্যাখ্যার ক্ষেত্রে নির্দেশক হবে এবং রাষ্ট্র ও নাগরিকের কার্যের ভিত্তি হবে।" রাষ্ট্রীয় মূল নীতিগুলো আইন নয় এবং আদালতের মাধ্যমে বলবৎযোগ্য হবে না। এসব মূলনীতির কোন শাসনতান্ত্রিক আইনের মর্যাদা না থাকলেও জনগণের সার্বিক কল্যাণ সাধনের জন্য এর গুরুত্ব অপরিসীম। শাসন কর্তৃপক্ষ এসব নীতিমালা বাস্তবায়নের জন্য আইনত দায়ী না থাকলেও ক্ষমতায় নিজস্ব অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার তাগিদে এগুলো উপেক্ষা করতে পারেন না। কেননা, গণতান্ত্রিক সরকারের ভিত্তিই হচ্ছে জনগণের আস্থা। মূলনীতিগুলো বাস্তবায়নে সরকার গড়িমসি করলে জনসমর্থন হারাবে এবং নির্বাচনী বৈতরণী পার হয়ে পুনরায় ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হতে পারবে না।
রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতিসমূহের আইনগত তাৎপর্যও কম নয়। মূল সংবিধানে নাগরিকদের জন্য কতগুলো মৌলিক অধিকারের স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। সংবিধানে বলা হয়েছে যে, সংসদ মৌলিক অধিকারের পরিপন্থী কোন আইন প্রণয়ন করতে পারে না। মৌলিক অধিকারের পরিপন্থী কোন আইন প্রণীত হলে আদালত কর্তৃক তা বাতিল বলে ঘোষণা করা হবে। কিন্তু সংবিধানের ৪৭ নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে যে, রাষ্ট্রীয় মূলনীতির কোন একটিকে কার্যকর করার সংসদ যদি কোন সম্পত্তি বাধ্যতামূলকভাবে গ্রহণ, রাষ্ট্রায়ত্তকরণ, সামরিকভাবে বা স্থায়ীভাবে কোন সম্পত্তির নিয়ন্ত্রণ বিষয়ে আইন তৈরি করে তবে উক্ত আইন মৌলিক অধিকারের পরিপন্থী বলে তা বাতিল বা বেআইনি বলে গণ্য করা যাবে না। সুতরাং দেখা যাচ্ছে যে, মূলনীতিগুলোর আইনগত তাৎপর্য অপরিসীম।
মূলনীতিসমূহের নৈতিক ও শিক্ষামূলক মূল্যবোধও রয়েছে। এই নীতিসমূহ জনগণকে তার অধিকার ও কর্তব্য সম্পর্কে সচেতন করে দেয়। দেশ সেবার মহান আদর্শে জনগণকে অনুপ্রাণিত করে। রাষ্ট্রীয় কর্তৃপক্ষের জন্য এগুলো হচ্ছে নির্দেশমূলক নীতি, রাষ্ট্রশাসনের মূলতত্ত্ব।
সুতরাং বলা যায় যে, যদিও এই রাষ্ট্রীয় মূলনীতিগুলোর কোন আইনগত ভিত্তি নেই তথাপি এগুলো হবে আমাদের রাষ্ট্রীয় আদর্শ। এসব সুমহান আদর্শের সুষ্ঠু বাস্তবায়নের মাধ্যমেই কেবা সুখী ও সমৃদ্ধিশালী সমাজ ব্যবস্থা অর্জন করা সম্ভব। জনগণ ও সরকার উভয়ের নিকটই এই নীতিগুলো হবে আলোর দিশারী, পথপ্রদর্শক এবং সার্বিক উন্নয়নের উচ্চ শিখরে আরোহণের চাবিকাঠি।