বাংলাদেশের সংবিধান সংশোধন পদ্ধতি
সংবিধান সংশোধন পদ্ধতি
প্রত্যেক দেশের সংবিধানে সংশোধনের বিধান থাকে। বাংলাদেশের সংবিধানও এর ব্যতিক্রম নয়। বাংলাদেশের সংবিধানের ১৪২ নং অনুচ্ছেদে সংশোধনের নিয়মাবলি বিস্তারিতভাবে লিখিত আছে।
বাংলাদেশ সংবিধান দুষ্পরিবর্তনীয়। একে সাধারণ আইন প্রণয়ন পদ্ধতিতে সংশোধন করা যায় না, বরং বিশেষ পদ্ধতির মাধ্যমেই সংশোধন করা যায়। সংবিধানে লিখিত আছে যে জাতীয় সংসদ সংবিধানের যে কোন বিধানকে সংশোধন করতে পারে। তবে দুটি শর্ত পালন করতে হবে।
প্রথমত, সংবিধান সংশোধনের কোন বিলই সংসদের বিবেচনার জন্য গ্রহণ করা হবে না, যদি না উক্ত বিলের দীর্ঘ শিরোনামে সংবিধানের কোন বিধান সংশোধন করার কথা স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়। অর্থাৎ উক্ত বিলের শিরোনামে অবশ্যই সংবিধান সংশোধন করার বিষয়টি স্পষ্টত উল্লিখিত থাকবে।
দ্বিতীয়ত, সংবিধান সংশোধনের বিল সংসদের মোট সদস্যের অন্তত দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে গৃহীত হতে হবে। এভাবে কোন বিল গৃহীত হলে সেই বিল রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের জন্য তার নিকট পেশ করা হবে। সংবিধানে পরিষ্কারভাবে উল্লেখ করা হয়েছে যে, "এইরূপ কোন বিলই সম্মতির জন্য রাষ্ট্রপতির নিকট পেশ করা হবে না যদি ন ইহা সংসদের মোট সদস্যের অন্তত দুই-তৃতীয়াংশ সদস্যের ভোটে গৃহীত হয়। এরুপে সংসদে গৃহীত কোন সংবিধান সংশোধনী বিল যখন রাষ্ট্রপতির নিকট পাঠান হয় তখন তিনি সাত দিনের মধ্যে বিলটিতে সম্মতি দান করবেন। তিনি তা করতে অসমর্থ হলে উক্ত সময় অতিবাহিত হওয়ার পর তিনি বিলটিতে সম্মতি দান করেছেন বলে গণ্য করা হবে। বিলটি বিধিবন্ধ ও কার্যকর হবে।
বাংলাদেশে সংবিধান সংশোধনের উপরোক্ত নিয়মাবলি থেকে স্পষ্টভাবে বোঝা যায় যে, একমাত্র জাতীয় সংসদই সংবিধান সংশোধন করতে পারে। কিন্তু ১৯৭৮ সালে জিয়া সরকার সংবিধান সংশোধনের উপরোক্ত বিধানাবলির সঙ্গে আরও বিধান সংযোজন করে। নতুন সংযোজিত নিয়ম অনুসারে, সংবিধান সংশোধনের বিল জাতীয় সংসদ কর্তৃক উপরোক্ত মত দুই-তৃতীয়াংশ ভোটে গৃহীত হওয়ার পরও রাষ্ট্রপতি প্রয়োজন মনে করলে উক্ত বিনটিকে জনমত যাচাইয়ের জন্য গণভোটের ব্যবস্থা করতে পারেন। বিশেষ করে সংবিধানের প্রস্তাবনা, রাষ্ট্রীয় মূলনীতি (অনুচ্ছেদ-৮, রাষ্ট্রপতি ও তাঁর মর্যাদা (অনুচ্ছেদ-৪৮), রাষ্ট্রপতির শাসনবিভাগীয় ক্ষমতা (অনুচ্ছেদ-৫৬, মন্ত্রিসভা সংক্রান্ত বিষয়াদি (অনুচ্ছেদ ৫৮), আইন প্রণয়নের পদ্ধতি (অনুচ্ছেদ-৮০), কোন কোন ক্ষেত্রে সরকারি অর্থ ব্যয়ের কর্তৃত্বদানের ব্যাপারে রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা ও সংবিধান সংশোধনের পদ্ধতি (অনুচ্ছেদ-১৪২) সংশোধনকল্পে কোন বিল যদি জাতীয় সংসদ দ্বারা পাস হবার পর রাষ্ট্রপতির নিকট উপস্থাপিত করা হয়, তবে রাষ্ট্রপতি উক্ত বিল তাঁর নিকট পেশ হবার সাত দিনের মধ্যে এর উপর জনমত যাচাইয়ের জন্য গণভোটের ব্যবস্থা করতে পারেন। নির্বাচন কমিশন এরূপ গণভোট পরিচালনা করবে। এরূপ গণভোটে সংশোধনের সপক্ষে সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোট প্রদত্ত হলে রাষ্ট্রপতি গণভোটের ফলাফল ঘোষিত হওয়ার তারিখে বিলে সম্মতি দিয়েছেন বলে গণ্য করা হবে। তারপর বিলটি বিধিবদ্ধ ও কার্যকর হবে। আর গণভোটে বিলটির বিপক্ষে সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোট প্রদত্ত হলে রাষ্ট্রপতি উক্ত তারিখে বিলে সম্মতিদানে বিরত রয়েছেন বলে গণ্য করা হবে। ফলে বিলটি আর বিধিবদ্ধ ও কার্যকর হবে না।
তবে এসব সংশোধনীর মধ্যে প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের পঞ্চম সংশোধনী, হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের সপ্তম সংশোধনী, ত্রয়োদশ সংশোধনী এবং ষোড়শ সংশোধনী সুপ্রীম কোর্ট কর্তৃক বাতিল করা হয়েছে।