সুশাসনের সমস্যাগুলো কি কি?

সুশাসনের সমস্যা কি?

ভূমিকা : সত্যিকার সুশাসন প্রতিষ্ঠা যে কোনো দেশের জন্য শুধু প্রয়োজন নয়, বরং অপরিহার্যও বটে। কারণ সুশাসন ব্যতীত জনগণের চাহিদা ও আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটানো সম্ভব নয়। বাংলাদেশের শাসনব্যবস্থাকে সুশাসন বলে অভিহিত করা যায় না। এদেশের সরকারের শাসনব্যবস্থার দিকে তাকালে দেখা যায় যে, এখানে শাসনব্যবস্থা আদিযুগের পদ্ধতিগত সীমাবদ্ধতায় আবদ্ধ, ব্যাপকভাবে কেন্দ্রীভূত, শাসনব্যবস্থা অতিমাত্রায় ক্ষমতা প্রয়োগ করতে চায়। অতিমাত্রায় আমলাতান্ত্রিক, স্বেচ্ছাচারিতা, দায়িত্বহীনতা, জবাবদিহিতার অভাব প্রভৃতি লক্ষ করা যায়। এ সমস্ত কারণে কার্যত তো বটেই। সর্বোপরি গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার থিওরি থেকেও এদেশের শাসনব্যবস্থা সরে যাচ্ছে।


সুশাসনের সমস্যা : নিম্নে সুশাসনের সমস্যা সম্পর্কে আলোচনা করা হলো :

১. রাজনৈতিক জবাবদিহিতার অভাব : সুশাসনের অন্যতম পূর্বশর্ত হলো রাজনৈতিক জবাবদিহিতা। সাধারণভাবে রাজনৈতিক জবাবদিহিতা বলতে বুঝায় জনগণের কাছে রাজনীতিবিদদের দায়বদ্ধতা। কিন্তু বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর জবাবদিহিতা নেই বললেই চলে। এর ফলে এদেশে সুশাসন ব্যবস্থা কার্যকরী হচ্ছে না।

২. রাজনৈতিক দলের গণতন্ত্রের অভাব: এটি বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। নেতৃত্ব ও ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার জন্য যে কোনো ধরনের কাজ করতে দ্বিধা করে না। রাজনীতিতে নীতিহীনতা ও ক্ষমতার লোভ থাকায় বাংলাদেশের রাজনীতিতে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে না। রাজনৈতিক দলবদল এটির অন্যতম কারণ যা সুশাসনের অন্তরায়।

৩. সুষ্ঠু গণতন্ত্র চর্চার অভাব : সুশাসন প্রতিষ্ঠায় সাংবিধানিক আইনের যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করা অতীব জরুরি। কারণ সংবিধান অতীব জরুরি দিগদর্শন স্বরূপ । সংবিধান বহির্ভূত কোনো কার্যাবলি আইনগত দণ্ডনীয় অপরাধ। একে আমরা অবশ্য Double Standard বলতে পারি। কিন্তু বর্তমানে বাংলাদেশে যে গণতন্ত্রের চর্চা হয়েছে তাকে সার্বিক গণতন্ত্রের চর্চা বলা যায় না। আর এটিই হলো সুষ্ঠু শাসন তথা সুশাসন ব্যবহারের অন্তরায় ।

৪. সংসদের অকার্যকারিতা : বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক ধারা একটি অস্থিতিশীল অবস্থার দিকে ধাবিত। কার্যকরী সংসদ প্রতিষ্ঠার পরিবর্তে সংসদকে রীতিমতো অকার্যকর করা হয়েছে। সংসদ অধিবেশনে নীতিনির্ধারণী ও দিকনির্দেশনা মূলক বক্তব্যের পরিবর্তে প্রয়াত নেতাগণের স্তুতিতে মুগ্ধ আমাদের সংসদ সদস্যগণ। তাছাড়া একে অপরকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে সাংবিধানিক গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন আইন পাস করার তেমন সুযোগ নেই, বরং তা হ্যাঁ না নীতিতে পরিণত হয়েছে।

৫. আমলাতান্ত্রিক জবাবদিহিতার অভাব : আমলাতান্ত্রিক জবাবদিহিতা সুশাসনের অন্যতম পূর্বশত। উল্লেখ্য, তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে আমলাতন্ত্র বড় কর্তৃত্বপরায়ণ ভূমিকা পালন করছে। এ ধরনের পরিস্থিতিতে প্রশাসনকে গণমুখী করতে হলে আমলাতান্ত্রিক জবাবদিহিতার বিকল্প নেই।

৬. রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক দুর্নীতি : সুশাসন প্রতিষ্ঠার অন্যতম অন্তরায় হলো রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক দুর্নীতির বিস্তার। কিন্তু রাজনীতি ও প্রশাসন মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠস্বরূপ। রাজনীতিবিদদের নিয়ন্ত্রণে প্রশাসনিক কর্মকর্তারা কাজ করছেন যোগসাজশের মাধ্যমে। এর ফলে মিউচুয়াল যোগসূত্রের মাধ্যমে রাজনীতিবিদ ও প্রশাসনিক কর্মকর্তারা "State business relation" সংস্কৃতির ধারায় দুর্নীতির গভীরে প্রবেশ করছে।

উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার শেষে বলা যায় যে, সুশাসন প্রতিষ্ঠায় যথেষ্ট সমস্যা বা বাধা রয়েছে। এ সকল বাধা বা সমস্যা সমাধান করে একটি সুষ্ঠু প্রশাসনিক ব্যবস্থা গড়ে তোলা একান্ত অপরিহার্য বিষয়ে পরিণত হয়েছে।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url