দ্বি-জাতি তত্ত্ব বলতে কী বুঝ?
ভারতীয় উপমহাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ প্রদত্ত 'দ্বিজাতিতত্ত্বের' ধারণা আজও চিরস্মরণীয় অধ্যায় হিসেবে চিহ্নিত হয়ে রয়েছে। মূলত ১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইনে প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসন প্রবর্তিত হলে মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ প্রচার করতে থাকেন যে, মুসলমানগণ একটি স্বতন্ত্র জাতি এবং তারা ভারতের সংখ্যালঘু সম্প্রদায় নয়।
তাই তিনি একটি স্বতন্ত্র জাতি হিসেবে মুসলমানদের পৃথক আবাসভূমির দাবি করেন। তাঁর এ দাবির প্রেক্ষিতেই দ্বিজাতি ধারণাটির উৎপত্তি ঘটে এবং পরবর্তীতে এ ধারণা 'দ্বিজাতিতত্ত্ব' নামে পরিচিতি লাভ করে। যার গুরুত্ব মুসলিম সমাজে অপরিসীম।
দ্বি-জাতিতত্ত্ব কি
‘দ্বিজাতি' বলতে বুঝায় দুটি জাতি এবং দুটি জাতি সম্পর্কিত তত্ত্বই হচ্ছে 'দ্বিজাতিতত্ত্ব'। আর ভারতবর্ষে এ তত্ত্বের প্রবক্তা হচ্ছেন মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ। ভারতে বসবাসরত হিন্দু-মুসলিম সম্পর্ক কোনদিনও ভালো ছিল না। যদিও এ উভয় সম্প্রদায়ের সম্প্রীতি গড়ে তোলার চেষ্টা করা হয়েছিল। এ প্রেক্ষিতে মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ উপলব্ধি করেন যে, কংগ্রেসের ছায়াতলে মুসলমানদের ভাগ্যের উন্নয়ন সম্ভব নয়।
তাই তিনি মুসলমান সম্প্রদায়ের অধিকার আদায়ে তৎপর হয়ে উঠেন এবং মুসলমানরা যে একটি স্বতন্ত্র জাতি তা প্রচার করতে থাকেন। তিনি প্রচার করেন যে, হিন্দু ও মুসলমান শুধু ধর্মের দিক হতেই পৃথক নয় বরং উভয়ের সামাজিক ব্যবস্থা, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড ও ভিন্ন ধরনের।
তাই এ দুই জাতির মিলনে কখনো একটি জাতিতে পরিণত হওয়া সম্ভব নয়। তাঁর ধারণাকে বাস্তবে রূপ দিতে ১৯৪০ সালের ২২ মার্চ লাহোরে অনুষ্ঠিত নিখিল ভারত মুসলিম লীগের ২৩ তম অধিবেশনে সভাপতির ভাষণে তিনি তাঁর 'দ্বিজাতিতত্ত্ব' বা Two nation theory' উত্থাপন করেন। তিনি ঘোষণা করেন যে, “যে কোন আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী মুসলমানরা একটা জাতি।
তাই তাদের প্রয়োজন একটা পৃথক আবাসভূমি, একটা ভূখণ্ডের এবং একটা রাষ্ট্রের।" (By any international standard the Muslims are a nation. So they are in need of a separate homeland, a territory and a state) (সূত্র : ইয়াসমিন আহমেদ ও রাখী বর্মন, ব্রিটিশ ভারতের রাজনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়ন, পৃ. ২৫৪) এ ঘোষণা ঐতিহাসিক 'দ্বিজাতিতত্ত্ব' নামে খ্যাত।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনা শেষে বলা যায় যে, মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর দ্বিজাতিতত্ত্ব' ছিল একটি রাজনৈতিক কৌশল। তাঁর এ কৌশলের উদ্দেশ্য ছিল মুসলিম সম্প্রদায়ের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে সমগ্র মুসলিম সমাজকে ঐক্যবদ্ধ করা।
কেননা অবিভক্ত ভারতে মুসলমানদের অধিকার প্রতিষ্ঠা যেমন অসম্ভব ছিল, তেমনি রাজনৈতিক কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠাও সম্ভব ছিল না। তাই এ বাস্তবতার প্রেক্ষিতে এবং মুসলমানদের পৃথক আবাসভূমি গঠনের লক্ষ্যে জিন্নাহ তাঁর দ্বিজাতিতত্ত্ব' উত্থাপন ও প্রচার করেন। আর মুসলিম সম্প্রদায়ের ঐক্যবদ্ধতার কারণেই এক সময় ভারত দু'ভাগে বিভক্ত হয়ে যায় এবং মুসলমানগণ পাকিস্তান নামে নতুন রাষ্ট্র গঠন করে। সুতরাং সামগ্রিক প্রেক্ষাপটে জিন্নাহর “দ্বিজাতিতত্ত্ব' অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।