ন্যায়পাল কাকে বলে এবং ন্যায়পালের কাজ কি?
ন্যায়পাল কি?
ন্যায়পাল হলেন সৎ, দক্ষ, বিচক্ষণ, জ্ঞানী ও আইনজ্ঞ ব্যক্তি। তিনি প্রজাতন্ত্রের নির্বাহী কার্যব্যবস্থার যথার্থতা নির্ণয়ের ও সংরক্ষণের অন্যতম নিয়ামক।
"ন্যায়পাল" শব্দটির ইংরেজি প্রতিশব্দ হল Ombudsman এর অর্থ হল প্রতিনিধি বা মুখপাত্র। ন্যায়পাল অন্যের জন্য কথা বলবেন। ন্যায়পাল বা Ombudsman-এর পদ সর্বপ্রথম সৃষ্টি হয় ১৮০৯ সালে, সুইডেনে। এরপর বিশ্বে অন্যান্য দেশেও এই পদ সৃষ্টি হয়েছে। যেমন- ফিনল্যান্ডে ১৯১৯ সালে ডেনমার্কে ১৯৫৫ সালে নিউজিল্যান্ডে ১৯৬১ সালে, নরওয়েতে ১৯৯৩ সালে, গ্রেট ব্রিটেনে ১৯৬৭ সালে, অস্ট্রেলিয়ায় ১৯৭৩ সালে । ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের সংবিধান প্রণীত হয়। এই সংবিধানের ৭৭ অনুচ্ছেদে ন্যায়পাল পদ সৃষ্টি করা হয়। বাংলাদেশ সংবিধানের একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হল "ন্যায়পাল" পদ সৃষ্টি। সংবিধানের ৭৭ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে যে, জাতীয় সংসদ আইনের দ্বারা 'ন্যায়পাল' পদ প্রতিষ্ঠার জন্য বিধান করতে পারবেন।
ন্যায়পালের পদমর্যাদা: বাংলাদেশ সংবিধানে 'ন্যায়পাল'-এর পদমর্যাদা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও সম্মানজনক। তিনি হবেন সকল মহলের আস্থা ও শ্রদ্ধাভাজন ব্যক্তি। তিনি স্বাধীন ও নিরপেক্ষভাবে তাঁর উপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করতে পারবেন। ন্যায়পাল হবেন একজন সৎ, দক্ষ, বিচক্ষণ, জ্ঞানী ও আইনজ্ঞ ব্যক্তি। তিনি প্রজাতন্ত্রের নির্বাহী কার্য ব্যবস্থার যথার্থতা নির্ণয়ের ও সংরক্ষণের অন্যতম নিয়ামক।
ন্যায়পালের নিয়োগ পদ্ধতি: সংবিধান অনুযায়ী, তিন বছরের জন্য ন্যায়পাল নিযুক্ত হবেন। জাতীয় সংসদের সুপারিশক্রমে রাষ্ট্রপতি ন্যায়পালকে নিয়োগদান করবেন। একবার নিয়োগপ্রাপ্ত হলে ন্যায়পাল দ্বিতীয়বারের মত পুনর্নিয়োগ পেতে পারবেন। নিয়োগ লাভের পর ন্যায়পাল শাসন বিভাগের নিয়ন্ত্রণমুক্ত ও স্বাধীন থাকবেন। তিনি জাতীয় সংসদের নিকট দায়ী থাকবেন এবং জাতীয় সংসদ কর্তৃক অপসারিত হবেন।
ন্যায়পালের কাজ/কার্যাবলি
১. জাতীয় সংসদের আইন অনুসারে ন্যায়পাল যে কোন মন্ত্রণালয়, সরকারি কর্মচারী বা সংবিধিবদ্ধ সরকারি কর্তৃপক্ষের গৃহীত কার্যব্যবস্থা সম্পর্কে তদন্ত করতে পারবেন।
২. কোন ব্যক্তির নিকট থেকে অভিযোগ পাওয়ার পর ন্যায়পাল উক্ত অভিযোগের বিবরণ তদন্ত কমিটির নিকট পাঠাতে পারবেন। অথবা যেসব ক্ষেত্রে তিনি নিজে তদন্ত করতে চান সে সব ক্ষেত্রে অভিযোগের ভিত্তিতে একটি বিবৃতি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, বিধিবদ্ধ সরকারি কর্তৃপক্ষ অথবা সরকারি কর্মকর্তার নিকট পাঠাতে পারবেন। তবে এসব অভিযোগ বা বিবৃতি সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা বা কর্তৃপক্ষকে মতামত বা বক্তব্য রাখার সুযোগ প্রদান করবেন।
৩. জাতীয় সংসদ ন্যায়পালকে যেরূপ ক্ষমতা কিংবা যেরূপ দায়িত্ব প্রদান করবে তিনি সেরূপ ক্ষমতা প্রয়োগ ও দায়িত্ব পালন করবেন।
৪. ন্যায়পাল তার দায়িত্ব পালন সম্পর্কে বার্ষিক রিপোর্ট প্রণয়ন করবেন এবং তা জাতীয় সংসদে উত্থাপন করবেন
৫. ন্যায়পালের নিকট যে কোন কার্যবিধি ফৌজদারি দণ্ডবিধির ১৯৩ নং ধারার আওতায় বিচারের কার্যবিধি হিসেবে বিবেচ্য হবে। কোন অভিযোগ তদন্তের পর ন্যায়পাল যদি মনে করেন যে, অভিযোগকারী অথবা অন্য কোন ব্যক্তির প্রতি অবিচার করা হয়েছে তাহলে ন্যায়পাল সংশ্লিষ্ট যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত রিপোর্টে অন্যায়ের প্রতিবিধান করার সুপারিশ করতে পারবেন।
৬. কত দিনের মধ্যে এবং কীভাবে অন্যায়ের প্রতিবিধান করা যাবে তা সম্পর্কেও ন্যায়পাল রিপোর্টে সুপারিশ করতে পারবেন ।
উপরের আলোচনা থেকে বলা যায় যে, ন্যায়পালের মূল কাজ হল নাগরিক অধিকারকে প্রশাসনের দূর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহার থেকে রক্ষা করা। সকল পর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তাগণ দেশের আইন ও সংবিধান সঠিকভাবে মেনে চলছেন কিনা বা সেই আলোকে দায়িত্ব পালন করছেন কিনা, তাদের কাজ দ্বারা নাগরিক অধিকার বিনষ্ট হচ্ছে কিনা বা তারা অন্যায়ভাবে হয়রানির শিকার হচ্ছেন কিনা সে বিষয়ে লক্ষ রাখার জন্যই ন্যায়পাল পদ সৃষ্টি করা হয়েছে।
কোন ব্যক্তি আইনানুগ কর্তৃত্ব ছাড়া যদি ন্যায়পালের কাজে বাধা দান করেন তাহলে তাকে তিন মাসের কারাদণ্ড অথবা দু'হাজার টাকা জরিমানা অথবা উভয় ধরনের শাস্তি প্রদানের ক্ষমতা ন্যায়পালের থাকবে। ন্যায়পালের কোন কার্যবিধি, সিদ্ধান্ত অথবা রিপোর্ট সম্পর্কে কোন আদালতে চ্যালেঞ্জ, পুনর্বিবেচনা, বাতিল বা এ সম্পর্কে কোন প্রশ্ন উত্থাপন করা যাবে না।
তবে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, ন্যায়পাল পদ সৃষ্টি হলেও এখনও 'ন্যায়পাল নিয়োগ করা হয়নি