তমুদ্দিন মজলিস কেন প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল?
ভূমিকা : তমুদ্দিন মজলিস পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার সমসাময়িক কালের অরাজনৈতিক একটি প্রতিষ্ঠান। সংগঠনটি বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা প্রতিষ্ঠা করার ব্যাপারে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে। ১৯৪৭ সালের ২ সেপ্টেম্বর কতিপয় ছাত্র-শিক্ষক মিলে এ সংগঠনটি প্রতিষ্ঠা করে।
তমুদ্দিন মজলিস ইসলামী আদর্শাশ্রয়ী একটি সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানটি বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে থাকে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক আবুল কাশেমের উদ্যোগে ১৯৪৭ সালের ২ সেপ্টেম্বর তমুদ্দিন মজলিস প্রতিষ্ঠিত হয়।
ভাষা আন্দোলনের প্রথম পর্বে সংগঠনটি ব্যাপক ভূমিকা পালন করেছে। তমুদ্দিন মজলিস সংগঠনটি উর্দুকে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা করার উদ্যোগের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ উত্থাপন করে এবং বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্র ভাষা করার দাবিসহ ভাষা আন্দোলনের সূচনার পথিকৃতের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়। তমুদ্দিন মজলিস ১৯৪৭ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা বাংলা না উর্দু শিরোনামে অধ্যাপক আবুল কাশেম সম্পাদিত একটি পুস্তিকা প্রকাশিত হয়।
এ পুস্তিকার মধ্যে লেখক কাজী মোতাহার হোসেন, আবুল মনসুর আহমদ ও অধ্যাপক আবুল কাশেম বাংলাকে পূর্ব বাংলার শিক্ষার একমাত্র মাধ্যম, অফিস ও আদালতের ভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার জন্য জোরালো বক্তব্য রাখেন। পুস্তিকাটির মধ্যে তাদের অন্যতম প্রস্তাব হলো:
১. বাংলা ভাষা হবে পূর্ব পাকিস্তানের শিক্ষার অন্যতম বাহন।
২. পূর্ব পাকিস্তানের অফিসের ভাষা হবে বাংলা।
৩. বাংলা হবে পূর্ব পাকিস্তানের আদালতের ভাষা।
৪. পাকিস্তান সরকারের দাপ্তরিক ভাষা হবে দুটি-ক. বাংলা ভাষা খ. উর্দুভাষা।
এ সংগঠনটি বাংলা ভাষা বিরোধী নীতির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য ১৯৪৮ সালের ২ মার্চ রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ গঠন করে। এ সংগঠনটি সফলতার সাথে দীর্ঘ পাঁচ বছর ভাষা আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন।
উপসংহার: পরিশেষে বলা যায় যে, বাংলাকে রাষ্ট্রভাষার স্বীকৃতি আদায়ের জন্য তমুদ্দিন মজলিসের অবস্থান ছিল সর্বাগ্রে। তাছাড়া এ সংগঠনটি পাকিস্তান সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের বিরুদ্ধে সভা সমিতির আয়োজন করে। তবে ভাষা আন্দোলনের সময় তমুদ্দিন মজলিসের ব্যাপক তৎপরতা দেখা যায়।