অধিকার : অধিকার কি, অধিকারের বৈশিষ্ট্য, অধিকারের শ্রেণিবিভাগ ও অধিকারের রক্ষাকবচ কি কি

অধিকার বলতে বোঝায় সমাজের সকলের জন্য কল্যাণকর কতগুলো সুযোগ-সুবিধা। অধিকার সমাজ ও রাষ্ট্র কর্তৃক স্বীকৃত। অধিকার ব্যতীত ব্যক্তির জীবনের পরিপূর্ণ বিকাশ সম্ভব নয়। সুতরাং সামাজিক জীব হিসেবে ব্যক্তি যে সুযোগ-সুবিধা ভোগ করে তাই অধিকার। সমাজে বসবাসকারী সকল মানুষের পারস্পরিক স্বীকৃত দাবিই অধিকার। সমাজেই অধিকারের জন্ম এবং সমাজই এর রক্ষক। এজন্যই অধ্যাপক লাস্কি বলেছেন যে, "অধিকার সমাজ বহির্ভূত বা সমাজ নিরপেক্ষ নয়। অধিকার সমাজভিত্তিক।"



এল.টি. হবহাউস (L.T. Hobhouse)-এর মতে, “প্রকৃত অধিকার বলতে সামাজিক কল্যাণের জন্য কতগুলো শর্তকে বোঝায়"।

অধ্যাপক হল্যান্ড (Prof. Holland)-এর মতে, "এক ব্যক্তি কর্তৃক অপর ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গের কাজকর্মকে সমাজের মতামত ও শক্তি দ্বারা প্রভাবিত করার ক্ষমতাই হলো অধিকার।"

অধ্যাপক আর্নেস্ট বার্কার (Prof. Earnest Barker)-এর মতে, "অধিকার হচ্ছে ব্যক্তির সর্বোত্তম ব্যক্তিত্ব বিকাশের উপযোগী সেই সকল প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা যা' রাষ্ট্র কর্তৃক স্বীকৃত ও সংরক্ষিত"।

অধ্যাপক লাস্কি (Prof, Laski) বলেন, "অধিকার হচ্ছে সমাজজীবনের সে সকল শর্তাবলি যা ব্যতীত ব্যক্তি তার ব্যক্তিত্বের পূর্ণ বিকাশ সাধন করতে পারে না"।

টি. এইচ. গ্রিন (T.H. Green) বলেন, "অধিকার হচ্ছে সেসব বাহ্যিক অবস্থা যা মানসিক পরিপুষ্টি সাধন করে থাকে "।

বোসানকোয়েত (Bosanquet)-এর মতে, “অধিকার হলো এমন দাবি যা সমাজ কর্তৃক স্বীকৃত এবং রাষ্ট্র কর্তৃক প্রযুক্ত।"

সুতরাং অধিকার হচ্ছে এমন কতগুলো মৌলিক সুযোগ-সুবিধা যা নকলের জন্য আবশ্যক। অধিকার সমাজ ও রাষ্ট্র কর্তৃক স্বীকৃত। অধিকার ছাড়া মানুষ তার ব্যক্তিত্বকে উপলব্ধি করতে পারে না। অধ্যাপক লাঙ্কি এ জনাই বলেছেন যে, "প্রত্যেক রাষ্ট্রই পরিচিত হয় তার প্রদত্ত অধিকার যারা" (Every state is known by the rights it maintains).

অধিকারের বৈশিষ্ট্য 


অধিকারের সংজ্ঞা আলোচনা করলে এর নিম্নলিখিত বৈশিষ্ট্য লক্ষ করা যায় :

প্রথমতঃ অধিকারের ধারণা মানুষের সামাজিক চেতনাবোধ থেকে উদ্ভূত। সমাজেই এর সৃষ্টি এবং সমাজেই এর বিকাশ ঘটে থাকে।

দ্বিতীয়তঃ অধিকার সমাজ ও রাষ্ট্র কর্তৃক অনুমোদিত, স্বীকৃত ও সংরক্ষিত। 

তৃতীয়তঃ সমাজ পরিবর্তনের সাথে সাথে অধিকারও পরিবর্তিত হয়। অধিকার গতিশীল । 

চতুর্থতঃ অধিকারের মূল লক্ষ্য হচ্ছে ব্যক্তির সর্বজনীন কল্যাণ সাধন। 

পঞ্চমতঃ অধিকার ব্যক্তির ব্যক্তিত্বের পূর্ণ বিকাশ ঘটায়।

ষষ্ঠতঃ অধিকার নাগরিক ও নৈতিক গুণাবলিকে জাগ্রত করে। 

সপ্তমতঃ অধিকার সর্বজনীন (universal)। 

অষ্টমতঃ অধিকার হচ্ছে কতগুলো সুযোগ-সুবিধা । 

নবমতঃ অধিকার অসীম বা অবাধ নয়। কর্তব্য সম্পাদন ব্যতীত অধিকার ভোগ করা যায় না।

অধিকারের শ্রেণিবিভাগ বা প্রকারভেদ

অধিকারকে প্রথমে দু ভাগে ভাগ করা যায় যথা- 

  • (১) নৈতিক অধিকার ও 
  • (২) আইনগত অধিকার। 


(১) নৈতিক অধিকার কি 

নৈতিক অধিকার বলতে সেই অধিকার কে বোঝায় যা ন্যায়বোধ বা মানুষের বিবেক থেকে যে অধিকার আসে তাকে নৈতিক অধিকার বলে। সমাজব্যবস্থার ন্যায়বোধ ও নৈতিকতা থেকে নৈতিক অধিকার উৎপত্তি বা বিকাশ ঘটে। যেমন- ভিক্ষা পাওয়ার অধিকার। এই অধিকার রাষ্ট্রীয় সার্বভৌম দ্বারা প্রতিষ্ঠিত নয়। তাই এই অধিকার কেউ ভঙ্গ করলে রাষ্ট্র ব্যবস্থা শাস্তি দিতে পারেনা। 

তবে নৈতিক অধিকারের ক্ষেত্রে সমাজ ব্যবস্থার সমর্থন রয়েছে। যদি কোন ব্যক্তি এই ধরনের অধিকার ভঙ্গ করে তাহলে সমাজ তার তীব্র সমালোচনা করতে পারে। সুষ্ঠু ও সুন্দর জীবন ব্যবস্থা পরিচালনার জন্য নৈতিক অধিকার অত্যাবশ্যক।

(২) আইনগত অধিকার কি


আইনগত অধিকার বলতে ব্যক্তির সে অধিকারকে বোঝায় যা রাষ্ট্র কর্তৃক স্বীকৃত এবং অনুমোদিত। আইনগত অধিকারের পিছনে রয়েছে রাষ্ট্রের সার্বভৌম কর্তৃত্ব। আইনগত অধিকার ভঙ্গকারীকে রাষ্ট্রীয় আইন অনুযায়ী শাস্তি দেয়া যায়। জীবন ধারণের অধিকার, সম্পত্তির অধিকার, শিক্ষার অধিকার, চাকরির অধিকার ইত্যাদি আইনগত অধিকারের পর্যায়ভুক্ত। আইনগত অধিকারের উৎস হচ্ছে রাষ্ট্র।

আইনগত অধিকারকে আবার কয়েক ভাগে ভাগ করা হয়। যেমন- 

  • (ক) সামাজিক অধিকার 
  • (খ) অর্থনৈতিক অধিকার
  • (গ) রাজনৈতিক অধিকার 
  • (ঘ) সাংস্কৃতিক অধিকার 
  • ঙ) ধর্মীয় অধিকার 
  • চ) ব্যক্তিক অধিকার

আইনগত অধিকারের বিভিন্ন  প্রকারভেদ সম্পর্কে আলোচনা করা হলো :

(ক) সামাজিক অধিকার 

যে সকল অধিকার নাগরিকের সভ্য জীবনযাপনের জন্য অপরিহার্য তাকেই সামাজিক অধিকার বলে। সভ্য জীবনযাপনের জন্য সামাজিক অধিকার অপরিহার্য। কেননা সামাজিক অধিকার সমাজজীবনকে বিকশিত করে। সামাজিক অধিকারের প্রকারভেদ নিম্নরূপ :

১. জীবনের অধিকার (Right to life) : জীবনের অধিকার বা আত্মরক্ষার অধিকার নাগরিকের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অধিকার। রাষ্ট্রের অভ্যন্তরে এবং প্রয়োজনে বাইরেও রাষ্ট্র ব্যক্তির জীবনের বা আত্মরক্ষার নিরাপত্তা বিধান করবে।

২. ব্যক্তি স্বাধীনতার অধিকার (Right to liberty) : ব্যক্তি স্বাধীনভাবে রাষ্ট্রে বসবাস করবে। কোনো ব্যক্তিকে বিনা বিচারে আটক বা শান্তিদান করা যাবে না।

৩. চিন্তা ও মত প্রকাশের অধিকার (Right to thought and speech) : প্রত্যেক নাগরিকের স্বাধীনভাবে চিন্তা করার, মতামত প্রকাশ করার এবং আইন ও সংবিধান মেনে গঠনমূলক সমালোচনার অধিকার ব্যক্তির রয়েছে।

৪. সভা-সমিতির অধিকার (Right to association and Meeting) : প্রত্যেক নাগরিকের শান্তিপূর্ণভাবে, রাষ্ট্র কর্তৃক বেআইনী ঘোষিত বা নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়নি এমন অনুষ্ঠানে বা সভা-সমাবেশে সমবেত হবার, সভা-সমিতি করে নিজস্ব মতামত প্রকাশ করার অধিকার রয়েছে।

৫. চলাফেরার অধিকার (Right to movement) : রাষ্ট্র কর্তৃক নিষিদ্ধ এলাকা ব্যতীত রাষ্ট্রের অভ্যন্তরে যে কোনো স্থানে স্বাধীনভাবে চলাফেরার অধিকার প্রত্যেক নাগরিকের রয়েছে।

৬. সংবাদপত্রের স্বাধীনতা (Freedom to Press) : রাষ্ট্র অনুমোদিত সকল সংবাদপত্রের স্বাধীন, নিরপেক্ষ, বস্তুনিষ্ঠ খবর প্রকাশ করার অধিকার থাকতে হবে।

৭. চুক্তি সম্পাদনের অধিকার (Right to contract) : যে কোনো ব্যক্তি বা সংস্থা আইনানুগ পদ্ধতিতে অপর কোনো ব্যক্তি বা সংস্থার সাথে চুক্তি সম্পাদন করতে পারবে।

৮. আইনের চোখে সমানাধিকার (Right to equality before the eye of law) : জাতি-ধর্ম-বর্ণ, নারী- পুরুষ, ধনী-নির্ধন নির্বিশেষে সকল মানুষের আইনের চোখে সমানাধিকার থাকতে হবে।

৯. সম্পত্তির অধিকার (Right to Property) প্রত্যেক নাগরিকের সম্পত্তি অর্জন, ভোগ দখল, বিক্রী ও হস্তান্তর করার অধিকার থাকবে। রাষ্ট্র সম্পত্তি ভোগের নিরাপত্তা বিধান করবে।

১০. ধর্মের অধিকার (Right to Religion) : প্রত্যেক নাগরিক নিজের পছন্দ ও বিশ্বাস অনুযায়ী যে কোনো ধর্ম গ্রহণ, পালন ও তা প্রচার করতে পারবে।

১১. পরিবার গঠনের অধিকার (Right to organise family): পরিবার মানুষের আদি প্রতিষ্ঠান। প্রত্যেক নাগরিকের ইচ্ছেমত বিয়ে করার মাধ্যমে পরিবার গঠনের অধিকার রয়েছে।

১২. অর্থনৈতিক ও সামাজিক সুবিচার লাভের অধিকার (Right to economic and social justice) : অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে সুবিচার পাওয়ার অধিকার সকল নাগরিকের রয়েছে

১৩. শিক্ষার আধকার (Right to education) : প্রত্যেক নাগরিকের শিক্ষা লাভের অধিকার রয়েছে। রাষ্ট্র শিক্ষার দ্বার সবার জন্য উন্মুক্ত রাখবে এবং শিক্ষা বিস্তারে পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।

১৪. নিজস্ব সংস্কৃতি ও ভাষার অধিকার : প্রত্যেক নাগরিকের নিজস্ব ভাষা ও সংস্কৃতি সংরক্ষণ ও চর্চার অধিকার রয়েছে। রাষ্ট্র তা' সংরক্ষণে যথোপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। 

১৫. খ্যাতি বা সম্মান লাভের অধিকার (Right to fame) : সকল নাগরিকের তার কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ খেতাব, সম্মান ও পুরস্কার পাবার অধিকার থাকবে। 

(খ) অর্থনৈতিক অধিকার

যে অধিকার ব্যক্তিকে অভাব ও দারিদ্র্য থেকে মুক্তি দিয়ে অর্থনৈতিক জীবনের নিরাপত্তা বিধান করে তাকেই অর্থনৈতিক অধিকার বলে। নিচে কতিপয় অর্থনৈতিক অধিকার উল্লেখ করা হলো: 

১. কর্মের অধিকার (Right to work) : যোগ্যতা অনুযায়ী কাজ পাওয়া এবং তা' করার ক্ষমতাকে কর্মের অধিকার বলে। কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি এবং কর্মসম্পাদনের উপযোগী পরিবেশ তৈরির দায়িত্ব রাষ্ট্রের।

২. ন্যায্য মজুরি লাভের অধিকার (Right to reasonable wages) : ন্যায্য মজুরি লাভের অধিকার প্রত্যেক নাগরিকের স্বীকৃত অধিকার। ন্যায্য মজুরি প্রদানের বিষয়টি নিশ্চিত না করা হলে কর্মের অধিকার গুরুত্বহীন হয়ে পড়বে।

৩. বিশ্রাম বা অবকাশ লাভের অধিকার (Right to Rest) বিশ্রাম বা অবকাশ লাভের অধিকার প্রত্যেক নাগরিকের ন্যায্য অধিকার। কাজের মাঝে বিরতি, বিশ্রাম, অবকাশ যাপনের সুযোগ-সুবিধা থাকতে হবে। এছাড়াও রাষ্ট্রের উচিত কাজের সময়সীমা ও শ্রমঘণ্টা নির্ধারণ করে দেওয়া।

৪. শ্রমিক সংঘ বা ইউনিয়ন করার অধিকার (Right to form trade union) : আইনের দ্বারা আরোপিত যুক্তিসংগত বাধানিষেধ সাপেক্ষে কর্মরত ব্যক্তি বা শ্রমিকের সংঘ বা ইউনিয়ন গঠন বা তার সভ্য হবার অধিকার একটি স্বীকৃত অধিকার।

৫. বৃদ্ধ ও অক্ষম অবস্থায় অর্থনৈতিক নিরাপত্তা (Right to economic security in old and incapable condition) : বৃদ্ধ ও কাজকর্ম করতে অক্ষম ব্যক্তিদের রাষ্ট্রের নিকট থেকে আর্থিক নিরাপত্তা লাভের অধিকার রয়েছে। বাংলাদেশসহ বিশ্বের অনেক রাষ্ট্রে বৃদ্ধ ও অক্ষম ব্যক্তিরা এ অধিকার ভোগ করে।

(গ) রাজনৈতিক অধিকার কি 


নাগরিকগণ রাষ্ট্রীয় কার্যক্রমে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে অংশগ্রহণের জন্য যে সমস্ত অধিকার ভোগ করে থাকে তাকেই রাজনৈতিক অধিকার বলে। গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায় নাগরিকের রাজনৈতিক অধিকার স্বীকৃত। রাজনৈতিক অধিকারসমূহ নিম্নরূপ :

১. স্থায়ীভাবে বসবাসের অধিকার (Right to residence) : আইনের দ্বারা আরোপিত যুক্তিসঙ্গত বাধানিষেধ সাপেক্ষে যে কোনো নাগরিকের রাষ্ট্রের অভ্যন্তরে স্থায়ীভাবে বসবাসের অধিকার রয়েছে।

২. নির্বাচনের অধিকার (Right to election) : জাতি-ধর্ম-বর্ণ, নারী-পুরুষ, শিক্ষিত-অশিক্ষিত, ধনী-নির্ধন নির্বিশেষে সকল নাগরিকের ভোট দেবার, নির্বাচনে প্রার্থী হবার অধিকার রয়েছে।

৩. আবেদন করার অধিকার (Right to Petition) : যে কোনো নাগরিকের তার অভাব-অভিযোগ, চাওয়া-পাওয়া ইত্যাদি লিখিত আকারে রাষ্ট্রীয় কর্তৃপক্ষের নিকট জানানোর অধিকার রয়েছে।

৪. সরকারি চাকরি লাভের অধিকার (Right to hold Public Office) : জাতি-ধর্ম-বর্ণ, নারী-পুরুষ, জন্মস্থান নির্বিশেষে যোগ্যতা অনুযায়ী প্রত্যেক নাগরিকের সরকারি চাকরি লাভের অধিকার থাকবে।

৫. বিদেশে অবস্থানকালে নিরাপত্তা লাভের অধিকার (Right to Protection in abroad) : একজন নাগরিক বিদেশে যে অবস্থান করুক না কেন, সেখানে কোনো সমস্যায় পড়লে তার নিজ রাষ্ট্রের সাহায্য এবং নিরাপত্তার সুবিধা লাভের থাকবে।

৬. সরকারের সমালোচনা করার অধিকার (Right to criticise Goverment) : একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে প্রত্যেক নাগরিকের অধিকার রয়েছে সরকারের ভুল সিদ্ধান্তের বা গণবিরোধী কার্যকলাপের সমালোচনা করার।

(ঘ) সাংস্কৃতিক অধিকার

সংস্কৃতি হচ্ছে নাগরিকের আত্মপরিচয়ের বাহন। সংস্কৃতি চর্চার মাধ্যমে নাগরিক তার ইচ্ছা ও অভিব্যক্তিকে অপরের নিকট প্রকাশ করে। নাগরিকের ব্যক্তিসত্তা ও জাতীয় সরাকে তুলে ধরতে হলে প্রত্যেক নাগরিকের সংস্কৃতি চর্চার অধিকার থাকা উচিত।

(ঙ) ধর্মীয় অধিকার 


ধর্মীয় অধিকার বলতে প্রত্যেক নাগরিকের ইচ্ছামত ধর্মমত গ্রহণ, ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান পালন ও ধর্মীয় মতামত প্রকাশ সংক্রান্ত অধিকার বোঝার। নাগরিকের ধর্মীয় অধিকারে রাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ করা উচিত নয়। বরং কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠী যেন কারো ধর্মবিশ্বাসে হস্তক্ষেপ বা আঘাত করতে না পারে তা দেখা রাষ্ট্রের কর্তব্য।

(চ) ব্যক্তিক অধিকার কি 

ব্যক্তিক অধিকার বলতে প্রত্যেক নাগরিকের একান্ত ব্যক্তিগত কিছু সুযোগ সুবিধাকে বোঝায়। ব্যক্তিস্বাধীনতার অধিকার, চলাফেরার অধিকার, পরিবার সংগঠনের অধিকার, খ্যাতি লাভের অধিকার ইত্যাদি হচ্ছে ব্যক্তিক অধিকার। ব্যক্তিক অধিকার ব্যতীত কোনো নাগরিক তার নিজ সত্তাকে বিকশিত করতে পারে না।

অধিকারের রক্ষাকবচ কি কি

বর্তমান বিশ্বের প্রায় সকল ব্যক্তির ব্যক্তিত্ব বিকাশ এবং সুসভ্য সমাজ জীবনের জন্য অধিকার অত্যাবশ্যক। রাষ্ট্রই নাগরিকের সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অধিকার প্রবর্তন ও তা সংরক্ষণ করে থাকে। গণতান্ত্রিক অধিকার সংরক্ষণের শর্তগুলোকে “অধিকারের রক্ষাকবচ” বলে। এগুলো নিম্নরূপ :

১. আইন (Law) : আইন হচ্ছে অধিকারের প্রধান রক্ষাকবচ। আইনের সুষ্ঠু ও যথাযথ প্রয়োগের ফলে অধিকার নিশ্চিত হয়। আইন হচ্ছে অধিকার ভোগের আবশ্যকীয় শর্ত বা রক্ষাকবচ।

২. গণতন্ত্র (Democracy): গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায় জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস। গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায় সক্রিয় অংশগ্রহণের মাধ্যমে নাগরিকগণ নিজেরাই তাদের অধিকার সংরক্ষণ করতে সক্ষম হন।

৩. সংবিধানে মৌলিক অধিকারের ঘোষণা (Declaration of Fundamental Rights ) : নাগরিকদের মৌলিক অধিকারগুলো রাষ্ট্রের সংবিধানে লিপিবদ্ধ থাকলে তা সাংবিধানিক আইনের মর্যাদা লাভ করে। এর ফলে সরকার এ সমস্ত অধিকারে হস্তক্ষেপ করতে পারে না। নাগরিকগণ তাদের অধিকার ভোগ করতে কোনো প্রকার সরকারি বাধার সম্মুখীন হয় না।

৪. আইনের অনুশাসন (Rule of Law) : নাগরিক অধিকার নিশ্চিত ও নিরাপদ করতে হলে যথার্থ আইনের অনুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে। আইনের শাসনের অর্থ হচ্ছে আইনের চোখে ধনী, দরিদ্র, বর্ণ, গোত্র নির্বিশেষে সবাই সমান। আইনের শাসন বলবৎ থাকলে সরকার স্বেচ্ছাচারমূলক গ্রেপ্তার বা আটক করতে পারে না।

৫. বিচার বিভাগের স্বাধীনতা (Independence of fudiciary) : নাগরিক অধিকার রক্ষা করতে হলে বিচার বিভাগকে শাসন বিভাগ থেকে পৃথক করতে হবে। স্বাধীন বিচার বিভাগ নাগরিক অধিকারের রক্ষাকবচ। স্বাধীন বিচার বিভাগ আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় সাহায্য করে।

৬. জনগণের সজাগ দৃষ্টি (Eternal vigitance of the People) : জনগণের সজাগ দৃষ্টি নাগরিক অধিকারের সর্বশ্রেষ্ঠ রক্ষাকবচ। প্রত্যেক নাগরিককে নিজের অধিকার সম্পর্কে সজাগ ও সচেতন থাকতে হবে। নিজেদের অধিকার সম্পর্কে সজাগ ও সচেতন হলে কোনো শক্তিই নাগরিকের অধিকারের ওপর হস্তক্ষেপ করতে পারবে না। অধ্যাপক লাস্কির মতে, “জনগণের সার্বক্ষণিক সজাগ দৃষ্টিই স্বাধীনতা বা অধিকারের সতর্ক প্রহরী। "

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url