একদলীয় ব্যবস্থা বলতে কী বোঝ? একদলীয় ব্যবস্থার দোষ-গুণ আলোচনা করো।
কোনো দেশে যখন সাংবিধানিকভাবে একটি মাত্র রাজনৈতিক দল থাকে, তখন তাকে 'একদলীয় ব্যবস্থা' বলে। একদলীয় ব্যবস্থায় ক্ষমতাসীন দল ব্যতীত অন্য সকল দলকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পূর্বে জার্মানিতে হিটলারের 'নাৎসিদল', ইতালিতে মুসোলিনীর 'ফ্যাসিস্ট দল' এবং ১৯১৭ সালে সোভিয়েত রাশিয়ায় একদলীয় সমাজতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থা প্রবর্তিত হয়।
ফ্যাসিবাদ ও নাৎসিবাদী একদলীয় ব্যবস্থায় ব্যক্তি পূজা এবং উগ্র ধনতান্ত্রিক শোষণ-নির্যাতন চলতে থাকে। কিন্তু সমাজতন্ত্রে একদলীয় শাসন প্রতিষ্ঠিত হলেও এর লক্ষ্য হলো শ্রেণিহীন ও শোষণহীন সমাজ প্রতিষ্ঠা করা।
একদলীয় ব্যবস্থার গুণ
১. সরকারের স্থায়িত্ব : একদলীয় ব্যবস্থায় ঘন ঘন সরকার বদল হয় না। সরকার স্থিতিশীল হয়। দীর্ঘদিন দলীয় প্রধানের নেতৃত্বে সরকার রাষ্ট্র পরিচালনা করে থাকে। এর ফলে রাষ্ট্রীয় উন্নয়ন ত্বরান্বিত হয় ।
২. সরকারি নীতির ধারাবাহিকতা : একদলীয় ব্যবস্থায় সরকার স্থিতিশীল হওয়ায় সরকারি নীতির ধারাবাহিকতা বজায় থাকে।
৩. রাষ্ট্রীয় ঐক্য ও সংহতি : কোনো ধরনের দলাদলি না থাকায় এবং একই আদর্শ প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় রাষ্ট্রীয় ঐক্য ও সংহতি সুদৃঢ় হয়।
৪. জরুরি অবস্থায় উপযোগী : একদলীয় ব্যবস্থায় কোনো প্রকার বিরোধিতা না থাকায় এবং জবাবদিহিতার প্রশ্ন না থাকায় সরকার জরুরি অবস্থায় দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে।
৫. সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন : একদলীয় ব্যবস্থায় সরকারের স্থায়িত্ব নিশ্চিত হওয়ায়, কোনো প্রকার বিরোধিতা না। থাকায় দেশের সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত হয়।
৬. দলীয় শৃঙ্খলা : একদলীয় ব্যবস্থায় দলীয় প্রধানই সর্বেসর্বা। কোনো প্রকার বিরোধিতা বা উপদলীয় কোন্দলকে সহ্য করা হয় না। এর ফলে দলীয় শৃঙ্খলা সুদৃঢ় হয়।
৭. শিল্প-জ্ঞান-বিজ্ঞানের উন্নতি : একদলীয় ব্যবস্থায় শিল্প ও জ্ঞান-বিজ্ঞানের উন্নতি হয়।
৮. দক্ষ শাসন : একদলীয় ব্যবস্থায় কথায় কথায় বিরোধিতা, হরতাল, আইনসভা বর্জন, জ্বালাও পোড়ও বরদাশত করা হয় না। এর ফলে দক্ষ শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়।
একদলীয় ব্যবস্থার দোষ
১. গণতন্ত্র বিরোধী : একদলীয় ব্যবস্থায় গণতান্ত্রিক রীতিনীতি, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ভূলুণ্ঠিত হয়। একদলীয় ব্যবস্থায় সকল জনগণের হাতে ক্ষমতা চর্চার সুযোগ থাকে না। একদলীয় ব্যবস্থা গণতন্ত্র বিরোধী ।
২. ব্যক্তি স্বাধীনতা বিরোধী : একদলীয় ব্যবস্থা ব্যক্তিস্বাধীনতা বিরোধী। এতে ব্যক্তির মত প্রকাশের স্বাধীনতা, সংগঠন করার স্বাধীনতা, সরকারের ভুল-ভ্রান্তির সমালোচনা করার স্বাধীনতা থাকে না।
৩. ব্যক্তিত্ব বিকাশের পথ রুদ্ধ : একদলীয় ব্যবস্থায় মানুষের সব অধিকার হরণ করে তাদের ব্যক্তিত্ব বিকাশের পথ রুদ্ধ করে দেয়া হয়।
৪. রাজনৈতিক শিক্ষার পথ রুদ্ধ: জনগণ স্বাধীনভাবে রাজনীতি চর্চা করতে পারে না। এর ফলে এই ব্যবস্থায় জনগণের রাজনৈতিক শিক্ষার পথ রুদ্ধ হয়ে যায়।
৫. রাষ্ট্রীয় বিষয়ে উদাসীনতা সৃষ্টি : একদলীয় ব্যবস্থায় রাজনীতিতে ও রাষ্ট্রীয় বিষয়ে জনগণের অংশগ্রহণের সুযোগ উন্মুক্ত থাকে না। ফলে রাষ্ট্রীয় বিষয়ে জনগণের মধ্যে উদাসীনতার সৃষ্টি হয়।
৬. বিপ্লব-বিদ্রোহের সম্ভাবনা : একদলীয় ব্যবস্থায় জনগণ সরকারের তথা ক্ষমতাসীন দলের কোনো কাজের সমালোচনা করতে পারে না। এর ফলে জনগণের মনে ক্ষোভ দানা বাঁধতে পারে। এর ফলে একদিন জনগণের এ ক্ষোভ বিদ্রোহ-বিপ্লবের জন্ম দিতে পারে।
৭. সুষ্ঠু জনমত বিকাশে বাধা : একদলীয় ব্যবস্থায় বিরোধী মত প্রকাশের সুযোগ না থাকায়, গঠনমূলক সমালোচনাকে দমন করে রাখার ফলে, প্রচার মাধ্যমের স্বাধীনতা না থাকায় সুষ্ঠু জনমত বিকশিত হতে পারে না।