আন্তর্জাতিক সম্পর্ক তত্ত্ব অধ্যয়নে সাম্প্রতিক পরিবর্তনসমূহ || International Relations Theory

ভূমিকা : বিশ শতকে আন্তর্জাতিক সম্পর্কে তত্ত্ব অধ্যয়ন যেভাবে আলোচনা করা হতো অথবা আন্তর্জাতিক সম্পর্কে তত্ত্ব অধ্যয়ন যেভাবে শুরু হয়েছিল সেই ধারায় পরিবর্তন আসে একই শতাব্দীর ষাটের দশকের মাঝামাঝিতে এসে। তবে বিশ শতকের আশির দশকে এসে এক শ্রেণির পণ্ডিত আন্তর্জাতিক সম্পর্কে তত্ত্ব অধ্যয়নের ক্ষেত্রে বিভিন্ন সমালোচনা করেন।


আন্তর্জাতিক সম্পর্কে তত্ত্ব অধ্যয়নে সাম্প্রতিক সময়ে যে সকল পরিবর্তন হয়েছে সেগুলো নিম্নরূপ

১. বিচারমূলক সামাজিক তত্ত্ব : প্রাচীনপন্থি ও আচরণবাদীদের মধ্যকার আগের বিতর্কের মত উত্তর আধুনিকতাবাদ হলো মানবিদ্যা সম্পর্কিত গবেষণায় বৃহত্তর আন্দোলনের অংশ যেটি “বিচারমূলক সামাজিক তত্ত্ব” (Critical Social Theory) উত্তর কাঠামোবাদ, (Poststructuralism) অথবা বিনির্মাণবাদ বা প্রতিনিৰ্মাণবাদ (Deconstructionism) ইত্যাদি বিভিন্ন নামে পরিচিত। এ সকল সংশ্লিষ্ট পদ্ধতিতে উত্তর আধুনিক তাত্ত্বিকগণ বিশ্ব রাজনীতির প্রকৃতি হিসেবে এর আন্ত নিহিত উদ্দেশ্যমূলক ভাবমূর্তিকে গ্রহণ করেন এবং তাঁদের জাতক্রমের বৈশিষ্ট্যসূচক লক্ষণ হিসেবে বাস্তবতার সামাজিক গঠন প্রচেষ্টায় নিজেদের নিয়োজিত করে।

২. বিচারমূলক তত্ত্ব পদ্ধতি : আন্তর্জাতিক সম্পর্ক অধ্যয়নে বিচারমূলক তত্ত্ব পদ্ধতি হলো যে কোনো একটি নির্দিষ্ট সময় ও স্থানের পারিপার্শ্বিকতার অবস্থান করে মতাদর্শগত, সাংস্কৃতি ও সমাজ বৈজ্ঞানিক প্রভাবসমূহ দ্বারা তত্ত্ব রূপান্তরিত হয়। তবে সনাতন অথবা আচরণবাদী তাত্ত্বিক রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক পদ্ধতির অধীনস্থ সামাজিক শক্তিসমূহ, যেগুলো সর্বদা পরিবর্তনশীল ও যেগুলোর কোনো স্থায়ী অর্থ নেই। যেকারণে আন্তর্জাতিক বিন্যাসের উদ্ভব ও পরিবর্তনশীল কাঠামোর সাথে নিজেদেরকে সংশ্লিষ্ট করার মাধ্যমে মৌলিক প্রতিষ্ঠানসমূহ ও শক্তি সম্পর্কিত বিষয়ে আপত্তি তুলে থাকেন। যারা তাদের জ্ঞানান্বেষণের ব্যাপারে প্রবলভাবে আদর্শবাদী এবং সমাজের আমূল পরিবর্তনের সম্ভাবনা ও বিকল্প ভবিষ্যতসমূহের ব্যাপৃতি কতটুকু তা চিহ্নিত করতে চান।

৩. তত্ত্ব অধ্যয়নে উত্তর আধুনিক পদ্ধতি : উত্তর আধুনিক পদ্ধতি, যেগুলো বিচারমূলক তাত্ত্বিকগণের গবেষণা কর্মের মাধ্যমে ঊনবিংশ শতাব্দীর আশির দশকে উন্নীত হয়। এ সম্পর্কে বলা যায় যে, বাস্তব জীবনের থেকে জ্ঞান আরোহণকারী আচরণবাদকে বিরোধিতা করা ছাড়া এ পদ্ধতিটি প্রকৃতপক্ষে তার যথাযোগ্য সংজ্ঞা প্রদান করতে পারেনি। উত্তর আধুনিকবাদীগণ তর্কের খাতিয়ে মেনে নেন যে একক নৈর্ব্যক্তিকসমূহ বলতে কিছু নেই। উত্তর আধুনিকতাবাদীগণ যুক্তি প্রদর্শন করেন যে, রাষ্ট্রসমূহ নিয়মমাফিক করে দেয়া পদ্ধতিসমূহ অনুসরণ করে চলে না কিন্তু এগুলো সম্পর্কে যে কাহিনী বলা হয় যেগুলো গল্প কথকের দৃষ্টিভঙ্গি দ্বাড়া পরিশ্রুত হয়ে আমাদের নিকট এসে পৌছায়।

উত্তর আধুনিকতাবাদীগণ ফরাসি সমাজতাত্ত্বিকদের পথ অনুসরণ করে আমূল সংস্কারমূলক ব্যাখ্যা প্রদানের প্রচেষ্টা চালান। কেননা সহিংসতা অসমতা অন্তর্ভুক্ত উক্তিতে বাধাদান, দুর্ভিক্ষ, এর ফলাফল স্বরূপ উদ্ভুত অর্থনৈতিক নিষ্পেষণ এ ধারণা ও মানবতার ইতিহাস পূর্বে কখনো মানুষকে এত বেশি সংখ্যক ছোবল করেনি।

উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে এ কথা আমরা বলতে পারি যে, পূর্ববর্তী সময়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক অধ্যয়নে তত্ত্বকে যেভাবে বিশ্লেষণ করা হতো তার ব্যাপক পরিবর্তন সাধন হয়েছে সাম্প্রতিক সময়ের তত্ত্ব অধ্যয়নে।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url