রুডলফ কিয়েলেন কে ভূরাজনীতির জনক বলা হয় কেন? ভূ-রাজনীতির জনক হিসেবে অধ্যাপক রুডলফ কিয়েলেনকে মূল্যায়ন কর।

ভূমিকা : সাম্প্রতিককালের সর্বাপেক্ষা আলোচিত বিষয় হচ্ছে “ভূ-রাজনীতি”। যদিও ভূ-রাজনীতি সম্পর্কে চিন্তা ভাবনার সূত্রপাত অনেক পূর্ব থেকেই তথাপি এর ব্যাপক প্রচার ও প্রসার শুরু হয় ঊনবিংশ শতাব্দীতে রাষ্ট্রীয় নীতি, দেশীয় বা আন্তর্জাতিক রাজনীতি ও রাষ্ট্রসমূহের মধ্যকার সম্পর্ক উন্নয়নের মাধ্যমে। তবে ঊনবিংশ শতাব্দীর ভূ-রাজনীতির সাথে সাম্প্রতিককালের ভূ-রাজনীতির রয়েছে ব্যাপক পার্থক্য। তখন রাষ্ট্রকে একটি জৈবিক সত্তা হিসেবে ধরা হতো। আর তৎকালীন ধারণা বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য রুডলফ কিয়েলেনকে ভূ-রাজনীতির জনক বলা হয় ।

ভূ-রাজনীতির জনক রুডলফ কিয়েলেন 

ভূ-রাজনীতির সাথে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত নাম হচ্ছে রুডলফ কিয়েলেন। ভূ রাজনীতি তত্ত্ব উদ্ভাবনে তার গুরুত্বপূর্ণ অবদানের কারণে তাকে ভূ-রাজনীতির পিতা বলা হয়। তিনি তার গুরুত্বপূর্ণ তত্ত্বের মাধ্যমে ভূ-রাজনীতিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রতিষ্ঠিত জ্ঞানের শাখায় পরিণত করেন। জার্মান বংশোদ্ভূত রুডলফ কিয়েলেনের তত্ত্বের এবং তার অবদানের আলোচনার মাধ্যমেই এটা পরিষ্কার হয়ে যাবে যে, কেন তাকে ভূ-রাজনীতির পিতা বলা হয় ।

রুডলফ কিয়েলেন (Rudolf Kiellen, 1864-1922) ছিলেন একজন জার্মান বংশোদ্ভূত। তিনি পরবর্তীতে সুইডিশ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। রুডলফ কিয়েলেন, ফ্রেডরিক রেজেলের পরবর্তী প্রখ্যাত ভূ-রাজনীতিবিদ হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। তাকে আধুনিক ভূ-রাজনীতির জনক বলা হয়।

কিয়েলেন ভূ-রাজনীতির দৃষ্টিভঙ্গিতে একজন জার্মানপন্থি ছিলেন। তিনি ছিলেন ফ্রেডরিক রেজেলের রাষ্ট্র সম্পর্কিত জৈবিক মতবাদের অনুগত ভক্ত। রেজেলের রাষ্ট্র সম্পর্কিত জৈবিক মতবাদে বলা হয়, “রাষ্ট্র হচ্ছে একটি একক জৈবিক সত্তা" (Individual Organism) এবং মানবগোষ্ঠী নিজেদেরকে একমাত্র তার সাথে একত্র করে পরিপূর্ণতা পেতে পারে। রাষ্ট্র কখনো মানব সম্প্রদায়ের মতো নৈতিক বিধিমালা মেনে চলে না, তা সে নিজ নাগরিকের ক্ষেত্রেই হোক আর তা বিদেশির ক্ষেত্রেই হোক।"

রুডলফ কিয়েলেন তার তত্ত্বে জার্মানদের জীবন ধারণের জন্য ভূমিস্বত্বের ওপর বিশেষ গুরুত্বারোপ করেন। “রাষ্ট্র একটি জৈবিক সত্তা” কিয়েলেন এই ধারণার সংশোধিত রূপ প্রতিষ্ঠা ও বিশ্লেষণ করেন। তিনি রেজেলের ধারণাকে এক কদম এগিয়ে নিয়ে গিয়ে বলেন যে, রাষ্ট্র শুধু একটি জৈবিক সত্তা নয়; বরং একটি সচেতন সত্তাও যার নৈতিক এবং বুদ্ধিবৃত্তিক সামর্থ্য রয়েছে। তিনি আন্তর্জাতিক রাজনীতির গতিধারাও জৈবিক সত্তার আলোকে পর্যালোচনা পক্ষপাতী ছিলেন।

পৃথিবীতে কিছু শক্তিধর রাষ্ট্রের উদ্ভবের ব্যাপারে ভবিষ্যদ্বাণী করেন যার মধ্যে জার্মানি হবে ইউরোপ, আফ্রিকা ও পশ্চিম এশিয়ার অন্যতম শক্তিশালী রাষ্ট্র। তার বিখ্যাত গ্রন্থ The Great Powers জার্মান ভূ-রাজনীতিবিদ ও রাষ্ট্রনায়কদের বাদে স্বীকৃত বাইবেল হিসেবে পরাজিত হয়।

উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার মাধ্যমে বলা যায় যে, ভূ রাজনীতি তত্ত্ব যাদের হাতের ছোঁয়ায় বিকাশ লাভ করেছে তাদের মধ্যে জার্মান বংশোদ্ভূত সুইডিশ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রুডলফ কিয়েলেন ভূ-রাজনীতির তত্ত্বের অন্যতম পথিকৃৎ হিসেবে গণ্য। তার Geopolitik দ্বারা পরবর্তীকালের তাত্ত্বিকরা অনেকাংশে প্রভাবিত। ভূ-রাজনীতির উপর তার উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ হচ্ছে “The Great Powers”। প্রকৃতপক্ষে ভূ-রাজনীতির ক্ষেত্রে রুডলফ কিয়েলেনের অসামান্য অবদানের কারণে তাঁকে ভূ-রাজনীতির জনক হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url