অর্থনৈতিক নীতিনির্ধারণে ভূরাজনীতির ভূমিকা আলোচনা কর। Geopolitics in Economic Policymaking
বিশ্বের সকল কর্মকাণ্ডের মূলে রয়েছে অর্থনীতি। অর্থনীতিকে কেন্দ্র করেই বিশ্বের সকল কার্যক্রম পরিচালিত হয়। বিশ্বের সকল রাষ্ট্রগুলো অর্থনীতিকে কেন্দ্র করেই পরস্পরের মধ্যে প্রতিযোগিতায় লিপ্ত। বিশ্বের প্রত্যেকটি রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক নীতিনির্ধারণের ক্ষেত্রে ভূরাজনীতি বিশাল ভূমিকা পালন করে থাকে। স্বচ্ছ ও সুষ্ঠু ভূরাজনীতির জ্ঞান অর্জনের মাধ্যমে দেশের অর্থনৈতিক উন্নতি লাভ করা সম্ভব। ভূরাজনীতির জ্ঞান কাজে লাগাতে পারলেই রাষ্ট্রের প্রভাব বহির্বিশ্বে বৃদ্ধি পায় এবং সকল রাষ্ট্রের নিকট গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে।
অর্থনৈতিক নীতি নির্ধারণে ভূরাজনীতির ভূমিকা :
নিম্নে অর্থনৈতিক নীতিনির্ধারণে ভূরাজনৈতিক ভূমিকা সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো :
১. উৎপাদনের ক্ষেত্রে : কোনো দেশে কি উৎপাদন করবে তা সেই দেশের ভৌগোলিক অবস্থান ও প্রাকৃতিক অবস্থাই নির্ধারণ করে দেয়। ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে জানা যায় যে একটি রাষ্ট্র তার পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্র থেকে কি কি কাঁচামাল সবরাহ করতে পারবে বা তার আমদানি রপ্তানি কেমন হবে। ভূরাজনীতির জ্ঞান সেক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
২. বাজার সৃষ্টি : যে রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ সম্পদ যতবেশি সেই রাষ্ট্র তত সমৃদ্ধ। বিশ্বের কোনো রাষ্ট্রের স্বয়ংম্পূর্ণ নয়। তাই এক রাষ্ট্রের সাথে অন্য রাষ্ট্রের যোগাযোগ ও আদান প্রদান করার মাধ্যমেই চলতে হয়। কোনো রাষ্ট্রে যে সম্পদের পরিমাণ বেশি তার উপর ভিত্তি করে তাকে বাজার সৃষ্টি করতে হবে সেই পণ্যের জন্য। বাজার সৃষ্টি না করতে পারলে সেই সম্পদের কাঁচামাল কোনো কাজে আসবে না। সেই কারণের ঐসব রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক নীতিনির্ধারণে ভূরাজনীতির ভূমিকা থাকে।
৩. আন্তর্জাতিক বাণিজ্য : ভূরাজনীতি একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে কাজ করে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে। সব রাষ্ট্রই চায় কম ব্যয়ে তার পাশের রাষ্ট্র থেকে আমদানি রপ্তানি করতে। এর ফলে ঐসব রাষ্ট্রের চাহিদা অনুযায়ী অন্য রাষ্ট্র তাদের কাঁচামাল সরবরাহ করে। এক্ষেত্রে ভূরাজনীতি অন্যতম ফ্যাক্টর হিসেবে কাজ করে।
৪. যোগাযোগের ক্ষেত্রে : যোগাযোগ ব্যবস্থা অর্থনীতির উপর প্রভাব ফেলে। সেসব রাষ্ট্রের যোগাযোগ ব্যবস্থা তার প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সাথে ভালো তাদের মধ্যে দ্রুত ব্যবস্থা বাণিজ্য। প্রসার লাভ করে। অনেক সময় সড়ক পথের সুন্দর যোগাযোগ পণ্যের আমদানি রপ্তানির খরচ কমিয়ে দেয়। অপরদিকে ভৌগোলিকভাবে দূরে অবস্থিত রাষ্ট্রসমূহের সাথে ব্যবসা বাণিজ্যের খরচ বেশি হয়। কিন্তু সমুদ্র তীরবর্তী রাষ্ট্রগুলো আবার জাহাজের মাধ্যমে ভালো যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলে যা ভূরাজনীতির পাঠে জানা যায়।
৫. পণ্যের মান : প্রকৃতিক সম্পদের উপর অনেক সময় পণ্যের মান নির্ভর করে। কারণ সব পণ্য একদেশে একমাত্রায় ভালোভাবে উৎপাদন হয় না। ফলে যে দেশের পণ্য ভালো সে দেশ থেকে পণ্য আমদানি রপ্তানির ক্ষেত্রে অন্যন্য দেশসমূহ তাদের আগ্রহ প্রকাশ করে ।
উপসংহার : পরিশেষে আমরা বলতে 'পরি যে, একটি দেশের অর্থনীতিক নীতিনির্ধারণে ভূরাজনীতি বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করে। কারণ ভূরাজনীতি অধ্যয়নের মাধ্যমে আমরা রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক উৎসবে অনুসন্ধান করতে পারি। এর মাধ্যম কোনো কোনো পণ্য আমদানি রপ্তানি করলে দেশের অর্থনীতি দ্রুত চাঙ্গা হবে তার সম্পর্কে ধারণা লাভ করতে পারি। আন্তর্জাতিক বাজারে দেশের পণ্য রপ্তানির করার জন্য বাজার সৃষ্টির ক্ষেত্রে ভূরাজনীতির জ্ঞান থাকা আবশ্যক ।