বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্র ও কাল্পনিক সমাজতন্ত্রের মধ্যে পার্থক্য আলোচনা কর।
প্রিয় পাঠক, আজকে আমরা এই অনুচ্ছেদের মাধ্যমে যে সকল প্রশ্নের উত্তর জানবো সেই প্রশ্নগুলো চলুন দেখে নেই, কাল্পনিক সমাজতন্ত্র ও বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রের মধ্যে পার্থক্য কি? বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্র ও কাল্পনিক সমাজতন্ত্রের মধ্যে পার্থক্য কি? কাল্পনিক সমাজতন্ত্র ও বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রের মধ্যে পার্থক্য আলোচনা কর। কাল্পনিক সমাজতন্ত্র ও বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রের পার্থক্যগুলো কী কী?
অষ্টাদশ শতাব্দীতে বৈজ্ঞানিক ও কাল্পনিক নামে দুটি মূল ধারা প্রবর্তিত হয়েছিল সমাজতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায়। কাল্পনিক সমাজতন্ত্র কোনো ধরনের বৈজ্ঞানিক ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত হয়নি। কিন্তু বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্র দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদের উপর প্রতিষ্ঠিত। কাল্পনিক সমাজতন্ত্রে দার্শনিকগণ ধর্মের চেতনার সাথে সমাজতান্ত্রিক ধারণা বিনির্মাণ করেছেন। ফলে বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্র ও কাল্পনিক সমাজতন্ত্রের মধ্যে পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়।
কাল্পনিক ও বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রের পার্থক্য নিচে এ সম্পর্কে আলোচনা করা হলো :
প্রথমত, বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রীরা দেশের শ্রমিকের প্রতি বেশি গুরুত্বারোপ করলেও কাল্পনিক সমাজতন্ত্রীগণ মালিক ও শ্রমিক অর্থাৎ উচ্চবিত্ত ও নিম্নবিত্তের সুসম্পর্কের কথা বলেছেন। মালিক ও শ্রমিক ঐক্যের ফলেই সমাজে শাস্তি আনয়ন সম্ভব অন্যদিকে বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্র বুর্জোয়া শ্রেণির উৎখাত করে সর্বহারা একনায়কত্ব প্রতিষ্ঠার কথা বলেছেন।
দ্বিতীয়ত, কাল্পনিক সমাজতন্ত্রীগণ সমাজের শাস্তি রক্ষার্থে বৈষম্য লক্ষ্য করলেও শুধু সেগুলোর মূলোৎপাদন ছাড়াই সমাজে শাস্তি রক্ষার্থে বৈষম্য লক্ষ্য করলেও শুধু সেগুলোর মূলোৎপাটন ছাড়াই সমাজে শান্তির কথা বলেছেন। কাল্পনিক সমাজতন্ত্রীগণ ছিলেন শান্তিবাদী, অহিংস ও অবিপ্লবী। তারা সহজে আলাপ ও আলোচনায় শান্তি আনয়নে চেষ্টা করতেন। অন্যদিকে বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রীগণ সমাজের শ্রেণিসংগ্রামের কথা বলেছেন। সমাজে বৈষম্য দূর করতে বিপ্লব সৃষ্টিতে সচেষ্ট।
তৃতীয়ত, বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রীগণ মার্কস এঙ্গেলসহ অন্যান্য সমাজতন্ত্রীদের সময়ে সমাজের পরিবর্তনের মাধ্যমে সমাজতন্ত্রের প্রণয়নে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ ছিলেন। এক্ষেত্রে সর্বহারা শ্রেণি | ও বুর্জোয়া শ্রেণির সংঘাত অনিবার্য করে তুলেছেন। কাল্পনিক সমাজতান্ত্রিকগণ সে সময়ের সমাজব্যবস্থা যথাযথভাবে উপলব্ধি করতে সক্ষম হয়নি। তারা শুধু সমাজ পরিবর্তনের আশায় ছিল। তবে কোন প্রকার চেষ্টা করেনি।
চতুর্থত, বৈজ্ঞানিক সমাজতান্ত্রিকগণ দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদী মতবাদে প্রতিষ্ঠিত। এ ব্যাপারে কার্ল মার্কস এঙ্গেলসও সে সময়ের অনুসারীরা প্রস্তাব পেশ করেছেন অন্যদিকে কাল্পনিক সমাজতন্ত্রীরা তাদের চিন্তাকে কোন দৃঢ় ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠা করতে পারেনি। তারা কেবল নতুন সমাজব্যবস্থা গঠনের কথা | বলেছেন বাস্তবে রূপ দিতে সক্ষম হননি। এ ব্যাপারে কোন সুনির্দিষ্ট মতামত দেননি।
পঞ্চমত, কাল্পনিক সমাজতন্ত্রে ব্যক্তি চরিত্র গড়ার জন্য পারিপার্শ্বিক ব্যাপারে গুরুত্ব প্রদান করেছেন।তারা চিন্তা করে যে, চরিত্র গঠনের ক্ষেত্রে আশেপাশের পরিবেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা বহন করে। তবে বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রে মৌলিক প্রশিক্ষণের মধ্যেই চরিত্র গঠন করা সম্ভব বলে মনে করে।
ষষ্ঠত, বৈজ্ঞানিক ও কাল্পনিক উভয় সমাজতন্ত্রই রাষ্ট্র সম্পর্কে দৃষ্টিভঙ্গি আলাদা। কাল্পনিক সমাজতন্ত্রে সমাজের কোন বৈষম্যমূলক ব্যবস্থাকে চিহ্নিত করে তাঁর বিলুপ্ত বা মূলোৎপাটন করতে চাননি বা করতে অক্ষম হয়েছেন। রাষ্ট্রকে মানব কল্যাণের হাতিয়ার মনে করেছেন। অন্যদিকে, বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রীগণ রাষ্ট্রকে সম্পূর্ণ রূপেই শোষণের হাতিয়ার হিসেবে চিহ্নিত করেছেন এবং রাষ্ট্রের বিলুপ্তির কথাও বলেছেন।
সপ্তমত, ধর্মীয় ও নৈতিকতার দিক থেকে কাল্পনিক সমাজতন্ত্র ও বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্র সম্পূর্ণ আলাদা। বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্র ধর্ম, নৈতিকতা, সভ্যতা ও সংস্কৃতি সবকিছুকে অর্থনৈতিক ভিত্তির উপর বিবেচিত করেন। তারা ধর্মীয় চেতনায় . উদ্বুদ্ধ হয়ে সমাজে যেসব শোষণ ও বৈষম্য দূর করার কথা বলেছেন তা শুধু স্বপ্ন থেকে গেছে বাস্তবায়িত হয়নি। অন্যদিকে, কাল্পনিক সমাজতন্ত্রীগণ ধর্মের ব্যাপারে কোন নতুন মত প্রকাশ করেনি বা ধর্মকে রাজনীতি থেকে সরিয়ে নিতে পারে।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায় যে, বৈজ্ঞানিক ও কাল্পনিক সমাজতন্ত্রে বিরাট পার্থক্য বিরাজমান । তবুও এ দুটি সমাজব্যবস্থায় মানুষের কল্যাণের জন্যই সব উদ্দেশ্য হাসিল করা হয়েছে। সমাজের শোষণ বঞ্চনা দূর করার জন্যই এ শাসনব্যবস্থা বলেছে। সুতরাং উভয় ধরনের সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থায় বিরাট মিল রয়েছে যা উপেক্ষা করার উপায় নেই ।